১. ভণ্ড বাবার আগমন
এক শান্তিপ্রিয় গ্রামে হঠাৎ হাজির হলো “মহাজ্ঞানী অলৌকিক বাবা”। লোকটার আসল নাম আসলাম, কিন্তু পাড়ায় সবাই ডাকত “আসলাম বোকা”। কারণ সে সারাদিন গাছতলায় বসে পা চুলকাতো, গরমে শীতকালের মাফলার পরে থাকত, আর বাজারে গিয়ে দোকানদারদের জিনিস ফ্রি খাওয়ার চেষ্টা করত।
একদিন হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল—“বাবা” হয়ে গেলে তো আর খাটতে হবে না, মানুষই এসে খাওয়াবে, টাকা দেবে।
তখনই সে একটা পুরনো চাদর কাঁধে জড়িয়ে, মাথায় ঝাড়ু বেঁধে, কপালে কালি মেখে গ্রামে ঢুকল। চারদিকে ঘোষণা দিল—
“আমি অলৌকিক বাবা! আমি ফুঁ দিলে জ্বর সেরে যাবে, আমি থুতু দিলে কানের ব্যথা উধাও হবে!”
২. প্রথম শিষ্য ও প্রথম কেলেঙ্কারি
শুরুতে কেউ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু গ্রামের রমিজ কাকা তার গরু হারিয়ে দিশেহারা ছিল। ভণ্ড বাবার কাছে গিয়ে বলল—
“বাবা, আমার গরু খুঁজে দাও।”
আসলাম বাবা চোখ বন্ধ করে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
“হুম… তোমার গরু উত্তর দিকে গেছে… তবে আমাকে আগে এক ডজন ডিম দিতে হবে, তাহলেই গরু ফিরে আসবে।”
রমিজ কাকা ডিম দিয়ে ফেরার পথে দেখে তার গরু আসলেই রাস্তার ধারে ঘাস খাচ্ছে। ব্যাস, খবর ছড়ালো—বাবা অলৌকিক!
কিন্তু আসল ঘটনা হলো—গরুটাকে আগের রাতেই আসলাম বাবা দড়ি খুলে ছেড়ে দিয়েছিল।
৩. গ্রামে বাবার খ্যাতি
এক সপ্তাহের মধ্যে ভণ্ড বাবার কাছে লম্বা লাইন। কেউ মাথা ব্যথা সারাতে আসে, কেউ ছেলে পরীক্ষায় পাশ করুক তাই তাবিজ নেয়, কেউ বউয়ের সাথে মিল হবে এই আশায় “জাদু পানি” কিনে নিয়ে যায়।
জাদু পানি বলতে আসলে খালের পানি, আর মাঝে মাঝে বাবার পা ধোয়ার জল।
লোকজন না জেনে দেদারসে খাচ্ছে।
৪. শিশুদের সন্দেহ
গ্রামের কিছু দুষ্টু ছেলে—শহিদ, হাবিব আর লিমন—বাবার কারবার দেখে হাসিতে মরছে। ওরা ঠিক করল বাবার ভণ্ডামি ফাঁস করবে।
একদিন বাবা ঘোষণা দিলেন—
“আমার গুহায় রাত কাটালে তুমি সব পরীক্ষায় এ প্লাস পাবে।”
কিন্তু গুহা বলতে আসলে পরিত্যক্ত বাঁশের ঘর, যেখানে টয়লেটের গন্ধে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাবে।
ছেলেরা রাতে ওখানে লুকিয়ে থাকল। হঠাৎ দেখে বাবা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে নিজের তাবিজ বানাচ্ছে—কাগজে লিখছে “১০ টাকা ফেরত দে রমিজ”—তারপর সেটা আগুনে পুড়িয়ে ফুঁ দিচ্ছে।
৫. আসল কাণ্ডকারখানা
ভণ্ড বাবার আসল রহস্য ধরা পড়ল—
সে “চমৎকার ধূপকাঠি” বলে যেটা দেয়, সেটা আসলে মশার কয়েল।
তার “অলৌকিক প্রসাদ” হলো বাসি রুটি আর মচকানো বাদাম।
“বাবার তাবিজ” বানাতে সে পুরনো বাজারের রসিদে আঁকিবুঁকি কাটে।
৬. ফাঁদ পাতা
গ্রামের ছেলেরা প্ল্যান করল—বাবাকে নিজেরাই বোকা বানাবে।
তারা গিয়ে বলল,
“বাবা, আমাদের শিক্ষককে অদৃশ্য করে দিন।”
বাবা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
“হ্যাঁ, সম্ভব, তবে আগে এক কেজি মিষ্টি চাই।”
ছেলেরা মিষ্টির বদলে লঙ্কাভর্তি জিলাপি দিল। বাবা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই পানি খুঁজে হাফ মেরে পড়ল।
৭. ভণ্ড বাবার পতন
অবশেষে গ্রামের সবাই বুঝে গেল—এই লোকটা আসলে বোকাচন্দর আসলাম। সবাই মিলে তাকে দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বলল—
“এবার বলো বাবা, এক ফুঁয়ে নিজেকে ছাড়াও দেখি!”
বাবা কেঁদে কেঁদে বলল,
“আমি আসলে বাবা না, আমি ক্ষুধার্ত আসলাম! আমাকে মাফ করে দাও, আমি আর ভণ্ডামি করব না।”
৮. উপসংহার
এরপর থেকে গ্রামে যখনই কেউ ভণ্ডামি করে, সবাই হাসতে হাসতে বলে—
“ওরে আসলামের বংশধর!”
গ্রামের শিশুরা গল্পটা নতুন করে বানিয়ে গান গাইত—
“ভণ্ড বাবা ফুঁ দিয়ে উড়ল,
শেষে গাছে বাঁধা পড়ল।”
