গ্রামের নাম কাশিপুর। গ্রামের মাঝখানে একটি ছোট্ট পুকুর, চারপাশে শ্যামল সবুজ মাঠ। সেই গ্রামে থাকত রুহুল নামে এক কিশোর। বয়স তেরো-চৌদ্দ হবে। খুব দুষ্টু ছেলে হলেও তার একটি বিশেষ দিক ছিল—পশু-পাখির প্রতি অদ্ভুত মায়া।
রুহুলের বাড়ির আঙিনায় একটি ছাগল, কয়েকটি মুরগি আর একটি কুকুর ছিল। কুকুরটির নাম ছিল “কালু”। কালু যেন রুহুলের ছায়া। সকালে স্কুলে গেলে পেছনে পেছনে যায়, আবার স্কুল থেকে ফিরলেই রুহুলকে দেখে লেজ নাড়িয়ে খুশি হয়।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রুহুল দেখতে পেল, মাঠের ধারে একটি ছোট শিয়াল শিকারিদের ফাঁদে আটকা পড়েছে। তার শরীরে রক্ত, চোখে আতঙ্ক। আশেপাশে অনেকেই দাঁড়িয়ে মজা করে দেখছে, কেউ কেউ আবার পাথর ছুঁড়ে মারছে। রুহুলের মন কেমন করে উঠল। সে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“তোমরা কেন কষ্ট দিচ্ছ? ও তো বেচে থাকার জন্যই পালিয়ে বেড়ায়।”
লোকেরা হাসাহাসি করে বলল,
—“শিয়াল তো ক্ষতিকর, মুরগি চুরি করে। এদের মায়া করার দরকার নেই।”
কিন্তু রুহুল কারও কথা শোনার ছেলে নয়। সে হাত দিয়ে ফাঁদটা আলগা করতে লাগল। শিয়ালটি ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলেও রুহুল ধৈর্য ধরে তাকে ছাড়িয়ে আনল। তারপর পুকুরের পানিতে ধুয়ে মাটি দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করল। কিছুটা খাবার জোগাড় করে দিল।
সন্ধ্যার দিকে কালু আর রুহুল মিলে শিয়ালটিকে নিরাপদে জঙ্গলের দিকে ছেড়ে দিল। শিয়ালটি একবার কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
এই ঘটনার পর রুহুলকে অনেকেই বকাঝকা করল। মা-ও রাগ করে বললেন,
—“এইসব বন্য জন্তু সামলাতে গেলে বিপদ হবে। তুমি পড়াশোনা করো, এ সব ঝামেলায় যেয়ো না।”
রুহুল চুপচাপ মাথা নিচু করে রইল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে জানত, কোনো অসহায় প্রাণীর কষ্ট সে দেখতে পারে না।
কয়েক মাস পরের ঘটনা। গ্রামে ভয়াবহ ঝড়-বন্যা হলো। অনেক ঘরবাড়ি ভেসে গেল, গবাদি পশু মারা গেল। সেই সময় রুহুলই গ্রামের শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলল একটি ছোট্ট দল। তারা ভেসে আসা বাচ্চা ছাগল, বাচ্চা মুরগি, আহত কুকুর-বিড়াল তুলে নিয়ে গিয়ে যত্ন নিতে লাগল। নিজের খাবার থেকেও ভাগ করে দিল।
গ্রামের মানুষ এবার রুহুলের কাজ দেখে অবাক হলো। তারা বুঝল, যে ছেলে শিয়ালের জন্য কাঁদতে পারে, সে-ই আবার বিপদের দিনে গ্রামের অর্ধেক পশুপাখি বাঁচাতে পারে। সবাই ধীরে ধীরে তাকে সম্মান করতে শুরু করল।
ঝড় থেমে যাওয়ার পর মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন,
প্রভুর সৃষ্টি-ই তাঁর রহমতের প্রতীক। পশু-পাখির প্রতি মমত্ববোধও ইমানের অংশ।”
রুহ