Posts

গল্প

হীরক রাজ্য এবং হারানো রাজকন্যা

August 31, 2025

alamin hasan

79
View

অনেক অনেক কাল আগে, বরফে ঢাকা পাহাড়ের চূড়ায় ছিল এক ঝলমলে রাজ্য, যার নাম ছিল হীরক রাজ্য। রাজ্যের প্রতিটি ঘর, রাস্তা, এমনকি গাছের পাতাও হীরার মতো ঝকঝক করত। এই রাজ্যের রাজা ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু, এবং তার একমাত্র মেয়ে, রাজকন্যা আরোহী, ছিল রাজ্যের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তার চুল ছিল চাঁদের আলোর মতো আর হাসি ছিল ফুলের পাপড়ির মতো নরম।

​কিন্তু এক অমাবস্যার রাতে, এক দুষ্টু জাদুকর এসে রাজকন্যাকে জাদু করে লুকিয়ে ফেলল এক ঘুমন্ত পাহাড়ের গহ্বরে। জাদুকর রাজার কাছে শর্ত দিল, যদি তিনি রাজ্যের সব হীরক তার হাতে তুলে দেন, তবেই সে রাজকন্যাকে ফিরিয়ে দেবে। রাজা তার রাজকন্যাকে খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু রাজ্যের মানুষের মুখের হাসি কেড়ে নিতে পারলেন না।

​রাজ্যের সকল মানুষ দুঃখিত ও হতাশ হয়ে পড়ল। ঠিক তখনই রাজ্যের এক সাধারণ কৃষক ছেলে, আর্মান, এগিয়ে এল। আর্মান ছিল খুব সাহসী আর তার মন ছিল আকাশের মতো উদার। সে রাজকন্যাকে খুঁজে আনার প্রতিজ্ঞা করল।

​আর্মান তার যাত্রা শুরু করল এক পুরোনো মানচিত্র নিয়ে, যা তার দাদুর কাছে ছিল। মানচিত্রটি তাকে পথ দেখাল ঘুমন্ত পাহাড়ের দিকে। পথ ছিল খুবই দুর্গম। প্রথমে তাকে পার হতে হলো এক বিশাল অন্ধকার বন, যেখানে গাছে গাছে থাকত কথা বলা পাখিরা। পাখিরা তাকে সাবধান করল, "সামনে বিপদ, ফিরে যাও!" কিন্তু আর্মান তাদের কথা না শুনে সামনে এগিয়ে চলল।

​এরপর তাকে পার হতে হলো এক উত্তাল নদী, যার জল ছিল আগুনের মতো গরম। নদী পার হতে গিয়ে আর্মান দেখল এক ছোট্ট মাছ নদীর পাড়ে ছটফট করছে। মাছটিকে দেখে তার মায়া হলো। সে মাছটিকে কোলে নিয়ে ঠাণ্ডা জলে রাখল। মাছটি ছিল আসলে এক জলপরী, যে তাকে সাহায্য করার জন্য অপেক্ষা করছিল। জলপরী খুশি হয়ে আর্মানের নৌকাকে নদীর মাঝে নিয়ে গেল এবং তাকে নিরাপদে অপর পাড়ে পৌঁছে দিল।

​অবশেষে আর্মান পৌঁছাল সেই ঘুমন্ত পাহাড়ের কাছে। পাহাড়ের মুখে ছিল এক প্রাচীন রহস্যময় ধাঁধা। ধাঁধাটির উত্তর না দিলে পাহাড়ের প্রবেশদ্বার খুলবে না। আর্মান অনেক ভেবে ধাঁধার উত্তর খুঁজে বের করল। সে দেখল, ধাঁধাটি ছিল ভালোবাসার শক্তিময়তা নিয়ে। আর্মান মনে মনে বলল, "ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় জাদু।" সাথে সাথে পাহাড়ের দরজা খুলে গেল।

​ভিতরে আর্মান দেখল, রাজকন্যা আরোহী এক কাঁচের বাক্সে ঘুমিয়ে আছে। তার চারপাশে ঘিরে আছে কালচে জাদুর জাল। আরোহীকে মুক্ত করার জন্য আর্মান সেই জাদুকরের মুখোমুখি হলো। জাদুকর হাসতে হাসতে বলল, "তুমি সাধারণ এক মানুষ, আমার জাদুর সাথে কী করে লড়বে?"

​কিন্তু আর্মান ভয় পেল না। সে তার ভালোবাসার শক্তি দিয়ে জাদুটি ভাঙার চেষ্টা করল। সে রাজকন্যাকে ডাকল, "আরোহী, ফিরে এসো! তোমার রাজ্য, তোমার মানুষ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!" আর্মানের ভালোবাসার ডাকে জাদুর জালগুলো আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করল। অবশেষে, জাদুর জাল পুরোপুরি ভেঙে গেল আর আরোহী জেগে উঠল।

​জাদুকর তার জাদু হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ল এবং একরাশ ধোঁয়ায় মিশে গেল। রাজকন্যাকে নিয়ে আর্মান ফিরে এল হীরক রাজ্যে। রাজ্যের মানুষ আনন্দে আরমানে জয় জয়কার করল। রাজা তার মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি হলেন এবং আর্মানকে রাজকীয় সম্মানে ভূষিত করলেন।

​আর্মান কোনো পুরস্কার চায়নি। সে শুধু চেয়েছিল রাজকন্যার মুখের হাসি ফিরিয়ে দিতে। আরোহীও বুঝতে পারল আর্মানের ভালোবাসা কোনো জাদুর চেয়ে কম কিছু নয়। অবশেষে, রাজকন্যা আরোহী আর্মানকে বিয়ে করল এবং তারা সুখে শান্তিতে বাকি জীবন কাটাল। হীরক রাজ্য আরও উজ্জ্বল আর সুন্দর হয়ে উঠল, কারণ তারা জেনেছিল, সত্যিকারের সৌন্দর্য হীরার মধ্যে নয়, বরং ভালোবাসার মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

Comments

    Please login to post comment. Login