ওয়াজ মাহফিল
আমাদের মহল্লায় ওয়াজ মাহফিল হবে। আমাদের আনন্দ আর উত্তেজনার শেষ নেই। আমি তখনকার কথা বলছি যখন ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি ছিল না। ইউটিউব ফেসবুকের এই যুগে চাইলেই যেকোনো বক্তার ওয়াজ শোনা যায়। আবার না চাইলেও শুনতে হয়। ফেসবুক স্ক্রল করলে ওয়াজের ভিডিও বা শর্ট ক্লিপ আসতে থাকে। এজন্য আজকালকার ছেলেরা ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের উত্তজনাটা অনুভব করতে পারবে না, আমরা যেভাবে অনুভব করতাম।
আমাদের গ্রাম হলো একদম অজ পাড়া গাঁ। সেখানের মসজিদে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি জুমআর খুতবা দিতেন। তাঁর বৃদ্ধ বয়সের কারণেই হয়ত বা একই ধরণের খুতবা বারবার ঘুরে ফিরে প্রতি জুমআয় দিতেন। ফলে জুমআর খুতবার প্রতি আমাদের তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। খুতবার মাঝামাঝি সময়ে দেখতাম মুরুব্বি আর মাঝবয়সীরা ঘুমাচ্ছে। আমরা কম বয়সীরা ঘুমের মধ্যে ঢলে ঢলে পড়তাম। (আজকের যুগের ছেলেদের মত গল্পগুজব করার চিন্তা মাথাতেও আসত না)। একদিন বৃদ্ধ সেই খতিব, আমরা যাকে বলতাম মুলবি দাদু (মৌলভি দাদু) তিনি খুতবা দিতে এলেন না। কে খুতবা দেবে এ নিয়ে সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। তখন মসজিদের মধ্যে শুধু একজনকে পাওয়া গেল যিনি কুরআন পড়তে পারেন। তো তিনি মিম্বারে উঠে ১৫ মিনিটের মত কুরআন দেখে দেখে পড়লেন। এটাই ছিল সেদিনের খুতবা। পাঠক মহল নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছেন, সেই যুগে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে এলাকাবাসীর উত্তেজনার কারণ। একজন আলিমের সুরেলা কন্ঠের বয়ান শোনা, অত্যাশ্চর্য কাহিনী শুনে মোহিত হওয়ার অপেক্ষা সবাইকে উদ্বেলিত করত।
আমাদের মহল্লায় আগে কোনোবার ওয়াজ হয় নি। সেবারই প্রথম। উদ্যোগ নিয়েছেন সাবের চাচা (ছদ্মনাম)। তিনি পাড়ার মোড়ল ধরণের ব্যক্তি। সাবের চাচার উদ্যোগে এলাকার সবাই খুশি। এ বছর আমাদের অঞ্চলে কোনো ওয়াজ হয় নি। যদিও প্রতিবার হয় গড়েয়ার মাঠে। আমাদের পাড়া থেকে চার কিলো দূরে। এবার কমিটির কী ঝামেলায় ওয়াজ হলো না। আমাদের মন খারাপ হলো। আমাদের সাবের চাচাও গড়েয়ার মাঠের ওয়াজ কমিটির সদস্য ছিলেন। কমিটির ঝগড়ায় তাকে অপমান করা হয়। তাই তিনি ঠিক করেছেন নিজ এলাকায় ওয়াজের আয়োজন করে সেই অপমানের বদলা নেবেন। তিনি ঘোষনা দিয়েছেন গড়েয়ার মাঠের ওয়াজের কমিটিতে তিনি আর নেই। তিনি দেখে নেবেন তাকে ছাড়া কীভাবে আর সেখানে ওয়াজ মাহফিল হয়। সাবের চাচার মেজ ছেলে বছর দুয়েক আগে ডিবির ভিসায় আমেরিকায় গিয়েছে। সেই সূত্রে তিনি এখন টাকাওয়ালা মানুষ। তিনি সবাইকে বললেন, নিজেদের টাকা দিয়া কেন গড়েয়ার মাঠের ওয়াজ করতে যাব? ওয়াজ হবে আমার আঙিনায়। দামি বক্তা আনা হবে। আমার কি টাকার অভাব?
না, সাবের চাচার টাকার অভাব নেই। কিন্তু সবার মনে প্রশ্ন, তাহলে কি ওয়াজ উপলক্ষে গ্রামের মানুষ থেকে টাকা তোলা হবে না? সাবের চাচা হুঙ্কার দিয়ে বললেন, হবে। টাকা তোলা হবে, কিন্তু সেটা ওয়াজের জন্য না। আমাদের যেই মক্তব আছে এটা হাফেজিয়া মাদ্রাসা করা হবে। ছাত্ররা আবাসিক থেকে পড়াশোনা করবে। এই মাদ্রাসার জন্য টাকা তোলা হবে। সাবের চাচা হবেন মাদ্রাসার ও ওয়াজ মাহফিলের যুগপৎ সভাপতি। এতে কেউ কোনো দ্বিমত করল না।
আমার বয়স তখন ১০ কিংবা ১১। আমি নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। ওয়াজের ব্যাপারে তাই আমার অনেক আগ্রহ । আমি গুনগুন করে বক্তাদের মতো সুর করে কুরআন পড়ার চেষ্টা করতে লাগলাম আর ওয়াজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমার বাবা নতুন এই ওয়াজ কমিটির একজন সদস্য। ওয়াজ নিয়ে মিটিং হলে আমি তার পিছু নিই। আশপাশ ঘুরাফিরা করি। ওয়াজমাহফিলের পরিকল্পনা শুনতে ভিষন আগ্রহ আমার। ধমক খেয়েও সরতে চাই না।
ওয়াজ মাহফিল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সেচ্ছাসেবী পরিষদ গঠিত হলো। আমিও একজন কনিষ্ঠ সদস্য হলাম। স্বেচ্ছাসেবী দলের নেতা হলেন আমার ফুফাত ভাই শাহীন।
ওয়াজ মাহফিলের দিন ঘনিয়ে এলো। দুজন বক্তাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। বক্তাদের হাদিয়া কত নির্ধারণ হয়েছে এই বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। আমার বাবাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে ধমক খেলাম। তৃতীয় বক্তা হিসেবে আমাদের উপজেলার একজন আলিমকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। ওয়াজের প্যান্ডেল টানানো শুরু হলো। হ্যাজাক জালিয়ে রাতেও কাজ চলছিল। আমরা স্বেচ্ছাসেবী দল অতি উৎসাহে কাজের তদারকি করতে লাগলাম। বড় বড় বাঁশের জোগাড় যন্ত, আনা নেয়া খুব সহজ কাজ নয়। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী দলের নেতা শাহীন ভাই, সুন্দর পাঞ্জাবী পরে কাজের হুকুম করতে লাগলেন। নিজে কোনো কাজে হাত লাগালেন না। কিন্তু অনেক আনন্দে হই হুল্লোর করে আমরা তার হুকুম তামিল করতে লাগলাম। একজন স্লোগান ধরল– ঐ সেচ্ছাসেবী। আমরা সবাই বললাম, শাহীন ভাই। স্বেচ্ছাসেবী! শাহীন ভাই। স্বেচ্ছাসেবী! শাহীন ভাই। শাহীন ভাই আমাদের উপর রাগ করলেন। আমরা কিছু মনে করলাম না।
ওয়াজের প্যান্ডেল টানানো শেষ হলো। মানুষ দূর দূরান্ত থেকে সাইকেলে করে আসবে। সেই সাইকেলের নিরাপত্তার জন্য অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ করা হলো। এক টাকা করে টিকেট নির্ধারণ করা হলো। এই টাকা যাবে নতুন হাফেজিয়া মাদ্রাসার ফান্ডে। ওয়াজ মাহফিলের রাতে গ্রামের ছেলে, বুড়ো, নারী সবাই আসবে। এই সুযোগে ফাঁকা বাড়িতে চুরি হতে পারে, এই প্রশ্ন অনেকের মাথায় এলো। মাহফিল কমিটিকে জানানো হলো। ৪/৫ জন গাট্টাগোট্টা যুবককে টর্চ লাইট ও লাঠি সহ গ্রাম পাহাড়া দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হলো। প্যান্ডেলে ওয়াজ শুনতে পারবে না জেনে তাদের মন খারাপ হয়েছিল। তাদের বলা হলো, আরে বোকা! মাইকের আওয়াজ রাতে অনেকদূর পর্যন্ত যাবে। সব স্পষ্ট শুনতে পাবি! আবার ৫০ টাকা করে তাদের জন্য হাতখরচ দেয়ার কথা চূড়ান্ত হলো। তারা খুশি মনে দায়িত্ব পালনে রাজি হলো।
ওয়াজ মাহফিলের নির্ধারিত দিন ঘনিয়ে এলো। আমরা সকাল থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলাম। চাঁদা তোলার বিশাল টেবিল বসানো হলো। ওয়াজ উপলক্ষে চাঁদা তোলা হবে, কিন্তু এই টাকা যুক্ত হবে হাফেজিয়া মাদ্রাসার ফান্ডে। রাস্তা দিয়ে সাইকেলে, ভ্যানে, কেউ কেউ মটরসাইকেল যাতায়াত করছে। সবাইকে থামানো হচ্ছে। আমাদের ছোটদের মধ্যে উগ্র ভাব। আমরা সরাসরি রাস্তা ব্লক করে দাঁড়াচ্ছি। বড়রা আমাদের উৎসাহ দিচ্ছে। রাস্তার পথচারী কেউ কেউ বলছিল যে, তারা টাকা নিয়ে বের হয় নি। কিন্তু আমরা নাছোড়বান্দা। কিছু না কিছু দিয়ে শরীক হতেই হবে! এক টাকা বা ৫০ পয়সা দিয়ে হলেও শরীক হতে হবে! উত্তর পাড়ার চাউল দোকানী আজগর চাচা যাচ্ছিলেন তার বিশালদেহী লোহাস্বর্বস্ব সাইকেলে করে। তাকে থামানো হলো। বললাম, চাচা, শরীক হন। তিনি বললেন, টাকা নাই। আমরা মানতে নারাজ। টাকা তাকে দিতেই হবে! অবশেষে তিনি তার শার্টের পকেট বের করে দেখালেন যে তার কাছে টাকা নেই। আমরা তাও মানতে নারাজ। এবার তিনি তার কোমড়ে লুঙ্গির গিঁট খুলে দেখালেন যে, টাকা নেই। (গ্রাম এলাকায় লুঙ্গির গিঁটে টাকা রাখা হয়। )
আমরা আজগর চাচার কথা এবার মেনে নিলাম। তিনি রাগে গজগজ করতে করতে সাইকেলে উঠে গেলেন।
সকাল ১১ টার দিকে আমরা বাড়িতে চলে গেলাম খেতে। তখন আমাদের বদলে নতুন আরেকদল রাস্তায় এই জোড়পূর্বক চাঁদা উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নিল। আমি ঘন্টাখানেক পরে এসে দেখলাম, সবার মন কেমন যেন খারাপ হয়ে আছে। উৎসাহে ভাটা পড়েছে। জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল কারণ। আমরা ফিরে আসার আগে আগে এক মটরসাইকেল আরোহী (মানে বেশ ধনী) ব্যক্তি থেকে ৫০ টাকা (তখনকার দিনে অনেক টাকা) চাঁদা আদায় করা হয়েছে। তিনি শুরুতে ১০ টাকার নোট বের করে দেন। কিন্তু তাকে বলা হয়, আপনি ধনী মানুষ, ১০ টাকায় হবে না। ৫০ টাকা দিতে হবে। অবশেষে তাকে বাঁধ্য হয়ে ৫০ টাকাই দিতে হয়। এই ঘটনা চাঁদা তোলার মূল দায়িত্বে থাকা আজিজ চাচাকে (তিনি বাড়ি থেকে ফিরে এলে) আগ্রহের সাথে জানানো হয়। সবাই ভাবছিল, তিনি বাহবা দেবেন । কিন্তু, তিনি ভীষন রেগে গেলেন ।
করছিস কি তোরা? এই করছিস কি?
কেন কী হয়েছে চাচা?
আরে এই লোকের কাছে সকালেই ৫০ টাকা নেয়া হয়েছিল। সে আমার দুঃসম্পর্কের দুলাভাই। সম্মানী লোক। সে এখন ফেরার সময় আবার ৫০ টাকা নিয়েছিস তোরা। লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল রে!
তাই তো! আমার মনে পড়ল সকালেই এক মোটরসাইকেল আরোহী থেকে ৫০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়েছিল। ফেরার পথে তাকে আবার আটকিয়ে টাকা নেয়া হয়। আহ হা।
এই ঘটনার পরে চাঁদা তোলার কর্মসূচি কেমন যেন ঝিমিয়ে গেল। তবু ঢিমেতালে চলল বিকাল পর্যন্ত।
ইশার নামাজের আগে আগেই আমন্ত্রিত দুজন বক্তা চলে এলেন। তারা উঠলেন সাবের চাচার বাড়িতে। তাদের উত্তম আপ্যায়ন করা হলো। তাঁদের একজনের ইমামতিতে মসজিদে খুব আগ্রহের সাথে আমরা ইশার নামাজ আদায় করলাম। কি সুন্দর তিলাওয়াত! নামাজ পড়ে খুবই প্রশান্তি পেলাম সেদিন। (প্যান্ডেলে আলাদা নামাজ হয়েছিল)।
মাহফিলের মঞ্চে অনেকেই চলে এসেছেন। শ খানেক মানুষ বসে গেছে ইতিমধ্যেই। কয়েকজন বাচ্চা ছেলে হামদ নাত পেশ করল। এরপরে আমাদের স্থানীয় একজন আলিম বক্তব্য দিতে উঠলেন। তিনি তৃতীয় বক্তা। বক্তব্য শুরু হলো। আমিও প্যান্ডেলে বসে গেলাম। হঠাৎ শাহীন ভাই আমাকে ইশারায় ডাক দিল। আমি বের হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, সাবের চাচার বাড়ি থেকে সোফা নিয়ে আসতে হবে দ্বিতীয় বক্তা আসার আগে আগে। এখন দু’জন বক্তা সাবের চাচার বাড়িতে বসে আছেন। এজন্য সোফা আনা যায় নি। প্রধান বক্তা যখন বিশ্রামে যাবেন, আর দ্বিতীয় বক্তা মঞ্চের উদ্দেশ্যে আসতে থাকবেন তখন সোফা খালি হবে। সেই সুযোগে সোফা নিয়ে ভ্যান গাড়িতে করে দ্রূত মঞ্চে উঠাতে হবে।
শাহীন ভাইয়ের কথা শুনে আমরা স্বেচ্ছাসেবী কয়েকজন প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ওয়াজের প্যান্ডেলে আপাতত বসে পড়লাম শ্রোতা হিসেবে। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া ঠান্ডা ঠান্ডা। (মার্চ মাসের শেষদিকের কথা বলছি।) সবাই খুব খুশি। এরকম আবহাওয়াতে ওয়াজ শুনে আরাম। গরমের কষ্ট ভোগ করতে হবে না। তৃতীয় বক্তা শ্রদ্ধেও আমিন সাহেব একটি ঘটনা বর্ণনা করতে লাগলেন ধীর লয়ে। ঘটনা আগাতে থাকলে তার কন্ঠও চড়া হতে লাগল। একসময়ে তিনি গর্জন করতে করতে ঘটনার শেষ অংশ (ক্লাইমেক্স) বলতে লাগলেন। কিন্তু তার এই গর্জন আমাকে বা স্রোতাদের কাউকে প্রভাবিত করল বলে মনে হল না। কেউ কেউ ফিস ফিস করছিল। বক্তা হিসেবে এনাকে নেয়া ঠিক হয় নি। ইত্যাদি ইত্যাদি। বক্তা আমিন সাহেব (ছদ্মনাম) তার গর্জন চালিয়ে যেতে লাগলেন। তার গর্জনের শোনার মধ্যেই হঠাৎ একসময় আকাশের মেঘের গর্জন শোনা গেল । মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আরো গর্জন হলো কয়েকবার। আকাশের অবস্থা কি খারাপ? জোড়ে বাতাস বইতে শুরু করেছে । মেঘের গর্জন বেড়েছে। সবার মধ্যে একধরণের ভয় কাজ করতে লাগল। ওয়াজ কি চলবে? বাতাসের তোড় বাড়ছে। ঠান্ডা বাতাস। বিদ্যুৎ চমাকানো শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। হয়ত মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বৃষ্টি আসবে। আমরা প্যান্ডেলের বাইরে চলে এলাম। বক্তা সাহেব সবাইকে শান্ত হয়ে ওয়াজ শুনতে বললেন। বললেন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। বৃষ্টি এলে তো সবাই চলে যাবেনই। এই কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। চলে যাবেন মানে? ওয়াজ মাহফিল কি তাহলে হবে না?
বাতাসের তোড় বাড়ছে । এক পর্যায়ে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু হলো। বাতাস এতই তীব্র হলো যে, মাহফিলের প্যান্ডেলের একটা দিক ঝুঁকে পড়ল। বাঁশ ভাঙ্গার মৃদু আওয়াজ পেলাম । দ্রুত সবাই প্যান্ডেল ছেড়ে বের হলো। ডেকোরেশনের ছেলেরা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র দ্রুত সরাচ্ছে। ভীষন হুলুস্থুল অবস্থা।
১০ মিনিটের মধ্যেই ভীষন ঝড় শুরু হলো।
তীব্র বাতাস আর ঝড়ে মাহফিলের প্যান্ডেল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হল চোখের সামনেই । আর আমার মনও যেন ধ্বংসস্তুপ । তাকিয়ে দেখলাম সবার মুখ মলিন। আমাদের অনেকের মনে তখনো ক্ষীন আশা জেগে রইল যে, ঝড় থামলে আবার প্যান্ডেল গুছিয়ে মাহফিল হবে। নিজেদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ শাহীন ভাই বলল, মাহফিল হলেও লোকজন আর আসবে না রে!
তার কথা শুনে আমার মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। অন্য সবার চেহারাও থমথমে।
সেই রাতের ঝড় বৃষ্টি চলল টানা ৩ ঘন্টা। গ্রামের কিছু গাছ ভেঙ্গে পড়ল। কি তীব্র এক ঝড়! সবাই সাবের চাচাকে দোষ দিতে লাগল। কেন এই চৈত্র মাসে ওয়াজ মাহফিল করতে চাইল এই লোক? সাবের চাচার চোখে মুখেও দেখলাম ঝড় থামার পরের সময়ের মত নিস্তব্ধতা।
আমাদের সেবারের ওয়াজ মাহফিল আর হয় নি। পরের বছর ডিসেম্বরে গড়েয়ার মাঠে সুন্দর একটা ওয়াজ মাহোফিল হল। আমরা খুবই আগ্রহ নিয়ে সেই মাহফিল শুনলাম। তিনজন বক্তাই সুন্দর ওয়াজ করলেন। প্রধান বক্তা সবার কাছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অঙ্গিকার নিলেন। সাবের চাচা এই মাহফিলের সহ-সভাপতি ছিলেন। পুরো সময়টা তাকে স্টেজে হাসিমুখে বসে থাকতে দেখেছি।