পোস্টস

কবিতা

মাধবীলতা

১ জুন ২০২৪

ইউসুফ আহমেদ শুভ্র

এক মধ্য রাতের কথা
তখন আমি সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত 
উড়ুক্কু মন,ঘুরে বেড়ায় দুনিয়ার পথেঘাটে 
ঘুরতে ঘুরতে একদিন হাজির হলাম মাধবীলতার ঘরে

মাধবীলতা যে আমার বন্ধু ছিলো
আবার শত্রুও ছিলো বটে

আমরা স্কুল থেকে ফিরে এক সাথে গল্প করতাম
দুনিয়ার সব গল্প যেনো
আবার যখন স্কুলের রেজাল্ট হতো
তখন তো মাধবী আমার ভীষণ শত্রু

সে ক্লাসের প্রথম ছাত্রী আর আমি ব্যাক বেঞ্চার!

তারপর আমরা মাধ্যমিকে পাশ করে গেলাম
সে তখন গ্রামের কলেজেই আর আমি এই শহরে

আহ, যাদুর শহর
মায়ার শহর

এই শহর আমায় আটকে দেয়
গ্রামে যেতে চাইলেও এই শহর আমায় আটকে দেয় 
ব্যস্ততায় কিংবা অযুহাতে

মাঝেমধ্যে বুকের ভেতর কেমন যেনো করে
মাঝেমধ্যে মায়ের জন্য মন খারাপ লাগে
মাঝেমধ্যে মাধবীলতার কথা মনে পরে

তারপর আবার ছুট ছুট ছুট
ছুটতে ছুটতে আমি ভুলে যাই আপনজনদের কথা

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমি গ্রামে ফিরে যাই
মায়ের সে কী কান্না
কতো দিন পর বাপে আমার ফিরা আইছে

খবর শুনে দৌড়ে আসে মাধবীলতা 
আমিও ভীষণ খুশি হই মাধবীকে দেখে
কতো কথা বলতে ইচ্ছে করে
কিন্তু বলতে পারি না
কোথায় যেনো আটকে গেছি

মাধবী আমায় জিজ্ঞাস করে- কেমন আছিস?
- ভালো, তুই?
- আগামী মাসে আমার বিয়ে।

তারপর আর আমাদের কথা আগায় না
আমি চোখ তুলে তাকাতে পারি না মাধবীলতার দিকে
আমরা বসে থাকি চুপচাপ 
মনে মনে কতো কথা যে হয়
কতো ঝগড়া যে চলে আর চলে মান অভিমান 
অথচ আমরা পাশাপাশি বসে থাকি অন্ততকাল ধরে!

মাধবীলতার বিয়েতে আমার যেতে ইচ্ছে করে না
আমি কংক্রিটের শহরে নিজেকে বন্দি করি
মনের ভেতর কেমন যেনো এক হাহাকার 
কেমন যেনো এক শুন্যতা
কেমন যেনো এক জগদ্দল পাথর জমা
অথচ আমি তো মাধবীলতাকে ভালোবাসি নি কখনো!

তারপর অনেক দিনের পরে
আমি আমার গ্রামে ফিরে আসি
দূর গ্রামে তখিন মাধবীলতার বসবাস!

সে মধ্যরাতে আমি চলে যাই মাধবীলতার ঘরে
সে আমায় জড়িয়ে ধরে প্রবল আবেগে
আমার কথা জড়িয়ে যায়,চোখ বন্ধ হয়ে আসে আবেশে
আমি অস্ফুট স্বরে বলি- মাধবীলতা, আমি তোকে ভালোবাসি!

মাধবীলতার স্বামী তখন দূর সমুদ্রে মাছ ধরে!
আমি মাধবীর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি!

মেয়েটা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে!