Posts

গল্প

নীরব প্রতিভা"

August 29, 2025

Mithila

49
View

রফিক স্যার ছিলেন শহরের একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষক। তার পড়ানোর ধরণ ছিল অনন্য—তিনি শুধু বই পড়াতেন না, জীবনের পাঠও দিতেন। ছাত্রদের চোখে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ, যিনি প্রতিটি ক্লাসে নতুন করে ভাবতে শেখাতেন। তার ক্লাসে বসে থাকা মানেই ছিল জ্ঞান, অনুপ্রেরণা, আর ভালোবাসার ছোঁয়া।
তার ছাত্ররা শুধু পরীক্ষায় ভালো করত না, তারা মানুষ হয়ে উঠত। অভিভাবকরাও তাকে শ্রদ্ধা করতেন, কারণ তারা জানতেন—রফিক স্যারের হাতে তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদকিন্তু একই স্কুলে ছিলেন জামাল স্যার—একজন সিনিয়র শিক্ষক, যিনি নিজেকে সবসময় সবার উপরে ভাবতেন। তিনি রফিক স্যারের জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারতেন না। তার মনে জন্ম নেয় ঈর্ষা, আর সেই ঈর্ষা একদিন রূপ নেয় প্রতিহিংসায়।
কটি স্কুল সভায়, যেখানে শিক্ষকরা একত্রিত হয়েছিলেন নতুন শিক্ষানীতির আলোচনায়, জামাল স্যার হঠাৎ রফিক স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “রফিক ছাত্রদের পক্ষপাতিত্ব করেন, নিজের মতবাদ চাপিয়ে দেন, এবং স্কুলের নিয়ম ভঙ্গ করেন।” পুরো হল নিঃশব্দ হয়ে যায়। রফিক স্যার কিছু বলেন না। তার চোখে ছিল বিস্ময়, কিন্তু মুখে ছিল নীরবতা।
পরদিন স্কুলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু শিক্ষক সন্দেহ করে, কিছু ছাত্র কাঁদে, আর অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। রফিক স্যার তখনও চুপচাপ ক্লাস নেন, ছাত্রদের আগের মতোই ভালোবাসেন। তিনি বিশ্বাস করতেন—সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই।
তদন্তে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য। জামাল স্যার ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন, কারণ তিনি নিজেই একাধিকবার ছাত্রদের প্রতি দুর্ব্যবহার করেছেন, এবং নিজের ভুল ঢাকতে চেয়েছেন রফিক স্যারের জনপ্রিয়তাকে কলঙ্কিত করে।স্কুল কর্তৃপক্ষ জামাল স্যারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, এবং রফিক স্যারকে প্রকাশ্যে সম্মান জানানো হয়। ছাত্ররা ফুল নিয়ে আসে, অভিভাবকরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, আর শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে হাততালি দেন।
ফিক স্যার সেই দিন বলেছিলেন, “শিক্ষা শুধু পাঠ্যবই নয়, এটা চরিত্র গঠনের মাধ্যম। আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি জানতাম—সত্যের কণ্ঠ কখনো চাপা পড়ে না।”
তার সেই কথাগুলো আজও স্কুলের দেয়ালে লেখা আছে, আর তার ছাত্ররা আজ বিভিন্ন জায়গায় সফল মানুষ হয়ে সেই নীরব প্রতিভার গল্প বলে যায়।

 

Comments

    Please login to post comment. Login