একটি ছোট্ট শহর ছিল, যার নাম ছিল স্বপ্নপুরী। এই শহরের মানুষরা তাদের স্বপ্ন নিয়ে নানা ধরনের জিনিস তৈরি করত। কেউ রঙ দিয়ে ছবি আঁকত, কেউ গান লিখে সুর দিত, আবার কেউ মাটি দিয়ে মূর্তি বানাত। স্বপ্নপুরীর সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পী ছিল রিকি। সে কাঠ দিয়ে এমন সব খেলনা বানাত, যা দেখলে মনে হতো যেন সেগুলোতে প্রাণ আছে।
একদিন রিকি তার বাড়ির পেছনের বাগানে বসে একটি কাঠের ঘোড়া বানাচ্ছিল। সে ঘোড়ার গায়ে এমনভাবে নকশা করছিল, যেন প্রতিটি রেখায় একটি করে গল্প লেখা আছে। হঠাৎ তার সামনে একটি ছোট মেয়ে এসে দাঁড়াল। মেয়েটির পরনে ছিল একটি নীল ফ্রক এবং তার চোখে ছিল অপার বিস্ময়।
মেয়েটি রিকিকে বলল, "এই ঘোড়াটা কি আমার জন্য?"
রিকি হাসল এবং বলল, "না। এটা এখনো শেষ হয়নি।"
মেয়েটি একটু মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিল। রিকির মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে দৌড়ে গিয়ে মেয়েটির সামনে দাঁড়াল এবং বলল, "শোনো, আমি তোমার জন্য এর চেয়েও সুন্দর একটি ঘোড়া বানাবো। কিন্তু তার জন্য আমাকে একটি জিনিস দিতে হবে।"
মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, "কী দিতে হবে?"
রিকি বলল, "তোমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নটা। যদি তুমি আমাকে তোমার সেই স্বপ্নের কথা বলো, আমি ঠিক তেমন একটি ঘোড়া বানিয়ে দেব।"
মেয়েটি একটু ভাবল এবং বলল, "আমি কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছিলাম, একটি লাল রঙের ঘোড়া মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, আর তার পিঠে বসে আমি আর আমার পুতুল খেলতে খেলতে যাচ্ছি।"
রিকি মুগ্ধ হয়ে শুনল। সে রাতদিন পরিশ্রম করে একটি লাল রঙের কাঠের ঘোড়া বানাল। ঘোড়ার গায়ে এমনভাবে রঙ করল, যেন মনে হচ্ছে মেঘের টুকরোগুলো তার গায়ে লেগে আছে। পরের দিন সকালে সে সেই ঘোড়াটি নিয়ে মেয়েটির বাড়ির সামনে গেল।
মেয়েটি যখন ঘোড়াটি দেখল, তার চোখ দুটি আনন্দে ঝলমল করে উঠল। সে ঘোড়াটি ধরে রিকিকে ধন্যবাদ জানাল। রিকি মনে মনে খুব খুশি হলো। কারণ সে জানত, সে শুধু একটি খেলনাই বানায়নি, বরং একটি সুন্দর স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছে।
এরপর থেকে রিকি স্বপ্নপুরীর শিশুদের স্বপ্নের কথা শুনত এবং সেই স্বপ্ন অনুযায়ী তাদের জন্য খেলনা বানাত। আর এভাবেই স্বপ্নপুরীতে স্বপ্নের কারিগর হিসেবে রিকির নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল।
113
View