Posts

গল্প

কঙ্কাল কান্ড

August 30, 2025

Chameli Akter

148
View

৯০ দশকের শেষের দিকে, কলেজে পড়ার সময় মাথায় ঢুকল কঙ্কালের ব্যবসা করব

নটরডেমের কাছেই ছিল ইত্তেফাকের মোড়... মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টসের আড়ত বলা যায় এই জায়গাটা

সেখানে মাঝে মাঝে আড্ডা দিতাম... দেখতাম মেডিক্যালে কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্র ছাত্রীরা আসত কঙ্কাল কিনতে

কলেজে পড়া অবস্থাতেই ২ বন্ধু কিছু টাকা জমিয়ে নেমে পড়লাম ব্যবসায়

বন্ধু মার্কেট রিসার্চ করে জানালো, “নটরডেমের অর্ধেক ছাত্র মেডিক্যালে ভর্তি হবে... এরা সব আমাদের বন্ধু বান্ধব... আমরা তো কঙ্কালের বুকিং নিতে নিতে টায়ার্ড হয়ে যাব...ব্যাপারটা তুই এভাবে আগে ভাবসস?”

শুরু করলাম ব্যবসা

কঠিন মার্কেটিং প্ল্যান... আমরা কঙ্কালের হোম ডেলিভারি দেই

গুলশানের মেডিক্যাল ছাত্রের কষ্ট করে মতিঝিল আসা লাগবে কেন? আমাদের ফোন দেন আমরা বাসায় যেয়ে দিয়ে আসব

বিজনেসের পে-অফ লাইন ঠিক করলাম, you desire… we deliver

বানাতে বসলাম লিফলেট

বন্ধু বলল, ‘লিফলেটে এই কথাটা লেখা উচিত যে আমরা ভালো ফ্যামিলির কঙ্কাল ডিলেভারি দেই... চোর ছেচ্ছরের না’

“ভালো ফ্যামিলির মানে?”

‘মানে জীবিত অবস্থায় যেমন মানুষের সৈয়দ বংশ বা, চৌধুরী বংশ টাইপ বংশ পরিচয় থাকে...তেমনি শিওর কঙ্কালের একটা জাত আছে... নাকি?’

“থাকা তো উচিত...”

‘না থাকলে নাই... কেউ তো আর কঙ্কালকে জিগাইবো না ভাই আপনার বংশ কি... আমরা যা বলব, মার্কেট তাই খাবে... তুই লেখ এটা লিফলেটে’

... লিফলেট রেডি, একটা হাসি হাসি মুখের কঙ্কাল হাগ দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে... মানে সে আপনার বাসায় আসতে চায়

৬ নম্বর বাসে করে বনানী এসে লিফলেট লাগালাম ওয়ালে ওয়ালে

বিশাল উত্তেজনা

প্রথম ফোন পেলাম লিফলেট লাগানোর ৩ ঘন্টার মধ্যে

শ্যামলিতে কঙ্কাল ডেলিভারি করতে হবে

বিশাল উত্তেজনা

আমরা গেলাম ইত্তেফাকের মোড়ে কম দামে কঙ্কাল কিনতে

টাকা দেয়ার পর দোকানদার আমাদের একটা বস্তা ধরিয়ে দিল... ‘এই নেন’

“কঙ্কাল কই?”

‘এটার ভিতরে’

উঁকি দিয়ে দেখি সব হাড্ডিগুড্ডী আলাদা

“ভাই এটা সেট করে দেন”

পাশ থেকে বন্ধু আমাকে কানে কানে বলল, ‘এই সেট করা কঙ্কাল নিয়ে আমরা যাব কেমনে? মোটর সাইকেলের মাঝে বসায়ে? দেখতেও তো অড লাগে... এর থেকে ভালো না সেটিং টা আমরা শিখে নেই... ডেলিভারি দিয়ে ক্লায়েন্টে বলব সেটিং এর আলাদা পয়সা... সে তো আর এখন বস্তা নিয়ে ইত্তেফাকের মোড়ে এসে সেটিং করিয়ে যাবে না... আমাদেরকে দিয়েই করাবে... সো এখানেও হিডেন প্রফিট আছে’

আমরা ২ জন উপুত হয়ে সেটিং শিখলাম

বাপরে বাপ একটা বডির হাড্ডী হলো ২০৬ টা... সেটিং শিখতে লাগলো আড়াই ঘন্টা

২ বন্ধু কঙ্কালের বস্তাটা আমের ঝুড়ির ভিতরে নিয়ে বাসে উঠলাম

বাসে আসতে আসতে ফিসফিস করে অনেক জোক করলাম... “দোস্ত মনে কর যেয়ে যদি দেখি ভুলে মাথার খুলি আনি নাই?... হিহি... তখন কেমনে কাভার দিবি?”

‘তোরে বন্দক রেখে আমি মতিঝিল এসে খুলি হেন্ডওভার করে তোরে ছুটায়ে নিয়ে যাব, চিন্তা করিস না... হিহি’

বাসের কন্ডাক্টারকে ভাড়া দেয়ার সময় বন্ধু গুতা দিয়ে বলল, “তুই তো আর কঙ্কাল কোলে নিয়ে বসতি না, শিওর সিটে বসাইতি...দেখ সেটিং শিখে ফেলার কারণে একজনের বাস ভাড়া বাঁচায়ে ফেলসি”

...অনেক হাসি তামাশা করলাম

শ্যামলী সিনেমা হলের ওখানে নেমে, আমরা ঝুড়ি কোলে নিয়ে বাসা খুঁজছি

আমি টায়ার্ড হয়ে গেলে, সে ঝুড়ি নেয়... সে টায়ার্ড হলে আমি নেই ...পার্টনার বলে কথা

একটু পরে বন্ধু বলে, ‘বস্তার ভিতরে কি জানি নড়ে’

আমি ভাবলাম জোক করছে

একটু পরে বস্তা আমি কোলে নিয়ে দেখি, আসলেই কি জানি খটর মটর করে

বন্ধু বলল, ‘তুই ঝুড়ি নিয়ে এখানে দাঁড়ায় দোয়া ইউনুস পড়... আমি একটু সামনে হেঁটে বাসার ঠিকানা মিলাই’

আমি ভেবেছিলাম সে ভেগে যাবে... কিন্তু সে যে গতিতে গেলো, তার দ্বিগুণ গতিতে ফিরে এসে জানালো, “সামনে পুলিশের চেক পোস্ট”

আমি বললাম ‘তো?’

“লাশের হাড্ডি গুড্ডি বস্তায় লয়ে দাঁড়ায়ে আসস এখন জিগাস ‘তো’?”

‘ডেথ সার্টিফিকেট আছে না?’

“আরে ভোদাই কঙ্কালের ডেথ সার্টিফিকেট কই পাইবি?”

‘লিফলেটে যে লেখলাম”

“রাখ থুয়ে তোর লিফলেট... আমি ভাগতেসি... তুই আসলে আয়...বিড়বিড় করস কেন? এই মুহূর্তের সিচুয়েশান দোয়া ইউনুসের রেঞ্জের বাইরে... তুই আসবি নাকি আমি একাই দৌড় দিবো?”

সেদিনের ঘটনা এই পর্যন্তই

তার ১ দিন পর ক্লাসে সে আমাকে ফিসফিস করে বলছে, “আজকের ইনকিলাব পত্রিকা পড়সস? শ্যামলির রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি কঙ্কাল পাওয়া গেছে... ঝুড়ি এবং তদন্তের দায়িত্ব দুইটাই সিএইডির হাতে দেয়া হয়েছে... বিড়বিড় করস কেন? তুই কি বুঝতাসস না এই মুহূর্তের সিচুয়েশান দোয়া ইউনুসের রেঞ্জের বাইরে”

Comments

    Please login to post comment. Login