Posts

নন ফিকশন

ঘুমের দুনিয়ায়

September 4, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

101
View

 ঘুমের দুনিয়ায়


 

Early to bed and early to rise makes a man healthy, wealthy and wise… কথগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এমনকি কেউ এখন রাতে দ্রুত ঘুমালে শহুরে সমাজে তাকে সেকেলে, গ্রাম্য মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাতের ঘুম বিনষ্ট হতে হতে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা সমূহ হুমকির মধ্যে পড়েছে । 


 

                                    আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম


 

 নামাজ কী থেকে উত্তম? 

 ঘুম থেকে উত্তম। 


 

বোঝা যায়– ঘুম অনেক উত্তম একটি বিষয়, নামাজের মত উত্তম বিষয়ের সাথে যার তুলনা করা হয়েছে। নামাজে আমাদের আত্মা বিশ্রাম পায়, পরিশুদ্ধ হয়, সতেজ হয়ে উঠে । আর ঘুমের মাধ্যমে শরীর বিশ্রাম পায়, পরিশুদ্ধ হয় ও সতেজতা ফিরে পায়।  “তুমি ঘুমাচ্ছ এটা উত্তম কাজ, কিন্তু ফযরের ওয়াক্ত হয়েছে এখন নামাজ আদায় করাই তুলনামুলক উত্তম।” ভোরে উচ্চস্বরে এই আহ্বান প্রতিটি মানুষের উদ্দেশ্যে করা হয়। 


 

রাত-দিনের আবর্তন বিশ্বজাগতিক নীতির খুব স্পষ্ট একটি নিদর্শন। দিনের আলোর উপর রাত পর্দা টেনে দেয়। শরীর এই অন্ধকারের আহ্বানে সাড়া দেয়,  বিশ্রামের উপযোগী সময় চলে এসেছে! এরপরে দিন এসে রাতের পর্দা সরিয়ে দেয়, আলোকিত হয়ে যায় সবকিছু। আলোর স্পর্শ চোখ, ত্বক হয়ে পুরো শরীরকে উদ্দীপিত করে তোলে। কাজের সময় আগত!

 

আমাদের শরীর-মস্তিষ্কের মনোদৈহিক যে প্রক্রিয়াসমূহ আমাদের সবকিছুকে পরিচালিত করে– তা দিন-রাত ও আলো-অন্ধকারের প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটাই আল্লাহর বিশ্বজনীন ও সনাতন নিয়ম । তাই ঘুম-বিশ্রাম-কাজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আমাদের অন্ত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মেনে চলা উচিত। যদি মানতে না পারি তাহলে ধীরে ধীরে জীবনের সবকিছুর ভারসাম্য নষ্ট হবে, শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো ঠিক মত কাজ করবে না, ফলে শারীরিক-মানসিক নানা অসুস্থ্যতা জন্ম নেবে। 


 

রাতের প্রথম অংশের ঘুমে মস্তিষ্ক ও শরীরের বিশ্রামের চাহিদা খুব দ্রুত পূর্ণ হয়। রাত অর্ধেক পেরিয়ে ঘুম বা দিনের ঘুমে শরীর শুধু অসার হয়েই পড়ে থাকে, শরীরের ঘুমের চাহিদা পূরণ হয় না । রাতে না ঘুমানো সিংহভাগ মানুষই কিছু না কিছু মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যায় ভোগে। ধৈর্যহীনতা, অসহিষ্ণুতা, মন্দ আচরণের জন্য অন্যতম প্রভাবক অপূর্ণ, অসময়ের ঘুম। 


 

রাতের সুন্দর ঘুমের পর ভোরে মস্তিষ্ক সবচেয়ে কার্যকর থাকে। কারণ মস্তিষ্কের  যে অংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য কাজ করে– তা ভোরে সবচেয়ে সক্রিয় হয়। ভোরে যত সহজেই কাজের সমাধান পাওয়া যায়, অন্য সময়ে একই সমাধান পেতে অনেক বেশি সময় ও পরিশ্রম প্রয়োজন হয়। 


 

অপর্যাপ্ত ও অসময়ের ঘুমের ফলে একজন মানুষের কাজ হয় আধাখেচড়া, মানহীন। ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় অতিরিক্ত ব্যস্ততা, ক্লান্তিকর কর্মজীবন। একঘেয়ে, বরকতহীন ক্লান্তিকর জীবনের পেছনের রহস্য হলো এটিই। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর দেয়া রাতের অন্ধকারের পর্দা আর দিনের আলোর কল্যাণ ও উদ্দেশ্য থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে শুধু অবুঝ লোকেরাই। 



 

আল্লাহ তাআলা ঘুমের মাধ্যমে মানবজাতিকে একরকম বন্দি রেখেছেন– যেন নিয়ম লঙ্ঘন করলেও মানুষ সীমার মধ্যেই থাকে । একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলো, সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু কী?

উত্তরে তিনি বললেন, পাহাড় সবচেয়ে শক্তিশালী।

  –পাহাড়ের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই?

  –আছে। লোহা পাহাড়ের চেয়ে শক্তিশালী। লোহার কোদাল দিয়ে পাহাড়কে কেটে সরিয়ে ফেলা সম্ভব।

  –লোহার চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই?

  –হ্যাঁ, তাও আছে। আগুন লোহাকে গলিয়ে ফেলে।

  –তাহলে আগুন সবচেয়ে শক্তিশালী?

  –পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়, তাই পানিই বেশি শক্তিশালী হবে।

  –পানি? পানিকে পরাভূত করে এমন কিছু নেই?

 –না, নেই।  কিন্তু মেঘ! মেঘ পানিকে ধারণ করে থাকে । মেঘের শক্তিই বেশি।

  –আশ্চর্য!

  –হ্যাঁ, তবে মেঘের চেয়ে শক্তিশালী হলো বাতাস। বাতাস মেঘকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়।

   –ঠিক! তবে বাতাসই সবচেয়ে শক্তিশালী।

   –এই বাতাসকে একটি মানুষ সামান্য কাপড়ের বাঁধা দিয়েই আটকিয়ে ফেলে!

   –মানুষ!

   –হুম। মানুষ।

   –মানুষের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই?

   –আছে।

   –কী সেটা ?

   –ঘুম। ঘুম একজন বীরপুরুষকেও কাবু করে ফেলে, অসার বানিয়ে রাখে। 


 

ঘুম মানুষের দূর্বলতার একটি নিদর্শন। আবার সুস্থ্য ও সফল মানুষ হয়ে উঠতে ঘুমই সবলতার কারণ। 



 

                      জীবনের সবকিছুর জন্য  ঘুম মূল্যবান একটি বিনিয়োগ, 

                  এই বিনিয়োগ করতে হয় উপযুক্ত সময়ে ও উপযুক্ত পরিমাণে




 

                                            


 

Comments

    Please login to post comment. Login