আমার ছোট মেয়েটাকে পর পর তিন পিছ মুরগির মাং*স দেওয়ায় আমার মা বলে উঠলেন,
"এটা তুমি কি করলা? ওকে এত গুলো মাং*স দিয়ে দিলা যে, রাফিন এসে কি খাবে?"
আমি আম্মার দিকে না তাকিয়েই উত্তর করলাম, "রাফিন এর জন্য ও তিন পিছ মাং*স তুলে রেখেছি। ও আসলে খাবে। তুমি চিন্তা করো না।"
আম্মা যেনো আরো তেঁতে উঠলেন। "রাফিন এর জন্য তিন পিছ রেখেছো মানে? ছেলে মানুষ। বাইরে যায়। কত পড়াশোনার চাপ। কত কিছু করে। মাত্র তিন পিছ দিয়ে ওর হবে? তোমার মেয়ের জন্য যতটুকু রেখেছো ছেলের জন্যে ও অতটাই রাখলে কিভাবে? কই দেখি রাফিন এর তরকারির বাটি টা আমাকে দাও। আমার ভাগের মাং*স টা ওর জন্য তুলে রাখি।"
আমি লক্ষ্য করলাম আমার ছোট মেয়ে জেনিফার চোখে পানি। সে ভাত খাচ্ছে না। প্লেট এ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। জেনিফা কে দেখে আমার নিজের ছেলে বেলা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমরা তিন ভাই বোন ছিলাম। আমি সবার ছোটো। ভাইয়া সবার বড় আর তারপরে আপু। আমি তখন সবে মাত্র নাইন এ ভর্তি হয়েছি। ভাইয়া একটা পার্ট টাইম চাকরি করে পাশাপাশি ভার্সিটি তে পড়াশোনা করছে। আর আপু মাত্র ইন্টার শেষ করে টিউশান পড়াচ্ছে। অতএব দুইজনেই ইনকাম করে। সে তুলনায় আমি নাইন এ পড়া স্টুডেন্ট মাত্র। বিশ টাকাও নিজে কামাই করার সামর্থ্য নেই। এখন অনেকের মনে হতে পারে মাত্র নাইন এ পরা ছাত্রীর টাকার কি প্রয়োজন। আর ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ তো মা বাবা চালাবেন সেটাই স্বাভাবিক। আমিও সেটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু বিপত্তি ঘটান আমার নানী আর খালা। নানীর ভূমিকাই বেশি ছিল। তিনি আম্মার কান ভাঙ্গাতেন এসব বলে যে "তুমি যখন বাসায় থাকো না তখন তোমার ছোট মেয়ে অনেক কিছুই একা বানিয়ে খেয়ে ফেলে। বাহির থেকে খাবার কিনে একাই খায়। অথচ তোমার বড়ো দুইটা ছেলে মেয়ে কত কষ্ট করে ওদের জন্য একটু রাখেও না।"
এখানে উল্লেখ্য আম্মা একটি মাধ্যমিক স্কুল এর শিক্ষিকা ছিলেন। তাই বেশিরভাগ সময় বাসার বাহিরেই থাকতেন। আসলে আমি কোনো রকমের শাক সব্জি খেতে পারতাম না। অনেক চেষ্টা করেও আমি সেসব খেতে পারিনি। ছোটো মাছ আমার দুর্গ%*ন্ধ লাগতো। এই কারণে আমি ডিম ভেজে ভাত খেয়ে ফেলতাম। তবে এটাও আমার নানির সহ্য হতো না। তার মতে গোটা গোটা সব ডিম আমি একাই শাবার করে ফেলি। এবং এই নিয়ে প্রায়ই বাবা কিংবা মা মজার ছলে আমাকে কথা শুনাতেন। আমি ডিম খাওয়া ছেড়ে দেই। মুরগি আমার অনেক প্রিয় ছিল। প্রচুর খেতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু কখনোই ভালো পিছ গুলো আমার জন্য বরাদ্দ ছিল না। সর্বোচ্চ দুই পিছ মাং*স। একটা সলিড আর একটা পা%*খনা। কষ্ট পেলেও স্বীকার করতাম না। আমি পড়াশোনা করতাম। স্কুল এর পড়া, হোম টাস্ক, কোচিং এর পড়া সব করার পর একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। তবুও যেকোনো কাজে আমার দুই ভাই বোন আমাকে খাটিয়ে নিতো। কারণ তাদের কথা অনুযায়ী আমরা কাজ করি, বাইরে যাই। আমরা অনেক ক্লান্ত থাকি। আমি চিন্তা করতাম আমিও তো পরিশ্রম করি। তবে তার আপাতত কোনো বাজারমূল্য নেই দেখে হয়তো সেটা কারো নজরে পড়ে না। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমার খাওয়া দাওয়া কারোই সহ্য হচ্ছেনা। এবার আমি বিকল্প খুঁজে নিলাম আলু ভাঁজা। এটা দিয়েই ভাত খেতাম। তবে সেখানেও আমার নানী প্রচুর তেল খরচ করি এমন কথা জুড়ে দিলেন। মা কিছু বলতেন না। কিন্তু যখন সুযোগ পেতেন তখন এসব নিয়েই আমাকে খো%*টা দিতেন। নানী প্রায় বলতেন তুমি ও তো পারলে দুই একটা টিউশন করাতে পারো। আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম। কিভাবে করাবো? কে দেবে আমাকে? অতএব বাবা মা যে সব সন্তান কে সমান চোখে দেখেন কথাটা একেবারেই মিথ্যা। এর জলজ্যা%*ন্ত প্রমাণ আমি। একটা নির্দিষ্ট সময়ে এসে টাকার ভিত্তিতেই প্রতিটা সন্তান ভালোবাসা পায়। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আপা কে দেখেছিলাম। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে। আমাদের শহরে তখন ওটাই একমাত্র ভালো জায়গা ছিল খাওয়ার জন্য। প্রায়ই আপা কে ওখানে দেখতাম। দুপুরের খাবার টা ওখানেই খেতো। তবে বাসায় সবাই জানতো সে দুপুরে না খেয়ে থাকে। আপার খাওয়া নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই। কষ্ট আছে এই কারণে যে বাইরে খেয়েও না খাওয়ার তকমা নিয়ে তারা যা ইচ্ছে খেতে পারছে। তবে আমি সেটা থেকে বঞ্চিত। প্রায়ই ভাইয়ার ড্রয়ার পরিষ্কার করতে গিয়ে খাবারের প্যাকেট পেতাম। আম্মা বলতো থাক ছেলে মানুষ খুদা সহ্য হয়না। আমি চিন্তা করতাম তাহলে আমাকে কেনো খুদা সহ্য করতে হবে। এরপর আমি মাছ মাং*স খাওয়া ভুলে গেলাম। বিয়ে হলো সংসার হলো তবুও আর খাওয়া হয়ে উঠেনি আমার। আমি লক্ষ্য করলাম এত বছর পরও আম্মার সে স্বভাব গুলো যায়নি। আমি কিচেন থেকে রাফিনের তরকারির বাটি টা আনলাম। আম্মা ভাবলেন আমিও তার কথায় একমত পোষণ করেছি। কিন্তু আম্মাকে অবাক করে দিয়ে আমি বাড়ির সমস্ত তরকারি জেনিফার প্লেট এ ঢেলে দিয়ে বললাম, "পুরোটা শেষ করবি। লাগলে আরো নিবি।" আম্মা ভীষণ রেগে গেলেন। সেটা তার চোখে মুখেই প্রকাশ পেলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলেন না। জেনিফা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আমি চোখের ইশারায় তাকে খেতে বললাম। আমি ইচ্ছে করেই এমন করেছি। এমন নয় যে আমি আমার ছেলের ভাগ এর খাবার মেয়ে কে দিয়ে দিয়েছি। বরং রাফিন এর আজ বাসায় ফিরতে দেরি হবে। কলেজ শেষ করে সে নাকি বন্ধু দের সাথে রেস্টুরেন্ট এ যাবে। তাই আমাকে বলেই গিয়েছে মাং*স রান্না করলে ওর ভাগের টা যেনো জেনিফা কে দিয়ে দেই। আমার ছেলে মেয়ে কে আমি এভাবেই বড়ো করেছি। কেউ বেশি খাবে বেশি সুযোগ সুবিধা পাবে এমন কোনো মনোভাবই আমি ওদের ভিতরে তৈরি হতে দিইনি। বরং আমি ওদের শিখিয়েছি কিভাবে একজন মানুষের আলাদা জিনিসের প্রতি আলাদা আকর্ষণ ও চাহিদা থাকে। আমি ওদের শেয়ার করতে শিখানোর পাশা পাশি শিখিয়েছি যে মাঝে মাঝে নিজের জন্যও একাই কিছু করা উচিত। খাওয়া উচিত। প্রতিটা জিনিসেরই যে ভাগ দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। নিজের জন্য সময় থাকা উচিত। অন্তত একটা দিন নিজের মতো করে উদযাপন করা উচিত। এতে আমার দুই সন্তানই একইসাথে শেয়ার করা এবং নিজের জন্য রাখার মূল্য টা জানে। একারণেই বাইরে থাকা অবস্থায় ক্ষুধা পেলে, কোনো কিছু খাওয়া কে তারা অন্যায় মনে করে না। বরং বাসায় এসে জানিয়ে দেয় তারা এটা খেয়েছে। এবং দুইজনেই খুবই খুশি হয় শুনতে পেয়ে যে আজ তারা নতুন কিছু একটা খেয়েছে। ট্রাই করেছে।
খাওয়া শেষ করে জেনিফা নিজের প্লেট ধুয়ে রুম এ চলে গেলো। স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে সে ঘুমায়। আমি এই সময় টা একেবারেই ডিস্টার্ব করি না তাকে। কারণ আজকাল পড়াশোনার প্রচুর চাপ। একটা সাবজেক্ট কভার করতেই দুই তিন ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। তাই বিশ্রাম না করে পরিশ্রম করতে থাকলেই হবে না। আমি থালাবাসন সব ধুয়ে টেবিল পরিষ্কার করে নিজের রুম এর দিকেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম আম্মা জেনিফার রুম এ ঢুকছে। আমি কিছু না বলে চুপচাপ জেনিফার রুম এর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। দেখলাম জেনিফা ঘুমিয়ে পড়েছে মাত্রই। আম্মা ওকে ডেকে তুললেন। ঘুম ঘুম চোখে জেনিফা উঠে বসলো। আম্মা বললেন,
"আমার পানের বাটা তে সুপাড়ি নেই। আমাকে কয়েকটা সুপাড়ী কে%*টে দাও তো।"
জেনিফা কিছুটা বিরক্ত হলো। হওয়ারই কথা। মাত্র ঘুমিয়েছিল সে। জেনিফা উত্তর করলো,
"নানু আমার প্রচুর পড়াশোনার চাপ আর হোম টাস্ক থাকে। এটা আমার ঘুমানোর সময়। আমাকে ঘুম থেকে না জাগালেও পারতে।"
জেনিফার কথায় আম্মা উত্তর করলেন,
"বাজে বোকো না। কই রাফিন তো তোমার চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে ও তো এত নাটক করে না। আর আমার সাথে এইরকম ব্যবহার ও করে না। যতসব নতুন নতুন বাহানা পেয়েছ? পড়াশোনার বাহানা। তোমার লজ্জা থাকা উচিত। সারাদিন তো বাসাতেই থাকো। যখন ইচ্ছা গেলো। রাফিন বেচারা বাইরে থাকে। না জানি বাচ্চাটা কি খায়। কিভাবে পারলে নিজের ভাইয়ের জন্য রাখা তরকারি খেয়ে ফেলতে?"
জেনিফা একেবারে স্তব্ধ। চোখে পানি। কিছুই বলছে না। আম্মা আবার বলে উঠলেন,
"আজকাল তো তোমার ক্লাস এর মেয়েরাই দেখি কতো টিউশন পড়ায়। তুমিওতো পারলে পড়াতে পারো। তোমার হাত খরচ এর টাকা টা পেয়ে যাবে। আবার তোমার মা বাবার উপর যেই বোঝা সেটাও কমে যাবে।"
আমার চোখ থেকে পানি পড়ে গেলো। শুনেছিলাম নানীরা নাকি নাতনি দের অনেক আদর করে। অথচ আফসোস আমার মেয়েটার কপাল ও আমার মতোই হলো। আমি চোখ মুছে শান্ত মাথায় ডাকলাম, "আম্মা এইদিকে এসো। জেনিফা তুমি ঘুমাও।"
আমার কথা শুনে আম্মা আসলেন। তিনি তখনও বকবক করেই যাচ্ছেন। জেনিফা হয়তো মনে মনে রাগ করলো মা হয়ে কেনো আমি তার হয়ে কিছু বললাম না। তবে আমার মাথায় অন্য প্ল্যান। রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছি। আমার হাজব্যান্ড সার্ভ করছে। রূপচাঁদা ফ্রাই করেছি আজকে। আম্মা বললেন,
"বাবা তুমি তো এমনিতেই এতো পরিশ্রম করো। কি দরকার এখন আবার সবাইকে খাবার বেড়ে দেওয়ার। জেনিফা ও তো বাবা কে একটু সাহায্য করছো না।"
জেনিফার বাবা বলল, "থাক না আম্মা। আমার মেয়েটা সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে। এখন একটু আরাম করে খেয়ে নিতে দিন।"
আম্মা বললেন, " কি পরিশ্রম করে তা তো দেখলামই। তোমার মেয়ে কিন্তু আবার রান্না শিখেছে নতুন নতুন। ওইদিক কলমির শাক রান্না হয়েছিল। গোটা একটা ডিম ভেজে খেয়ে নিলো।"
কথাটা বলেই মিথ্যা হাসলেন আম্মা। রাফিনের বাবা আমার দিকে তাকালো। আমি তাকে বসতে বলে রাফিন এর প্লেট এ একটা রূপচাঁদা মাছ তুলে দিয়ে খেতে শুরু করলাম। আম্মা কে দিলাম না। আম্মা হয়তো ভাবলেন সবজি দিয়ে খাওয়া শেষ করলে তারপর দিবো। রাফিন বলল, "আজ আমরা অনেক মজা করেছি বাবা। রেস্টুরেন্ট এ খেয়েছি। খাবার গুলো অনেক মজা ছিল। আমি ভাবছি জেনিফার ও উচিত ওখানে একবার যাওয়া।"
আম্মা কথাটা শুনে মুখ ভেঞ্চি কা*টলেন। রাফিনের বাবা আরো একবার আমার দিকে তাকালো। এই তাকানোর মানে হচ্ছে আম্মা কে কেনো আমি এখনো মাছ তুলে দিচ্ছি না। আমি তাকে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলাম। আম্মা বারবার মাছ এর দিকে তাকাচ্ছেন। প্লেট এর ভাত নাড়াচাড়া করছেন, একটু করে খাচ্ছেন। আবার লজ্জায় বলতেও পারছেন না। যদিও আমার নিজের আম্মা তিনি। তবুও ব্যাপার টা কেমন যেনো এনজয় করলাম আমি। ছোটবেলার ক্ষ*ত টা হয়তো একটু ঠাণ্ডা হলো। অনেকক্ষণ পরেও যখন আম্মা দেখলেন আমাদের সবার খাওয়া প্রায় শেষের পথে তবে তাকে মাছ দেওয়া হচ্ছে না তখন তিনি নিজেই মাছ এর প্লেট টা হাত এ নিলে আমি বলে উঠলাম, "কি করছো আম্মা?" আম্মা উত্তর করলেন, "কি আর করবো তুই হয়তো আমাকে মাছ দিতে ভুলে গেছিস তাই নিজেই নিচ্ছি।"
আমি আম্মার হাত থেকে মাছ এর প্লেট টা নিয়ে বললাম, "আম্মা তুমিই সবসময় বলো যে যেইরকম পরিশ্রম করে তার তেমনই খাওয়া উচিত। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে তুমি কোনোই কাজ করো না। তাই তোমার মাছ না খেলেও চলবে।" নির্লিপ্ত ভাবে কথা গুলো বললাম আমি। আবারও নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। তবে আম্মা ভীষণ লজ্জা পেয়েছেন। অপমানিত বোধ ও করছেন। কিছু না বলে উঠে গেলেন খাওয়ার টেবিল থেকে। রাফিনের বাবা আমাকে বলল, "থাক না। কি দরকার?" আমি বললাম, "দরকার আছে। তুমি দয়া করে এর মাঝে এসো না।"
পরের দিন শুক্রবার ছিল। সবাই বাসাতেই। একসাথে কাজ করছিলাম সবাই মিলে। আম্মা বারবার রাফিন কে নাহয় রাফিনের বাবা কে বলছিল "তোমরা কেনো কাজ করছো তোমরা আরাম করো।"
রাফিন কিংবা ওর বাবা কেউই বিশেষ পাত্তা দিলো না। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাফিন নানীর সাথে বসেছে গল্প করবে বলে। কি গল্প হচ্ছে শুনতে আমিও গেলাম। তবে দরজার কাছে যেতেই থ বনে গেলাম। আম্মা আমার ছেলে কে বলছেন,
" শুনো রাফিন। শেষ বয়সে তুমিই তোমার মা বাবার সাথে থাকবে। জেনিফা আসলে পরের বাড়ির মেয়ে। তাই তোমাদের সেভাবেই চলা উচিত। জেনিফা কে এত মাথায় তুলবে না। আর ওকে দুই একটা টিউশন ধরালেই তো পারো। আর কয়দিন মা বাপের ঘাড়ে বসে খাবে?"
কথা গুলো শুনে আমার মাথার র%*ক্ত গরম হয়ে গেলো। সেদিনই আম্মা আমার বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমি আমার ভাই কে ফোন করে বললাম আমি তো পরের বাড়ির মেয়ে। শেষ বয়সে তুমিই আম্মা কে দেখবে বলে ছোটবেলা থেকেই তোমাকে বিশেষ যত্নে রাখা হয়েছে। বড় আপা কে বিশেষ যত্নে রাখা হয়েছে কারণ সে কামাই করতো। আমার মনে হয়না আম্মার এখন আমার সাথে থাকা উচিত। যেই কারণে সব দিক থেকে সুবিধা দিয়ে তোমাদের কে বড় করেছে সেটা পালন করো। আম্মাকে নিয়ে যাও। আমি তাকে আমার বাসায় আর রাখতে চাচ্ছি না। যাওয়ার সময় আম্মা অনেক কান্নাকা*টি করলেন। আমাকে অভিশাপ দিলেন। তবে কোনোটাই আমার গায়ে লাগলো না। আমি শান্তির নিশ্বাস ফেলে তাকে বললাম, বিভেদ যেদিন মন থেকে তুলতে পারবে সেদিন চাইলে আসতে পারো। আমার বড় ভাই ও আম্মার সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে চলে গেলো। আমি নাকি তাদের হিং*সা করি। দেখতে পারিনা। আমি কানে নিলাম না। আসলে একটা সময় আমাদের কাছে সবকিছুই থাকে কিন্তু সেই আনন্দ থাকে না যা ছোটো বেলায় ওই জিনিস তার প্রতি অনুভব হতো। আমি চাইনা আমার সন্তানরা সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হোক। মা হিসেবে এটাই আমার চেষ্টা। আমার সন্তানেরা পৃথিবীর সব আনন্দ পাক। কোনো বিভেদ যেনো তাদের ছুঁতে না পারে।