পঞ্জি স্কিম। যুগের পালাবদলে ক্ষণে ক্ষণে কত মানুষের নিঃস্ব হওয়ার উপাখ্যান!
নতুন নতুন বিনিয়োগকারীদের টাকা দিয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা পরিশোধ করে ব্যাবসা চালিয়ে নেয়া। পুরোনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা ও সাফল্য দেখিয়ে নতুন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষন করা। এভাবেই একটা সময় পর্যন্ত চলতে থাকে ব্যাবসার নামে ধোঁকা। এদের কৌশলটি খুব সহজ, কিন্তু সরল মানুষদের চোখে গোপন ।
পঞ্জি স্কিমের নামটি এসেছে চার্লস পঞ্জি নামক এক ব্যক্তির নাম থেকে, যে ১৯২০-এর দশকের গোড়ার দিকে এটি চালু করেছিল। তখনকার সময়ে বিভিন্ন দেশের ডাক বিভাগ আন্তর্জাতিক কুপনের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করত। এই কুপনের মুদ্রার বিনিময় মূল্য বিভিন্ন দেশে ওঠানামা করত। চার্লস পঞ্জি কুপনগুলি কিনে সেগুলোর সঙ্গে দামি ডাকটিকিট বিনিময় করে লাভ করতে শুরু করে। এর মাধ্যমে সে বেশ মুনাফা অর্জন করে। এক পর্যায়ে সে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে মানুষদের কুপন বিক্রির লাভজনক ব্যাবসা বোঝানো শুরু করে এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফার প্রলোভন দেখায়, এই ব্যাবসায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলে আস্থা তৈরি করে। তখন ব্যাংকগুলোতে ৫ শতাংশ বার্ষিক সুদ দেয়া হত। কিন্তু পঞ্জি তার প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ৪০-৫০ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাস দেয়!
প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা ঠিকভাবে দেওয়ায় পঞ্জির প্রতি মানুষের বিশ্বাস দৃঢ় হতে থাকে এবং তার স্কিমে বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। তবে, পঞ্জি প্রকৃতপক্ষে নতুন বিনিয়োগকারীদের থেকে নেওয়া টাকা পুরোনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা হিসেবে পরিশোধ করত, লাভ দেখিয়ে ।
এইভাবে ব্যবসা চালানোর পর, পঞ্জি মাত্র আট মাসে অসংখ্য মানুষের বিনিয়োগের টাকায় নিজের পকেটে দেড় কোটি ডলার ঢোকায়।
এক পর্যায়ে সংবাদমাধ্যমে তার প্রতারণা নিয়ে কিছু লেখালেখি হয়। মার্কিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত শুরু করে। তদন্তে পঞ্জির স্কিমের ধোঁকা প্রকাশিত হয়। তাকে গ্রেফতার করা হয়।
দেশে দেশে সময়ে সময়ে এরকম পঞ্জি স্কিমের কথা শোনা যায় বারবার। প্রতারকরা বরাবরই সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত, নিঃস্ব করে।
সব প্রতারকই শুরুতে সবসময় কিছু সত্য কথা বলে। যেমন চার্লস পঞ্জি বলেছিল তার কুপন বিক্রির ব্যাবসার কথা। প্রাথমিক ভাবে কিছু সত্য বলার উদ্দেশ্য শুধুই আস্থা অর্জন।
এরপরই স্কিমের লোকেরা তাদের ভিক্টিমদের অন্তরে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা শুরু করে । দুটি অস্ত্র- ভয় ও লোভ। ভয় দেখায় কীভাবে?
“কিছু বুদ্ধি না খাঁটালে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা যেমন আছে এমনই তো থাকবে, অমুক ব্যক্তি তো দ্রুত উন্নতি করছে, করবে; সবাই এখন বেশ চালাক। সম্পদ না বাড়ালে আপনার সামাজিক অবস্থান, সম্মান কি ঠিক থাকবে?”
ভয় দেখানোর পর দেখানো হয় বড় কিছুর স্বপ্ন, লোভ। প্রতারক যেন অনেক বড় কল্যাণকামী, এমনকি ভিক্টিমের নিজের থেকেও! আপনি এই এই করলে এত অল্প সময়ে এত ধনী হতে পারবেন। আমরা চাই আপনিও ধনি হন। লাভবান হন।
স্কিমের লোকদের দেখানো ভয় আর মিথ্যা স্বপ্নের কথা শুনে সাধারণ একটি মানুষ অস্থির হয় যায়। সে পঞ্জি স্কিমের লোকটির একরকম নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আহা কী চমৎকার লোক! কত ব্যাবসা বুঝেন! আমার কত কল্যাণকামী। (শয়তানও এমন কল্যাণকামী ছিল। সে আদম (আ) এর নিকট অত্যন্ত নেককার হিসেবে এসেছিল। আদম (আ) কে ভয় দেখিয়েছিল- জান্নাত থেকে তোমাকে বের করে দিবে। আর আমার দেখানো এই ফল খেলে কিন্তু তুমি একদম পারমানেন্ট হয়ে যাবে! )
মানুষের অন্তরে ভয় এবং লোভ প্রবেশ করিয়ে অন্তরকে অস্থির করে তুলা যায়। ফলে মানুষের বিবেচনাবোধ লোপ পায়। অস্থির অন্তর নিয়ে খেলা করা প্রতারকের জন্য খুবই সহজ।
অন্তরের অস্থিরতা থেকে সাবধান। প্রতারকের দেখানো মিথ্যা ভয় ও লোভ থেকে সাবধান!