সেদিন সন্ধ্যার পর গিয়েছিলাম একজন পুষ্টিবিদের কাছে, যাকে বলে ডায়েটিশিয়ানের কাছে।
চেম্বারের সামনে লেখা 'আপনি যা খান, আপনি তাই।' দেখে খুব ভালো লাগলো। মনে হলো, সঠিক জায়গাতেই এসেছি। ফিস্ টা অন্তত পানিতে যাবে না।
একটু পর, ওনার সহকর্মী ওজন নিলেন। ওজন কাঁটায় কাঁটায় ১২০ কেজি। নাহ্, এর একটা বিহিত করতেই হবে, মনে মনে নিজেকে বললাম।
আরো আধা ঘন্টা পর, ওনার সামনে বসে .....
নিজেকে মনে হচ্ছিল একজন আসামী!
উনি আমাকে বেশ অনেকক্ষণ করুণার চোখে দেখলেন। বুজতেই পারলাম ওনার চাহনিতে।
-- কেন এসেছেন?
- জ্বি, খাওয়া না কমিয়ে কিভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবো, তা জানতে।
বলতে যা দেরি। উনি শুরু করলেন একটা ফর্ম নিয়ে ..... ক্যালোরি নিয়ে আমার সঙ্গে খেলা।
-- প্রথমেই ভোরবেলা। বলুন, সকালে কি কি খান ?
- জ্বি, প্রথমে দুধ-চিনি দিয়ে চা, আর বিস্কুট। মাঝে মাঝে রং চা।
-- দুধে মিল্কোজ, চিনিতে সুক্রোজ, বিস্কুটে গ্লুকোজ । হররোজ এসব দিয়ে আপনি দিন শুরু করেন?
এগুলো বাদ দিতে হবে।
- চা-বিস্কুট বাদ?
-- না না, সব বাদ দেবেন কেন? দুধ, চিনি, চা, আর ঐ বিস্কুট বাদে বাকি সব পান করবেন ।
- তাহলে বাকী কি রইল? কিছুই তো থাকলো না।
-- কেনো? বেশ জোরে বললেন উনি। গরম পানিতে গ্রীণ টি দিয়ে খেতে না করেছি? ওটা খাবেন। গ্রীণ টি শরীরের জন্য খুব ভালো।
- ঠিক আছে।
-- এরপর ব্রেকফাস্টে কি খান ? সবকিছু মিস করলেও ব্রেকফাস্ট মিস করা যাবে না।
- মাখন দিয়ে ব্রেডটোস্ট, আর পোচড্ এগ। কিংবা চিকেন-নুডুলস্, আর না হয় ডিম ভাজা-পরোটা খাই।
-- পাগল? ব্রেডে সোডিয়াম, আর সুগার। মাখনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সকাল বেলাতেই এতো কার্ব, প্রোটিন, আর তেল? প্রশ্নই আসে না এগুলোর।
- তাহলে জাপানীজ স্টাইলে রামেন??
-- এতেও হবে না।
- তাহলে রুটি-বেগুণভাজা?
-- রক্তে বেশি কোলেস্টেরল যাবে। এও চলবে না।
- সাদা রুটি আর আলুর দম?
-- কি বলেন? সে তো 'কার্বো' কারখানা।
-- তাহলে আপনিই বলুন।
-- ভুট্টা খান। তবে ওটার দুধ খাবেন না - ডিটারজেন্ট থাকে। লিভার শেষ হয়ে যাবে। ফলের জুস খাবেন। কিন্তু তাই বা বলি কি করে? কার্বাইড দেয়। পেস্টিসাইডস্ ভর্তি।
-- আচ্ছা, বাদ দিন। এবার লাঞ্চ। দুপুরে কি খান?
- ডাল-ভাত-মাছ-মাংস সবই খাই। এই যখন যা পাই, আর কি।
-- খবরদার। দুপুরে ভাত খাওয়া যাবে না - হাই ক্যালোরি। ডাল বেশী খেলে ইউরিক অ্যাসিড, আর ক্রিয়েটিনিন বাড়বে। সবজিতে বিষাক্ত সব পেস্টিসাইডস্ আর রং । মাছে ফর্মালিন। মাংসে কোলেস্টেরল। চিকেনে ভিটামিন ইঞ্জেকশন। মশলায় রং। প্রসেসড খাবারে তো খালি সোডিয়াম। তাই ভাবছি কি খেতে বলব ।
- যাঃ বাবা!! সবই তো বাদ। তাহলে খাবো কি? বাতাস খেয়ে তো আর থাকা যায় না।
-- ঢাকা শহরের পলিউশন সম্বন্ধে কোনও ধারনা আছে আপনার?
- জ্বি না। বলেই রাগ করে ফিস্ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
বেরিয়েই দেখি পাশে বিরিয়ানির দোকান। পেট এমনিতেই খালি, খিদেয় কাতর, মন শোকে পাথর। শরীর খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছিল, দীর্ঘদিন কিছু খাইনি। শেষে একটু এদিক সেদিক ঘুরে, নাকে গন্ধ শুঁকে সাহস করে "যা হবে হোক" বলে ঢুকে পড়লাম। কর্ণার টেবিলে বসে প্রথমেই বোরহানি আর ফুল প্লেট মাটন কাচ্চির অর্ডার দিলাম। মন ভরলো না দেখে আরো হাফ প্লেট কাচ্চি খেলাম। তারপর দুই বাটি ফিরনি আর একটি মিষ্টি দই খেলাম। শেষে মিষ্টি পান। ততক্ষণে পেট, আর মনের জ্বালা জুড়োল। মনের শান্তিও ফিরে এলো। এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছি।
বিল পেমেন্ট করতে যাব, দেখি উল্টোপাশের টেবিলে বসে বসে খাসির হাড় চিবোতে ব্যস্ত সেই ডায়েটিশিয়ান ...... !!!
আজকাল লোক চেনা সত্যিই খুব কঠিন।