Posts

গল্প

হাসপাতাল

August 28, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

62
View

ঢাকার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটি অদ্ভুত হাসপাতাল—
নাম তার “সিটি মেডিকেল সেন্টার”। বাইরের দিক থেকে একেবারেই সাধারণ হাসপাতালের মতো দেখালেও ভিতরে ঢুকলেই বোঝা যায়, এখানে কোনো অস্বাভাবিক কিছু লুকিয়ে আছে।

দিনে এখানে সাধারণ চিকিৎসা চলে, রোগী আসে-যায়, ডাক্তারদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। কিন্তু রাত নামলেই শুরু হয় আতঙ্ক। হাসপাতালের আশেপাশে যারা থাকে, তারা সবাই বলে—
“রাতে ওই হাসপাতাল দিয়ে হেঁটে যেও না। কেবল রোগীর কান্না আর মৃতদেহের আর্তনাদ শোনা যায়।”

🕛 রাতের হাসপাতাল

রাত তখন বারোটা।
পুরো হাসপাতাল নিস্তব্ধ। কেবল দূরে কোথাও করিডরে টিউবলাইটের টুংটাং শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ডিউটি নার্স সুমি সিস্টার হঠাৎ শুনতে পেলেন, ৩য় তলার করিডরে কারো চাপা গলার কান্না।
তিনি অবাক হয়ে বললেন—
“এই রাত্তিরে কে আবার কাঁদছে?”

তিনি এগিয়ে গেলেন ধীরে ধীরে। করিডরের শেষে পৌঁছেই দেখলেন—একজন রোগী, সাদা চাদর ঢাকা, মাথা নিচু করে বসে আছে।
সুমি সিস্টার ডাকলেন—
“কে তুমি? এখানে বসে আছো কেন?”

লোকটি ধীরে মাথা তুলল।
তার চোখ লাল, ঠোঁট কেটে গেছে, শরীর জুড়ে শুকনো রক্তের দাগ।
আর সবচেয়ে ভয়ংকর—তার গলার একপাশ ফেটে গেছে, যেন মাত্রই কেউ অপারেশন করেছে।

সুমি সিস্টার দৌড়ে নিচে নামতে গেলেন। কিন্তু…
সিঁড়ির ধাপগুলো হঠাৎ যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি নিচে নামার চেষ্টা করলেন, কিন্তু প্রতিটি ধাপ তাকে আবার একই জায়গায় ফিরিয়ে আনল।
তিনি আটকে গেলেন ওই করিডরে।

 মেডিকেল ছাত্র ইমরান

পরের দিন খবর পেল ইমরান, একজন মেডিকেল ছাত্র। সে শুনল রাতে এক নার্স নিখোঁজ হয়ে গেছে।
তাকে কেউ আর খুঁজে পাচ্ছে না।

ইমরান ভেবেছিল—“এমন কিছু হতে পারে না। ভূত-টুত সব গুজব।”
কৌতূহল থেকে রাতে সে নিজেই হাসপাতালে গেল।

প্রথমে কিছুই হলো না। করিডরে হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ অপারেশন থিয়েটারের দরজায় এসে দাঁড়াল।
দরজাটা অদ্ভুতভাবে নিজে থেকেই খুলে গেল।
ভেতরে ঢুকেই সে গা শিউরে উঠল।

ঘরের এক কোণে টেবিলের ওপর এক মৃতদেহ পড়ে আছে।
মৃতদেহের শরীর সেলাই করা, কিন্তু পেটের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
আর মৃতদেহের ঠোঁট কাঁপছে…
“পানি… দাও…”

ইমরান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মৃতদেহ কি কথা বলছে?

 করিডরের আতঙ্ক

হঠাৎ বাতি নিভে গেল। পুরো ঘর অন্ধকার।
কেবল লাল লাইট জ্বলে উঠল—যেন হাসপাতালের মধ্যে অগ্নি সংকেত বাজছে।
সেই লাল আলোয় ইমরান দেখল—অপারেশন থিয়েটারের দেয়ালে সারি সারি মৃতদেহ ঝুলছে, সাদা চাদরে ঢাকা।
তাদের মুখ ঢাকা, কিন্তু পায়ের পাতায় শিকল বাঁধা।
প্রতিটি মৃতদেহ আস্তে আস্তে কেঁপে উঠছে, যেন বেঁচে আছে।

ইমরান দৌড়ে বেরিয়ে এল। করিডরে এসে দেখে—
আগে যেখানে রোগীর বেড ছিল, সেখানে এখন রক্তে ভেজা লাশ।
আর লাশগুলোর চোখ হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

 হাসপাতালের রহস্য

হাসপাতালটির ইতিহাস জানতে ইমরান লাইব্রেরিতে পুরনো নথি খুঁজতে লাগল।
সে জানতে পারল—
এই হাসপাতাল আসলে আগে ছিল একটি মানসিক হাসপাতাল
এখানে ডাক্তার ড. কাবির ছিলেন, যিনি রোগীদের ওপর ভয়ংকর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন।
জীবন বাঁচানোর নামে রোগীদের শরীর কেটে ফেলা, অদ্ভুত অপারেশন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করে রাখা—এসব ছিল তার নেশা।
এক রাতে বিদ্রোহ হয়। রোগীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে ডাক্তারকে মেরে ফেলে।
কিন্তু সেই রাতেই পুরো হাসপাতাল আগুনে পুড়ে যায়।
এরপর সরকার সেটিকে নতুন নামে চালু করে—“সিটি মেডিকেল সেন্টার”।

কিন্তু যারা মারা গিয়েছিল, তাদের আত্মা আজও এখানেই বন্দি।

 ভয়ঙ্কর রাতের সমাপ্তি

ইমরান দ্বিতীয় রাতে আবার গেল।
সে ভাবল, সব রহস্য ফাঁস করবে। কিন্তু এবার অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে সে দেখল—
একটি চেয়ার, তাতে বাঁধা এক নার্স (সম্ভবত নিখোঁজ সুমি সিস্টার)।
তার গলা কেটে রক্ত ঝরছে, কিন্তু মুখে এক অদ্ভুত হাসি।
সে বলল—
“তুমি এসেছো? ড. কাবির তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

পেছন থেকে ঠাণ্ডা হাত ইমরানের কাঁধে পড়ল।
সে ঘুরে দেখল—এক বৃদ্ধ ডাক্তার, হাতে মরিচা ধরা অস্ত্রোপচারের ছুরি, ঠোঁটে শুকনো রক্ত।
ড. কাবির।

ইমরান চিৎকার করতে গেল, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বের হলো না।
তারপর চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।

সকালে হাসপাতালের লোকেরা দেখে—৩য় তলার অপারেশন থিয়েটারে নতুন একটি মৃতদেহ পড়ে আছে।
দেহটা ইমরানের।
তার চোখ খোলা, মুখ হা করে চিৎকারের মতো।
আর দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা—
“পরের জন কে?”

Comments

    Please login to post comment. Login