Posts

নন ফিকশন

এসেম্বলি লাইন

September 4, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

52
View

এসেম্বলি লাইন



 

১৯০০ সালের শুরুর দিকে, গাড়ি ছিল এক বিশেষ এলিট শ্রেণীর জন্য। সে সময় গাড়ি তৈরি করতে বহু সময় এবং প্রচুর শ্রম লাগত, ফলে দামও ছিল আকাশছোঁয়া। হেনরি ফোর্ড ছিলেন একজন উদ্ভাবক, যিনি ভাবতেন, "কেন আমরা একটি গাড়ি তৈরি করি না– যা প্রতিটি মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকবে?" তার এই চিন্তাভাবনা থেকেই এসেছিল মূল্যবান আবিষ্কার- এসেম্বলি লাইন। 


 

তখনকার দিনে, একটি গাড়ি তৈরির জন্য (যন্ত্রাংশ তৈরি থেকে ফিটিং করতে) সাধারণত কয়েক মাস সময় লাগত। ক্লাসিকাল পদ্ধতিতে, পার্টস তৈরির পর যন্ত্রাংশগুলোকে মেঝেতে রাখা হতো। এরপর একটি একটি করে জুড়ে তৈরি করা হতো গাড়ি। 


 

অপরদিকে ফোর্ডের অ্যাসেম্বলি লাইন পদ্ধতির মূল ধারণাটি ছিল– গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়াকে  ছোট ছোট অংশে ভাগ করা, এবং নির্দিষ্ট কর্মী দিয়ে শুধু একটি নির্দিষ্ট অংশের কাজ করানো । কনভেয়র বেল্টে করে গাড়িটি ধারাবাহিকভাবে (বিভিন্ন দক্ষতার) কর্মীদের নিকট পৌঁছাতে থাকে।  কর্মীরা থাকেন আগে থেকেই প্রস্তুত। ফলে তারা নির্ধারিত অংশের পার্টস দ্রুত সংযোজন করে ফেলেন । গাড়ির প্রতিটি অংশ তৈরি ও সংযোজনের জন্য আলাদা কর্মী থাকত। কনভেয়র বেল্টে করে তাদের অংশ তাদের নিকট পৌঁছে যেত। কনভেয়র বেল্ট চলতে থাকত, আর শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ অংশ সংযোজন করতে থাকত। 
কনভেয়র বেল্টের এই চলমান সিস্টেম গাড়ি তৈরির সময়কে অনেক কমিয়ে দেয়, কারণ প্রতিটি অংশ আগের থেকে প্রস্তুত থাকত এবং কর্মীরা কোনও বিলম্ব ছাড়াই তাদের কাজ করতে পারত। প্রত্যেকের কাজ ছিল ভাগ করে দেয়া। যেমন ইঞ্জিন বসানো, টায়ার লাগানো, বা ডোর ফিটিং। একেকটি অংশের ওপর একেকটি বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ কর্মী কাজ করতে থাকেত। যা পরবর্তীতে একসাথে মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গাড়ি তৈরি হয়ে যায়। কর্মীরা পুরো প্রক্রিয়ার উপর দৃষ্টি না দিয়ে শুধুমাত্র তাদের নির্দিষ্ট কাজই পুনরাবৃত্তি করে, ফলে দিনে দিনে  তাদের দক্ষতা ও কাজের গতি অনেক গুনে বেড়ে যায়। প্রতিটি কর্মী তাদের নির্দিষ্ট কাজ বারবার করার মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠতেন, ভুলের হারও কমে যায় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর হতো। গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া যেমন দ্রুত হয়েছিল, তেমনি গাড়ির গুণগত মানও সমানভাবে উন্নত হয়েছিল।


 

এসেম্বলি লাইনের ব্যবহার ছিল শিল্প ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আগে যেখানে একটি গাড়ি সংযুক্তি ও তৈরিতে প্রায় ১২ ঘণ্টা লাগত, সেখানে এ সময় নেমে আসে ৩ ঘণ্টায়। উৎপাদন খরচও ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফোর্ডের মডেল টি গাড়ি, যা আগে মাত্র কিছু ধনী মানুষের নাগালের মধ্যে ছিল, এবার তা সাধারণ মানুষের জন্যও সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। গাড়ির দাম ১৯০৮ সালে ছিল ৮৫০ ডলার, যা ১৯১৪ সালের মধ্যে কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৯৫ ডলারে। অবশেষে গাড়ি কেনা মানুষের সাধ্যের মধ্যে চলে আসে। 

      


 

Comments

    Please login to post comment. Login