ডার্ক ওয়েব নিয়ে আজকে আমি আপনাদের এক ভয়ংকর সত্য ঘটনা শোনাতে যাচ্ছি... যা শোনার পর হয়তো আপনার শরীরের র'ক্ত হিম হয়ে যাবে।
আমরা অনেকেই জানি, আবার অনেকেই জানিনা, ইন্টারনেটের তিনটা স্তর আছে। প্রথমটা হলো সারফেস ওয়েব, যেটা আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি। ফেসবুক, ইউটিউব, নিউজ সাইট— সবই এই স্তরে। এর নিচে আছে ডীপ ওয়েব, যেখানে থাকে হাসপাতালের রেকর্ড, ব্যাংকের তথ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেস। এগুলো সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যায় না, আর সাধারণ মানুষ লগইন ছাড়া ঢুকতেও পারে না। কিন্তু সবচেয়ে গভীরে আছে ডার্ক ওয়েব— একটা অন্ধকার জগৎ। এখানে ঢুকতে লাগে আলাদা ব্রাউজার, আর ভেতরে অপেক্ষা করে ভয়ঙ্কর সব অবৈধ ব্যবসা। ড্রা'গ'স, অ/স্ত্র, হ্যাকিং, মা'নবপাচার, এমনকি এমন কিছু ভিডিও... যেগুলো মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।
সময়টা ২০১২ সাল। হঠাৎ করেই সেই ডার্ক ওয়েবের অন্ধকার থেকে এক ভিডিও ফাঁস হয়ে বাইরে চলে আসে। ভিডিওটি চার ভাগে বিভক্ত, প্রতিটি পার্ট ১০–১৫ মিনিটের। প্রথমে কেউ বুঝতেই পারছিল না কী হচ্ছে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ে। আর তারপরই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক। ভিডিওতে দেখা যায়— ছোট ছোট মেয়েরা শি'ক'ল বাঁধা, আহত, কাঁদছে আর নির্মমভাবে নি'র্যাতনের শিকার হচ্ছে। মানুষের চোখ, কান কিছুই যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। মানুষের ভেতর কতটা পশুত্ব লুকিয়ে থাকতে পারে— তার জ্যান্ত প্রমাণ যেন এই ভিডিওটাই।
আর এই নরকীয় কাজের নেপথ্যের মূল হোতা ছিল “পিটার জেরার্ড স্কালি।”
পিটারের পাশে সবসময় মুখোশ পরা দুই তরুণীকে দেখা যেত। তাদের নাম ছিল এলোরা, বয়স ১৮, আর লেজি, বয়স ১৯। পরের তদন্তে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ওরা পিটারের হাতে আটকা ছিল। প্রথমে পিটার তাদের টেককেয়ার করত, কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের ওপরও চালাত ভয়ঙ্কর নি'র্যাতন। কখনও এক–দুই মাসের জন্য তাদের কাস্টমারের কাছে ভাড়া দিয়ে দিত।
একদিন পিটার এলোরা আর লেজিকে নির্দেশ দিল— ১২ বছরের নিচে কয়েকটা অনাথ মেয়ে খুঁজে আনতে হবে। তারা বাধ্য হয়ে তিনটা মেয়ে নিয়ে আসে। একজনের বয়স ৯ বছর, একজনের ১২ বছর, আর সবচেয়ে ছোট্ট— মাত্র ১৮ মাসের একটা শিশু।
তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সেই ভয়ঙ্কর “রেড রুমে।” ক্যামেরার সামনে বসানো হয় মেয়েগুলোকে। এলোরা আর লেজি মুখোশ পরে নির্দেশ পালন করতে থাকে। ধা'রা'লো চু/রি দিয়ে মেয়েদের প্রাইভেট অংশে আঘাত করা হয়। তাদের চিৎকারে পুরো রুম কেঁপে ওঠে। এলোরা হাত কাঁপতে কাঁপতে হা'তু'ড়ি দিয়ে আঘাত চালাতে বাধ্য হয়। মেয়েগুলো অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর পুরো রাত তাদের বেঁধে, না খাইয়ে ফেলে রাখা হয়।
সকালে খাবার দেওয়া হলেও সেটা ছিল এক ভয়ঙ্কর ফাঁদ। বাইরে খুঁড়ে রাখা হচ্ছিল গর্ত। পিটার নির্দেশ দিল, এবার কুকুরের মতো গলায় শিকল পরিয়ে মেয়েগুলোকে গর্তে ফেলে দিতে হবে। সেই মুহূর্তে এলোরা থেমে গেল। তার বুক ফেটে কান্না এল। নিজেরাও তো মেয়ে, অন্য মেয়েদের এভাবে ম'র'তে দেওয়া যায় না। সাহস করে শিকল খুলে দিল। মেয়েগুলোকে পালিয়ে যেতে বলল, আর উপদেশ দিল— সরাসরি পুলিশের কাছে চলে যাও।
এরপর পুলিশ অভিযান চালায় এবং অবশেষে পিটার স্কালিকে গ্রেপ্তার করে। ফরেনসিক রিপোর্ট বের হতেই সবাই শিউরে ওঠে। ১২ বছরের মেয়েটির শরীরে ধা'রা'লো অ/স্ত্র আর জ্বলন্ত আগুনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার দেহজুড়ে ছিল নির্মম ফ্ল্যাগেলেশনের দাগ। ১৮ মাসের শিশুটির শরীরেও যৌ/ন হয়রানি আর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এত ছোট একটা শিশু, যে নিজের কষ্টটা ভাষায়ও প্রকাশ করতে পারে না— তাকেও ছাড়েনি এই দানব। এসব রিপোর্ট আদালতে প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয়।
সবচেয়ে করুণ ছিল ৯ বছরের মেয়েটির পরিণতি। তাকে আর বাঁচানো যায়নি। তদন্তে প্রমাণ মেলে— ভিডিওর শুটিং আর লাইভ স্ট্রিম চলাকালীন টাকার বিনিময়ে তাকেই হ/ত্যা করা হয়েছিল।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এলোরা আর লেজি ভেঙে পড়ে সব জানায়। কিভাবে তারা বছরের পর বছর পিটারের নির্দেশে নি'র্যাতন চালাতে বাধ্য হয়েছে, কখনও নিজেরাও নি'র্যাতিত হয়েছে। তারা জানায়, মেয়েদের ভয় দেখানোর জন্য মানসিক আর শারীরিক নি'র্যাতন করা হতো। এমনকি মেয়েদের গর্তে ফেলার নির্দেশও পেয়েছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেরাই সাহস করে তাদের বাঁচিয়ে দেয়। এলোরা বলেছিল— আমার মতো মেয়ে অন্য মেয়ের ওপর এভাবে নি'র্যাতন চালাতে পারে না। আমার মন সইত না। জানতাম, যদি আমরা কিছু না করি, ওরা বাঁচবে না।
ফিলিপাইনের রাস্তায় অনাথ আর গৃহহীন শিশুদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে পিটার যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তা শুধু শিশুদের নয়— পুরো পৃথিবীকে শিহরিত করেছিল। ডার্ক ওয়েবের অন্ধকারে লুকানো ভয়ঙ্কর দুনিয়ার এক টুকরো আভাসই যেন এই ঘটনা।
২০১৫ সালে আদালতে পিটার স্কালির বিরুদ্ধে ৭৫টা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২০১৮ সালে তাকে প্রথমে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আরও ১২৯ বছরের সাজা যোগ হয়। তবুও মনে হয়, তার অপরাধের বিচার কখনও পূর্ণ হবে না।