Posts

চিন্তা

নারী যখন মা

August 28, 2025

Chameli Akter

166
View

আমাদের সমাজে কিছু স্টেরিওটিপিক্যাল ধারণা আছে। যেমন বাচ্চা বড় হয়ে গেলে মায়েদের হাল্কা কালারের কাপড় পড়া উচিত, সাজা উচিত না। নানা ধরনের সামাজিক নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত।মায়েরা হাসবে না, মায়েরা নাচবে না, মায়েরা গাইবে না।

অবশ্য শুধু মা না মেয়েদের জন্যই নানা রকম বিধি নিষেধ আছে। কাজের বেলায়ও বিশেষ কিছু কাজ শুধু মাত্র পুরুষের কাজ হিসেবে সিল মেরে দেয়া হয়েছে। সেইসব কাজ মেয়েরা পারবেনা বলেই ধরে নেয়া হয় আর পারলেও ভালো চোখে দেখা হয় না।মনে করা হয় এই মেয়ে সমাজের জন্য হুমকি।

হুমকি বৈকি। মেয়েরা যদি সবই পেরে ফেলে তাহলে তাদেরকে অধীনস্ত করে রাখার প্রক্রিয়াটা জটিল হয়ে যাবে। তাই বেশী যোগ্য মেয়েকেই সবচেয়ে বেশী বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়।

আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ। আমার অনেক কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই সামর্থ্যের মধ্যে যা আছে তাই দিয়ে আমি এই স্টেরিওটাইপ ভাঙ্গার চেষ্টা করি।

আমার বয়স ৪২ এবং আমি যথাক্রমে ২১ এবং ১৭ বছর বয়সী দুই পুত্রের জননী। এই সমাজ আমাকেও ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে, তথাকথিত বস্তাপচা মাতৃত্বের নিয়ম নীতিতে বাঁধার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই ফাঁদে আমি পা দেইনি।

আমি নিজের সব দায়িত্ব কর্তব্যের পরও নিজের প্রতি কর্তব্য ভুলে যাই নি।

আমি আমার যত্ন নিয়েছি যে যত্নটুকু করতে কোন অর্থ ব্যয় হয়না, সময় ব্যয় হয় না, অন্য কাউকে বঞ্চিতও করতে হয়না শুধুমাত্র একটু নিয়ম মেনে চলতে হয়।

সেই নিয়মানুবর্তিতার কারনে আমি এখনো যে কোন কাজ একজন টিনেজারের চেয়েও বেশী এনার্জি এন্থুজিয়াজম দিয়ে করতে পারি।

আর কোন কাজ করার সময়ই আমি ভাবি না, এটা আমি পারব না। বরং এটাই ভাবি আমার আগে যদি পৃথিবীর একজন মানুষও ওই কাজটা পেরে থাকে তাহলে আমিও পারবো অবশ্যই পারবো।

সবচেয়ে বড় কথা, তথাকথিত স্টেটাস নষ্ট হবার ভয় বলে আমার কিছু নেই। আমেরিকা গিয়ে পিজা স্টোরে মাটি কাটা কামলার মত কাজ করেছি। আমার তাতে একটুও ছোট লাগেনি নিজেকে। বরং সপ্তাহ শেষে যখন আমার পারিশ্রমিকটা বুঝে পেতাম আনন্দে চোখে পানি আসতো।

এই যে গত পরশু টুপ করে উবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এটার কারন কখনোই টাকা ইঙ্কাম করা নয় বরং সামাজিক মর্যাদা নামক যে অদৃশ্য বলয় আছে আর মেয়েদের বা মায়েদের নিয়ে যে ভুল ধারণা আছে সেটা ভাঙ্গাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।

আর নিজের সাথেও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। নিজের গাড়ি ড্রাইভ করা আর উবার চালানো এক জিনিস না। প্রথম প্যাসেঞ্জার নেয়াটা ছিল একটা আইস ব্রেকিং এর মত। আরো একটা কাজে অহেতুক জড়তা কাটিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠা।

সেইফলি প্যাসেঞ্জারকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া ছিলো আরেকটা চ্যালেঞ্জ।

কারণ আমি যদি কোন ভুল ভাল করি সেটা বেশী হাইলাইটেড হবে। কারন আমি মেয়ে। যে ভুল একটা পুরুষ ড্রাইভার করলে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেয়া হবে সেটাই আমি করলে মেয়ে মানুষ এর অক্ষমতার মুখোরোচক গল্প হবে।

আর শেষ বিষয় হল, আমি হয়ত উবার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করব না। কিন্তু আমি নিজে জেনে রাখলাম কোনদিন প্রয়োজন হলে আমি এই কাজটাও করতে পারবো।

আমি নিজে যা পারিনা সেই বিষয়ে কখনো কাউকে উপদেশও দেইনা।

তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি,

বয়স বলে সত্যিই কিছু নেই।তাই কোন সংখ্যায় নিজেকে বেঁধে ফেলবেন না। আপনি যতদিন সচল ততদিনই যৌবন।

যতক্ষণ কোন কাজ অন্যায় বা অসৎ বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর না ততক্ষন সমাজ বা পৃথিবীর কাউকে ভয় পাবেন না।

নিয়ত যদি ভালো হয় স্বয়ং আল্লাহ পাশে থাকেন এটার প্রমাণ আমি পদে পদে পাই।

নিজের নারীত্ব বা মাতৃত্বকে দুর্বলতা ভাববেন না।আপনাকে সৃষ্টিকর্তা নিজের মধ্যে একজন মানুষ ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। আপনার শরীরেই তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন।তাকে শিশু থেকে মানুষ বানান আপনি।

ভেবে দেখেন আপনার চেয়ে বড় সম্মান এবং ক্ষমতা এই পৃথিবীতে উনি আর কাউকে দিয়েছেন কি না।

Womanhood itself is a privilege. Break the bias and be proud of your identity……….. ❤️

Comments

    Please login to post comment. Login