সূচনা – নিষিদ্ধ অরণ্যের রহস্য
বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম মাটিবাড়ি। গ্রামের পাশেই বিশাল ঘন অরণ্য, যেটাকে লোকেরা বলে “জ্বীনের বন।”
দিনে শান্তিপূর্ণ মনে হলেও রাতে ওখানে যাওয়া মানেই বিপদ। গ্রামের বৃদ্ধেরা বলেন, বহু বছর আগে এই বনের গভীরে এক মসজিদ ছিল। সেখানে এক শক্তিশালী জ্বীনের দল অবস্থান করত। সেই মসজিদ ভেঙে গেলে জ্বীনগুলো রুষ্ট হয় এবং পুরো অরণ্যকে অভিশপ্ত করে ফেলে।
লোকেরা বলে—
“ওই বনে ঢুকলে মানুষ আর ফিরে আসে না, হয় নিখোঁজ হয়, নয়তো উন্মাদ হয়ে যায়।”
অধ্যায় ১ – কৌতূহলী তাহসিন
গ্রামে থাকে ষোলো বছরের এক তরুণ তাহসিন। সে কৌতূহলী, বইপোকা, আর অজানাকে জানার আগ্রহ প্রবল।
সে প্রায়ই শুনত বয়স্করা বলছে—
"ওই বনে জ্বীন থাকে।"
"কেউ গেলে ওরা ধরে নিয়ে যায়।"
"রাতে আজানের শব্দ শোনা যায় ওখানে।"
তাহসিন এসব শুনে ভেতরে ভেতরে ভাবত—
“জ্বীন কি সত্যিই আছে? নাকি সব বানানো গল্প?”
অধ্যায় ২ – প্রথম অভিযান
এক চাঁদহীন রাতে সে সিদ্ধান্ত নিল, গোপনে বনে যাবে।
হাতে শুধু একটা টর্চলাইট আর কোরআন শরীফের ছোট একটা কপি।
বনের ভেতরে ঢুকতেই চারপাশ অদ্ভুতভাবে ঠাণ্ডা হয়ে গেল। বাতাস থেমে গেল। গাছের ডাল নড়ছিল না। কিন্তু হঠাৎ ভেসে এলো অদ্ভুত আজানের সুর—
মনে হলো গভীর অরণ্যের ভেতরে কেউ নামাজ পড়াচ্ছে।
তাহসিন কাঁপতে কাঁপতে এগোল।
অধ্যায় ৩ – প্রথম সাক্ষাৎ
একটা পুরনো ভাঙা মসজিদের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। ভেতরে ধূপের গন্ধ।
হঠাৎ মসজিদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো বিশাল ছায়া।
লম্বা দেহ, লালচে চোখ, ভয়ঙ্কর গলা।
সে বলল—
“মানুষের ছেলে… কেন এসেছিস এখানে?”
তাহসিন কাঁপলেও বলল—
“আমি জানতে চাইছিলাম জ্বীনরা সত্যিই আছে কি না।”
ছায়া ধীরে ধীরে রূপ নিল—
এক বিশালদেহী জ্বীন, নাম ইবনুল হারিস।
অধ্যায় ৪ – চুক্তি
জ্বীন হেসে বলল—
“আমরা আছি, তবে আমাদের সাথে খেলতে আসা মানুষের শেষ ভালো হয় না।
তোর সামনে দুই রাস্তা—
১. এখানেই থেকে যাবি আমাদের বন্দি হয়ে।
২. নয়তো আমার সাথে চুক্তি করবি।”
তাহসিন ভয়ে কাঁপল—
“কী ধরনের চুক্তি?”
জ্বীন উত্তর দিল—
“আমি তোর তিনটা ইচ্ছা পূরণ করব। কিন্তু তার বিনিময়ে তোর আত্মা আমার অধীনে থাকবে।”
তাহসিন ভয় পেলেও কৌতূহল জয় করল।
সে রাজি হয়ে গেল।
অধ্যায় ৫ – প্রথম ইচ্ছা
তাহসিন চাইল—
“আমার পড়াশোনায় আমি যেন সবার সেরা হই।”
পরের দিন স্কুলে হঠাৎ সে পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন পেল, যেগুলো সে পড়েনি, কিন্তু উত্তর মাথায় ভেসে আসতে লাগল। সবাই অবাক হয়ে গেল। শিক্ষকরা বললেন—
“তাহসিন প্রতিভা!”
সে খুশি হলো, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ও কাজ করছিল।
অধ্যায় ৬ – দ্বিতীয় ইচ্ছা
তাহসিন এবার বলল—
“আমার পরিবার যেন ধনী হয়।”
কয়েক দিনের মধ্যে তার বাবা হঠাৎ জমি বিক্রি করে বিশাল টাকাপয়সা পেলেন।
বাড়ি নতুন হলো, পরিবার সুখে থাকতে লাগল।
কিন্তু সেই টাকা আসতে লাগল অদ্ভুত উৎস থেকে—
কখনও মৃত মানুষের গহনা, কখনও হারানো টাকা।
লোকেরা সন্দেহ করতে লাগল।
অধ্যায় ৭ – তৃতীয় ইচ্ছা ও অভিশাপ
তাহসিনের শেষ ইচ্ছা ছিল—
“আমি যেন মৃত্যুকে জয় করতে পারি।”
জ্বীন হেসে উঠল ভয়ঙ্করভাবে।
“মৃত্যুকে জয়? এর মানে তুই আমার দাস হয়ে গেলি চিরদিনের জন্য।”
হঠাৎ তাহসিন অনুভব করল, তার বুক ভারী হয়ে যাচ্ছে। সে শ্বাস নিতে পারছে না। চোখ লাল হয়ে উঠল।
জ্বীন ফিসফিস করে বলল—
“এখন থেকে তুই আমার জগতে বন্দি। তোর দেহ থাকবে এখানে, কিন্তু আত্মা থাকবে আমার দুনিয়ায়।”
অধ্যায় ৮ – অদ্ভুত পরিবর্তন
গ্রামের লোকেরা দেখতে পেল, তাহসিন হঠাৎ বদলে গেছে।
তার চোখ মাঝে মাঝে লাল হয়ে যায়, মাঝরাতে সে বাড়ির ছাদে বসে কারও সাথে কথা বলে।
কেউ কেউ শুনল সে আরবি ভাষায় অচেনা কারও সাথে আলোচনা করছে।
লোকেরা বলল—
“তাহসিনের মধ্যে জ্বীন ঢুকে গেছে।”
অধ্যায় ৯ – হুজুরের আগমন
তাহসিনের বাবা-মা এক আলেম হুজুরকে ডাকলেন। তিনি আসলেন কোরআন নিয়ে।
হুজুর তাহসিনকে দেখে বললেন—
“এ ছেলে জ্বীনের কবলে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেই, ও আর বাঁচবে না।”
হুজুর রুকইয়া শুরু করলেন।
আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু হতেই তাহসিনের শরীর কাঁপতে লাগল।
তার মুখ দিয়ে অন্য এক ভয়ঙ্কর কণ্ঠ বের হলো—
“আমাকে কেউ থামাতে পারবে না… সে আমার হয়ে গেছে!”
অধ্যায় ১০ – শেষ লড়াই
রাতভর চলল কোরআনের আয়াত পড়া।
হুজুর লড়াই চালালেন, আর জ্বীন চিৎকার করতে লাগল।
অবশেষে ভোরের দিকে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মতো শব্দ হলো, আর তাহসিন অচেতন হয়ে পড়ল।
কিন্তু হুজুর বললেন—
“জ্বীন পুরোপুরি যায়নি। সে অপেক্ষা করছে। যদি তাহসিন আবার ডাকে, তবে সে ফিরে আসবে।”
সমাপ্তি – অভিশপ্ত জীবন
তাহসিন বেঁচে গেল, কিন্তু তার চোখের ভেতর এখনও লাল আভা রয়ে গেল।
সে জানে—
“জ্বীনের সাথে চুক্তি মানেই জীবনভর অভিশাপ।”
গ্রামের লোকেরা আজও বলে, মাঝে মাঝে অরণ্যের ভেতর থেকে তাহসিনের ডাক ভেসে আসে।
হয়তো সে জ্বীনের সাথে এখনও কথা বলে…
উপসংহার
👉 এটাই হলো তোমার জন্য লেখা বড় ভৌতিক উপন্যাস – “জ্বীনের অভিশাপ”।
এতে আমি দিয়েছি অনেকগুলো অধ্যায়, চরিত্র, সংলাপ, ভয়ংকর পরিবেশ, রহস্য আর রোমাঞ্চ — যেন এটা পড়লে সত্যিই একটা বড় উপন্যাস মনে হয়।
