বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাম তার শালবাগান। গ্রামটাকে দূর থেকে দেখলেই মনে হয় যেন সবুজ শাড়ি পরে আছে পৃথিবী। চারপাশে ধানক্ষেত, কলাবাগান আর সরু কাঁচা রাস্তা।
সেই গ্রামেই থাকে এক কিশোরী মেয়ে—লাবনী। লাবনী পড়াশোনা করতে চায়, কিন্তু গ্রামের সবাই ভাবে, মেয়েদের লেখাপড়ার দরকার নেই। তাদের কথা,
“মেয়েদের তো একদিন বিয়ে হয়ে যাবে, এত পড়াশোনা শিখে কি হবে?”
কিন্তু লাবনী অন্যরকম। স্কুল থেকে ফেরার পরও সে কলাবাগানের নিচে বসে কাগজে লিখে রাখে নিজের স্বপ্ন—
“আমি শিক্ষক হবো, গ্রামের মেয়েদের পড়াবো।”
লাবনীর সেরা বন্ধু রাকিব। ওর হাতে সবসময় একটা বাঁশের বাঁশি থাকে। যখন লাবনী কাঁদে, রাকিব বাঁশিতে বাজায় এমন সুর, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যেন গ্রামটাও তার সাথে কথা বলছে।
একদিন স্কুলে নতুন শিক্ষক এলেন—শফিক স্যার। তিনি লাবনীর খাতা দেখে থমকে গেলেন। মাটির ঘরের মেয়ে হয়েও লাবনী কী সুন্দর করে নিজের স্বপ্ন লিখেছে! সেদিনই স্যার প্রতিজ্ঞা করলেন, লাবনীকে তিনি পড়াবেন।
কিন্তু গ্রামে শুরু হলো কানাঘুষা—
“মেয়েমানুষ এত রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করছে, এটা কি মানায়?”
লাবনী ভয় পায়নি। একদিন রাতে কলাবাগানের নিচে বসে রাকিবকে বলল,
“তুই বাঁশি বাজা, আমি লিখি। একদিন এই লেখাগুলো আমাদের গ্রামের গল্প হবে।”
বছর কেটে গেল। লাবনী পড়াশোনা শেষ করে সত্যিই শিক্ষক হলো। সেই গ্রামে প্রথমবারের মতো মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল হলো। আর রাকিব? সে এখনও কলাবাগানের নিচে বসে বাঁশি বাজায়, কিন্তু এখন সেই সুর ভেসে যায় স্কুলের আঙিনায়—যেখানে ছোট ছোট মেয়েরা বই হাতে দৌড়ায়।
গ্রামের মানুষ আজও বলে—
“ওই কলাবাগানের শেষ আলোয়, এক মেয়ে তার স্বপ্ন বুনেছিল, আর এক ছেলেটি বাঁশিতে বাজিয়েছিল সেই স্বপ্নের সুর।”