হাঙ্গেরিয়ান প্রযুক্তিবিদ ওরবান একটা নকশা নিয়ে এলো বাইজেন্টাইন রাজধানীতে। নকশাটি একটি যুগান্তকারী কামানের। যে কামান দিয়ে ৩০০ কেজি ওজনের গোলা নিক্ষেপ করা সম্ভব প্রায় দেড় কিলোমিটার পাল্লায়– দাবি ওরবানের। ওরবান তার এই প্রযুক্তির নকশা বেশ চড়া দামে বিক্রি করতে চাইল। চাইবেই বা না কেন? সেই জামানায় এই মানের কামান কারো কল্পনাতেও ছিল না।
কিন্তু বাইজেন্টাইন সম্রাট অরবানের নকশার মূল্য বুঝতে ব্যর্থ হলেন। তিনি সাফ জানালেন এত দামে তিনি একটি নকশা কিনতে চান না।
দরিদ্র প্রযুক্তিবিদ ওরবান উপায় না পেয়ে পথ ধরল উসমানী রাজধানীতে। তরুন সুলতান মুহাম্মাদের নিকট পৌঁছে তার নকশার ব্যাপারে জানালো । সুলতান নিজেও ছিলেন একজন প্রযুক্তিবিদ, বাইজেন্টাইন রাজধানী জয় করার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছিল তার লোকেরা। তিনি অরবানের নকশা ভালোমত পরীক্ষা করে দেখলেন এবং বুঝলেন এটি কাজ করবে। তিনি যথাযথ পারিশ্রমিক দিলেন অরবানকে।
দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আর মিস্ত্রীরা কাজে লেগে গেল মহা সমারোহে। তিন মাসের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল দানবাকৃতির কামান– ব্যাসিলিকা। নকশা রুপান্তরিত হল বাস্তবে।
উসমানী-বাইজেন্টাইন যুদ্ধে ব্যাসিলিকা স্থাপন করা হলো যথাযথ স্থানে। বেশ সময় নিয়ে প্রায় তিন’শ সেনা এই কামানকে গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করল। সুলতান “আতেশ (fire)” বলার সাথে সাথেই গর্জে উঠলে কামান। গগনবিদারি শব্দে উপস্থিত সেনাদের কানে তালা লাগার মত অবস্থা তৈরি হলো ।
তিন ঘন্টা পর পর থেমে থেমে গর্জে যেতে লাগল ব্যাসিলিকা।
অবশেষে ব্যাসিলিকার গোলাতেই ভেঙ্গে পড়ল সহস্র বছর ধরে শত হামলায় অক্ষত থাকা বাইজেন্টাইন রাজধানী কন্সটাইনটিনোপোলের পাহাড়সম দেয়াল। যা ছিল তিনটি স্তর বিশিষ্ট ও প্রায় ৬০ ফুট পুরু।
১৪৫৩ সালে তরুন সুলতান মুহাম্মাদ কন্সটাইনটিনোপোল বিজয় করলেন। একে পরিণত করেলেন নিজ সম্রাজ্যের রাজধানী ‘ইসলামবুলে’। কালের পরিক্রমায় তার নাম আজ- ইস্তানবুল। সুলতানের এই বিজয়ে সেই অস্ত্রই সাহায্য করেছিল, যার মূল্য তার শত্রুপক্ষ উপলব্ধি করতে পারে নি।
সফলতার বড় শত্রু হলো, জ্ঞানের স্বল্পতা