Posts

গল্প

বণ্টন

September 4, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

149
View

বন্টন


বাহরুল ইলম (জ্ঞানের সমুদ্র) সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বর্ণনা করেছেন, ঈসা (আ) এর উম্মতের জনৈক নেককার ব্যক্তি ইয়ামানের সানআ’ এলাকায় বসবাস করত। তার ছিল একটি চমৎকার ফলের বাগান (মাযরা)। 

ব্যক্তিটির নিয়ম ছিল বাগানের ফল-ফসল আহরণের সময় তিনি দরিদ্র লোকদের জন্য একটা অংশ নির্ধারিত করতেন। সেই অংশের খাদ্যশস্য দিয়ে জীবিকা পেত নিরুপায়, নিঃস্ব লোকেরা। 

দরিদ্র লোকেরা বাগানের ফল তোলার সময়ের অপেক্ষা করত এবং নিজেদের অংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকত। ফসল কাটার মৌসুমগুলোতে বাগানের নিকট তাদের ভিড় লেগে যেত। 

এভাবে চলছিল নেককার লোকটির জীবন। আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে যিনি নিজে সম্পদে দরিদ্রদের অংশ রাখতে ভুলতেন না। নিজের জীবিকার জন্য যাই থাকত, তাতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। 

 

পঙ্কিল দুনিয়া থেকে হজরত জিবরিল (আ) যখন ঈসা (আ) কে আসমানে তুলে নিলেন, এর কিছুদিন পরে সেই পুণ্যবান ব্যক্তিও ইন্তেকাল করেন । ফলে তার তিন পুত্র ঐ বাগান ও ক্ষেতের ওয়ারিশ হয়। 

নেককার ব্যক্তিটির মৃত্যুর পরেই তার তিন পুত্র মিলে পরস্পরে আলোচনায় বসল। তারা একটি বিশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। 

তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল,
”এই বাগান থেকে আমাদের সংসারের খরচই তো কোন রকম বের হয়। আমাদের বাবা যখন মালিক ছিলেন, তখন তিনি যা ইচ্ছা করেছেন, কিন্তু আমরা ওই দরিদ্র লোকগুলোকে আর ফল-ফসল বিলাতে চাইনা।” 

তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তই পাকাপোক্ত হল। দিন-মাস গড়াল। একসময় ফসল তোলার মৌসুম এসে পড়ল। তিন ভাই ঠিক করল যে, ভোরবেলা বেশ খানিকটা রাত থাকতেই তারা ফসল কেটে আনবে, যাতে মিসকীনরা কেউ জানতে না পারে। ভীড় জমানোর সুযোগ না পায়। 

রাতের অন্ধকার থাকতেই তারা বাগানের পথে রওনা দিল। 

তারা নিঃশব্দে চলছে, কথা বলছে নিচু স্বরে। 

এইতো আর কিছুদূর। বাগানে গিয়েই দ্রুত ফসল তোলা হবে। অন্ধকার থাকতে থাকতেই সব খালি করে ফিরে যেতে হবে। 

এভাবে একসময় রাস্তা শেষ হলো। তারা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে গেল। চারপাশ ঘুরে দেখছে সবাই। কিন্তু আশ্চর্য্য! বাগান কোথায়?  তারা এক ধরণের ভ্যাবাচ্যাকা নিয়ে চারপাশটা ভালো মত ঘুরে দেখল। নাহ! কোথাও ভুল হয়েছে! বাগান তো এখানে নেই। হয়ত ভুল পথে এসেছে তারা। অন্ধকারে ভুল হওয়ারই কথা। 

লোকেরা ফিরে যাওয়ার আগে ভাবল, আরও যাচাই করে দেখা উচিত । ভালোমত জায়গাটা ঘুরে দেখি শেষ বার। এই রাত-বিরাতে এরকম বিড়ম্বনা ভালো লাগে না। কিন্তু কী-ই বা করার আছে। 
এই জায়গাটা কেমন শুস্ক, বিরান। বেশ খানিক্ষণ সবাই ঘুরে ফিরে পরখ করল জায়গাটা। সবাই নিশ্চিত হলো, নাহ!   তারা তাদের বাগানের জায়গাতেই অবস্থান করছে। কিন্তু  বাগান কোথায়?

তারা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। সবকিছু ছাই-ভস্মের মত দেখা যায়। 
পাকা ফসলের কোনো নিশানা নেই। তাজা ফলের ঘ্রাণ পাচ্ছে না কেউই। 

কিন্তু তারা নিশ্চিত, তারা তাদের বাগানের উপরেই হাঁটছে। এখানেই তাদের বাগান। পুরোটা দেখা শেষ হলো একসময়। 
সব গাছপালা, ফল-ফসল পুড়ে ছাই হয়ে আছে। এই আকস্মিক করুন ও ভয়ানক দৃশ্য দেখে সবাই বিহ্বল হয়ে পড়ল। এটা কীভাবে সম্ভব?

আশপাশের বাগানগুলো ঘুরে দেখতে হবে। সেগুলোরই কী একই অবস্থা? কোথা থেকে হঠাত এলো এই অগ্নিঝড়। পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিল তরতাজা বাগান?

আশপাশের বাগানগুলোতে ধ্বংস বা ছাইয়ের কোনো চিহ্ন নেই। সব পাকা ফল, ফসলে ভরপুর হয়ে আছে। তরতাজা ফসলের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।

তাহলে? শুধু তাদের বাগান! তাদের বাগানেই  আগুন ঝড়ের ঘুর্ণি সব কিছুকে পুড়িয়ে ফেলেছে! 

তীব্র ভয় ও অনুশোচনা কাতর করে ফেলল সবাইকে । তারা বুঝতে পারল যে, এটা আসমানি আযাব। 
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে লাগল সবাই। দরিদ্রদের বঞ্চিত করার নিয়্যত থেকে তাওবা করে নিল সাথে সাথেই। 

 

বেশ কিছু বছর পরে কথা। তিন ভাই হাঁটছে তাদের বাগানে। বাগানের ফল-ফসল পেকে মৌ মৌ ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। পাশে অপেক্ষা করছে দরিদ্র লোকেরা। তারাও কিছু পেতে চায়। আশা করা যায় তারা বঞ্চিত হবে না। 


তিন ভাই বেশ তৃপ্ত, খুশি, কারণ আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেছে বলে তারা আশা করে। 

 


 


 

Comments

    Please login to post comment. Login