Posts

উপন্যাস

হাজার চুরির রাত

August 25, 2025

alamin hasan

317
View

"হাজার চুরির রাত"
শহরের এক কোণে পুরাতন এক বাড়ি, যার নাম ছিল 'নিশাচর ভবন'। দিনের আলো সেখানে প্রবেশ করত না বললেই চলে। লোকে বলত, বাড়িটার প্রতিটি ইঁট আর পাথরে লুকিয়ে আছে কোনো এক রহস্য। এলাকার মানুষজন এই বাড়ির ধারেকাছে ঘেঁষত না। তবে, এই বাড়ির রহস্য উন্মোচন করতে এসেছিল এক অদ্ভুত মানুষ, যার নাম ছিল নীল। নীল ছিল একজন প্রাক্তন গোয়েন্দা, যার প্রধান কাজ ছিল পুরোনো জিনিসপত্র, বিশেষ করে মূল্যবান মূর্তি এবং দুর্লভ চিত্রকর্মের খোঁজ করা।
নীল 'নিশাচর ভবন'-এ এসেছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রহস্যের সমাধানে: 'হাজার চুরির রাত' নামে পরিচিত একটি ঘটনার। বহু বছর আগে, এই বাড়িতে এক ভয়ংকর চুরি হয়েছিল। রাতারাতি প্রায় হাজার মূল্যবান জিনিসপত্র উধাও হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ কোনো সূত্র খুঁজে পায়নি, এবং ঘটনাটা অমীমাংসিত থেকে গিয়েছিল। এই রহস্যের সমাধানই ছিল নীলের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
নীল যখন প্রথম বাড়িতে ঢুকল, তখন সে অদ্ভুত এক গন্ধ পেল। গন্ধটা ছিল পুরোনো বই, ধুলো এবং রহস্যের এক মিশ্রণ। বাড়ির প্রতিটি ঘরে সে মনোযোগ দিয়ে খুঁজতে লাগল। দেয়ালের গায়ে আঁকা অদ্ভুত নকশাগুলো, পুরোনো আসবাবপত্র এবং প্রতিটি কোণে লুকিয়ে থাকা নীরবতা তাকে বারবার ভাবাচ্ছিল। সে বুঝতে পারছিল, চোর কোনো সাধারণ মানুষ ছিল না। এই চুরির পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র ছিল।
একটি পুরাতন লাইব্রেরি ঘরে নীল কিছু অদ্ভুত জিনিস খুঁজে পেল। একটি আলমারির পেছনের দেওয়ালে সে একটি ছোট গর্ত দেখতে পেল। গর্তের ভেতরে একটি ছোট ডায়েরি ছিল, যা 'নিশাচর ভবন'-এর প্রাক্তন মালিকের লেখা। ডায়েরিতে লেখা ছিল, "চুরি নয়, এক জাদু..."। এই বাক্যটা নীলের মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিল। চোর কি তাহলে একজন জাদুকর ছিল?
নীল বুঝতে পারল, চোর সাধারণ চোর ছিল না, বরং সে ছিল একজন অসাধারণ প্রতিভাবান জাদুকর। সেই জাদুকর জিনিসপত্র চুরি করত না, সে সেগুলোকে এক অদৃশ্য জায়গায় লুকিয়ে রাখত। 'হাজার চুরির রাত' আসলে এক জাদু প্রদর্শনী ছিল, যেখানে চোর তার জাদু দেখিয়েছিল।
এই নতুন তথ্য পেয়ে নীল তার অনুসন্ধানের পদ্ধতি বদলে ফেলল। সে এবার শুধু বস্তুর পেছনে নয়, বরং সেই জাদুকরের কৌশল বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। তার মনে হল, জাদু আসলে বিজ্ঞানেরই একটি উন্নত রূপ। সে সেই জাদুকরের তৈরি করা প্রতিটি রহস্যের জট খুলতে শুরু করল। প্রতিটি রহস্যের জট খোলার সাথে সাথে সে অনুভব করল, সেই জাদুকরের ক্ষমতা তার কল্পনার থেকেও অনেক বেশি।
অবশেষে, নীল সেই জাদুকরের আসল পরিচয় খুঁজে পেল। সে জানতে পারল, সেই জাদুকর আসলে 'নিশাচর ভবন'-এর প্রাক্তন মালিকের ছোট ভাই ছিল। সে তার ভাইকে অপছন্দ করত এবং তার মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছিল। সে জাদু ব্যবহার করে জিনিসপত্রগুলোকে এমনভাবে লুকিয়ে রেখেছিল, যেন কেউ সেগুলো খুঁজে না পায়।
নীল তার গোয়েন্দাগিরি ব্যবহার করে সেই জাদুকরের সব কৌশল উন্মোচন করল। সে বুঝতে পারল, যে জাদু দিয়ে সে হাজার জিনিস অদৃশ্য করেছিল, সেই একই জাদু দিয়ে সে সেগুলোকে ফিরিয়ে আনতে পারবে। নীল এক এক করে সেই সব জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনতে লাগল, যা এতদিন নিখোঁজ ছিল।
এই গল্পের শেষে, নীল উপলব্ধি করল যে, প্রতিটি চুরির পেছনে শুধু লোভ নয়, বরং মানুষের আবেগ, হতাশা এবং ক্ষোভও থাকতে পারে। সে শুধু জিনিসপত্রই ফিরিয়ে আনেনি, বরং একটি পরিবারের দীর্ঘদিনের রহস্যের সমাধানও করেছিল। 'নিশাচর ভবন' আর রহস্যময় থাকল না, বরং তা পরিণত হল এক জাদুঘরের মতো, যেখানে প্রতিটি জিনিস একটি করে গল্প বলে।
 

Comments

    Please login to post comment. Login