Posts

গল্প

ওস্তাদ

September 4, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

99
View

ওস্তাদ


এক কুস্তিগীর তার কুস্তিবিদ্যায় খুবই পারদর্শী হয়ে উঠল। রাজ্যে তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ল। তো, তার বয়স হলে তিনি একজন শিষ্য বাছাই করতে চাইলেন । শিষ্যকে তিনি তার অর্জিতা বিদ্যা শিখিয়ে কবরে যেতে চান। বৃদ্ধ কুস্তিগির ছিলেন বাদশাহের খুব প্রিয়। বৃদ্ধ বাদশাহের সাথে দেখা করলেন। বললেন, আমাকে একটি প্রতিভাবান ও নেক খাসলতের ছেলে খুঁজে দিন। আমি তাকে আমার বিদ্যা শেখাতে চাই।  বাদশাহ বৃদ্ধের কথা ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করলেন। তিনি তার লোকদের আদেশ দিয়ে দিলেন যোগ্য শিষ্য খুঁজে বের করতে। 

মাসখানেকের মধ্যে বাদশাহের লোকেরা একটি তরুন ছেলেকে বাছাই করে আনল। বাদশাহ ও ওস্তাদ তাকে দেখে পছন্দ করলেন। সেই হবে বৃদ্ধ কুস্তিগীরের শিষ্য। 

শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল। একে একে সব কৌশলই শেখাতে লাগলেন বৃদ্ধ ওস্তাদ। ছেলেটি প্রখর হওয়ায় শিখছিল খুব দ্রুত। শিখার পাশাপাশি চলছিল অনুশীলন। বৃদ্ধ তিন শতাধিক ধরণের কৌশল জানতেন। সব শিখতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছিল । বৃদ্ধ তার তরুন শিষ্যকে ধৈর্য্য ধরে অনুশীলন করে যেতে বললেন। 

দিন গড়াতে গড়াতে একসময় শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত হলো। 


ছেলেটি এবার নিজের মত করে অনুশীলন চালিয়ে যেতে লাগল। একদিন সে কুস্তিবিদ্যার সব কৌশলগুলোতে অত্যন্ত দক্ষতা অর্জন করল। এক পর্যায়ে রাজ্য ও রাজমহলে তারও সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। ছেলেটি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরী পেল। পেল সম্মান। ভালো বেতন। সে রাজার সুনজরে এল। যে সুনজরে ছিল তার বৃদ্ধ ওস্তাদ। 

দিন যেতে থাকল, লোকেরা ছেলেটির সাথে কথা বললে তার বৃদ্ধ ওস্তাদেরও কথা তুলত এবং তারও প্রশংসা করতো। কিন্তু এখন ছেলেটির এই ব্যাপারটি সহ্য হচ্ছিল না। সে শুধু তার নিজের প্রশংসাই শুনতে চায়, তার ওস্তাদ বৃদ্ধ হয়ে গেছে– এখন তার আর কী-ই বা মূল্য। দিন তো এখন তার একার– এমন ভাবতে লাগল ছেলেটি । অহংকার দানা বাঁধতে থাকল তার মনে। ধীরে ধীরে সে নিজের দক্ষতার বড়াই আর তার ওস্তাদের সমালোচনা পর্যন্ত করতে শুরু করল। মানুষকে বোঝাল যে, লড়াইয়ে সে তার ওস্তাদকে এখন হারিয়ে দিতে সক্ষম । সে নিজের শক্তিমত্তা ও পারদর্শিতার ব্যাপারে গর্ব প্রকাশ করে যাচ্ছিল সবার সামনে। বাদশাহর কাছে ছেলেটির সংবাদ পৌঁছল। তিনি সব শুনে রুষ্ট হলেন। তিনি ওস্তাদ ও শিষ্যের মধ্যে খোলা ময়দানে লড়াই প্রতিযোগিতার আদেশ দিলেন। তিনি পরখ করে দেখতে চান গুরু শিষ্যের লড়াই। 

লড়াইয়ের নির্দিষ্ট দিন ঘনিয়ে এলো। খোলা ময়দান। সারি সারি দর্শক। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার অপেক্ষায় সবাই অস্থির হয়ে আছে। বাদশাহ বসে আছেন উঁচু একটা সামিয়ানার মধ্যে। 

ময়দানের একদিকে সুঠাম দেহের তরুন শিষ্য, অন্য দিকে বৃদ্ধ কুস্তিগীর। লড়াই শুরু হলো। দুজন দুজনে দিকে এগিয়ে এল। কোমড় বাঁকা করে একে অপরকে ধরতে চেষ্টা করল। চারদিকে তুমুল উত্তেজনা। ওস্তাদ লোকটি হঠাৎ ছেলেটির হাত ধরে ফেলল। মূহুর্তের মধ্যেই একটি অজানা কৌশলে আক্রমণ করল। দর্শক সারিতে পড়ে গেল হৈ চৈ, হুল্লোড়। সবাই অপেক্ষা করছে ছেলেটি কীভাবেই এই আক্রমণ পরাস্ত করবে! হাড্ডাহাড্ডি লড়াইই সবাই চায়। কিন্তু ছেলেটি তার ওস্তাদের আক্রমণের ধরণ একদমই বুঝছিল না। সে ক্ষণে ক্ষণে কাঁবু হয়ে যাচ্ছিল। এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে কয়েক মুহুর্ত পরেই ছেলেটি পরাস্ত ও কুপোকাত হলো। ধূলায় নিরুপায় শুয়ে থাকল সে। বৃদ্ধ ওস্তাদ তাকে এমন কৌশলে আটকিয়ে রেখেছেন যে, সে নড়তেই পারছিল না। লড়াই যে এত দ্রুত শেষ হবে কেউ ভাবেনি। সবাই হতাশ। জনগন ও বাদশাহ ছেলেটিকে তিরস্কার করতে লাগল।

লড়াই শেষে হতভম্ভ ছেলেটি তার ওস্তাদকে জিজ্ঞেস করল, আপনার এই অজানা কৌশল কোথা থেকে এল?  ওস্তাদ উত্তর দিল, আমি মোট ৩৬০ টি কৌশল জানি। তোমাকে শিখিয়েছি ৩৫৯ টি। একটি বাকি রেখেছিলাম। ছেলেটি বলল, কেন বাকি রেখেছিলেন?

ওস্তাদ বললেন, আমি তোমার অহংকারের ব্যাপারে আশংকা করছিলাম। এজন্য এই অনন্য কৌশলটি শিখাই নি। নাহলে তুমি আজ সবার সামনে আমার সম্মান বিনষ্ট করতে। এখন যথেষ্ঠ হয়েছে। 

                                               

 


 

Comments

    Please login to post comment. Login