অনিরাপদ
কথিত আছে, একবার হযরত ঈসা (আ) একটি পথ ধরে চলছিলেন। পথে তিন ব্যক্তি তাঁর সহচর হলো। চলতে চলতে হঠাত এক জায়গায় তাদের চোখে পড়ল- দু’টি স্বর্ণের ইট। বালিতে পড়ে আছে। তিন ব্যক্তি সাথে সাথে ইট দু’খানা তুলে নিতে ছুটে যায়। হযরত ঈসা (আ) তাদেরকে ইটগুলো স্পর্শ করতে নিষেধ করেন, বলেন “এ দুটো স্বর্ণের ইট দ্বারা হয়তো আল্লাহ তাআলা তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। এ দু’টো ইট তোমাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করতে পারে।” কিন্তু লোকগুলো তাঁর উপদেশে কর্ণপাত করল না। তারা পরস্পর পরামর্শ করে একমত হলো যে, ইট দুটি তারা তুলে নেবে এবং ভেঙ্গে অথবা বিক্রি করে ভাগ করে নিবে। হযরত ঈসা (আ) তাদের এই অনড় মনোভাব বুঝতে পারলেন। তিনি বিরক্ত হলেন এবং তাদের ত্যাগ করে চলে গেলেন।
ইট দুটি নিয়ে লোক তিনটি অন্য পথ ধরল। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর তাদের প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়ে গেল। তারা তাদের একজনকে খাবার আনতে পাঠালো। খাবারের অপেক্ষায় বসে বাকি দুজন গল্প করে সময় কাটাচ্ছিল। নিজদের মধ্যে আলোচনার এক পর্যায়ে দুজন ফন্দী আঁটলো– তৃতীয় ব্যক্তি খাবার নিয়ে এলে একযোগে আক্রমণ করে তাকে খতম করে ফেলবে। ফলস্বরুপ ইট দুটি আর ভেঙ্গে ভাগ করতে হবে না। দুজনের প্রত্যেকে আস্ত একটা করে ইট পাবে। লোভ তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল । তারা ভুলে গেল একজন নবীর উপদেশ। অন্যায় চিন্তা করতে ভয় পেল না আল্লাহকে।
তৃতীয় ব্যক্তি বাজারে খাবার আনতে গিয়ে নিজের খাবার খেয়ে নিল। শয়তান তাকে বিশেষ একটি কুপ্ররোচনা দিতে লাগল। লোকটি অবশিষ্ট দুজনের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিল। বিষ খেয়ে দুজন মরবে। আর সে একাই দুটো ইট পেয়ে যাবে।
তৃতীয় ব্যক্তি খাবার নিয়ে ফিরে এল । সাথে সাথেই অপর দুই ব্যক্তি একযোগে আক্রমণ করে তাকে মারতে লাগলে । এক পর্যায়ে মেরেই ফেললো। লাশটা সরিয়ে রাখা হলো এক পাশে। পরম আনন্দে এবার তাদের খাদ্য গ্রহণের পালা। কিন্তু খেতে খেতেই তারা অনুভব করল বিষক্রিয়া । এক পর্যায়ে মৃত্যু তাদের উপর জয়ী হল।
পরদিন হযরত ঈসা (আ) ঐ এলাকায় ফিরে এলে দেখলেন, তিন ব্যক্তিই মরে পড়ে আছে। আর তাদের লাশের পাশেই জ্বল জ্বল করছিল স্বর্ণের দু’টো ইট।
আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় পাই,
তার পরেই ভয় পাই সেই মানুষকে যে আল্লাহকে মোটেই ভয় পায় না।
(শেখ সাদি রহমাতুল্লাহ আলেহ)