অধ্যায় – ৩
হাসিব মোবাইল হাতে বসে আছে। পর্দায় ভেসে উঠছে সেই নাম্বারটা—যে নাম্বার দিয়ে শুরু হয়েছিল তার জীবনের নতুন এক গল্প। প্রতিদিনই কথা হয়, তবুও আজকের দিনটা আলাদা মনে হচ্ছে।
— "হ্যালো?"
ওপাশ থেকে মেয়েটির কণ্ঠ ভেসে আসে। নরম, টানটান উত্তেজনায় ভরা।
— "আজ... দেখা করবে?" হাসিব সরাসরি বলে ফেলে।
— "এভাবে হঠাৎ?" মেয়েটির গলায় দ্বিধা।
— "হ্যাঁ। আর দেরি করতে চাই না। এতদিন ধরে শুধু কথা... এবার সামনাসামনি না হলে চিরকাল অচেনা থেকে যাব আমরা।"
একটু নীরবতা। তারপর নিঃশ্বাস ফেলে সে বলে—
— "ঠিক আছে। কিন্তু একটা শর্ত আছে।"
— "কী শর্ত?"
— "আজ তুমি আমাকে শুধু শুনবে, কোনো প্রশ্ন করবে না।"
হাসিব হেসে ওঠে।
— "প্রমিজ।"
সন্ধ্যার পর শহরের পুরোনো পার্কে দেখা করার ঠিক হয়। ঝাঁপসা আলো, চারদিকে কোলাহল মিলিয়ে যাওয়া মানুষের ভিড়। বেঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হাসিব, বুকের ভেতর অচেনা কাঁপুনি।
কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি আসে। সাদা সালোয়ারে, হালকা নীল ওড়নায় মুখ আড়াল করা। কাছে আসতেই হাসিবের মনে হলো—এতদিনের অচেনা কণ্ঠস্বরের সাথে এই মেয়েটির চোখদুটো যেন মিলেমিশে গেছে।
— "তুমি?" হাসিবের ঠোঁট শুকিয়ে যায়।
মেয়েটি মৃদু হাসে।
— "হ্যাঁ, আমি-ই। পাঁচ টাকার নোটে লেখা যে ‘ভালোবাসি’—তার অপর প্রান্তের মানুষ আমি।"
দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ থাকে। হঠাৎ মেয়েটি ওড়না টেনে নামিয়ে বলে—
— "আমার নাম মায়া। আমি চাই না তুমি আমাকে স্বপ্ন মনে করো। আমি বাস্তব। তবে বাস্তবের গল্পগুলো সবসময় সুখের হয় না।"
হাসিব তাকিয়ে থাকে তার চোখের গভীরে।
— "আমি দুঃখ চাই না, আমি চাই শুধু তুমি থাকো।"
মায়া আস্তে আস্তে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
— "আজ শুধু এটাই মনে রেখো, হাসিব... যেদিন তুমি সত্য জানবে, সেদিন হয়তো আমাকে আর চাইবে না।"
হাসিব তার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে।
— "মায়া, আমি শুধু চাই তুমি আমার জীবনে থেকো—সত্য যেমনই হোক।"
কিন্তু মায়ার চোখে তখন অদ্ভুত রহস্যের ঝিলিক—যেন কোনো অজানা ঝড় আসন্ন।