ভূমিকা
মানবসমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও অসহায় শ্রেণির মধ্যে অন্যতম হলো এতিম। জন্মের পর একজন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য যেমন মায়ের স্নেহ, বাবার সুরক্ষা প্রয়োজন, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের সহানুভূতিও অপরিহার্য। কিন্তু যাদের বাবা-মা নেই, তারা হয়ে যায় এতিম। এতিম শিশুরা আমাদের সমাজে বিশেষ যত্ন ও সহানুভূতির দাবিদার। ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু—সব ধর্মেই এতিমদের প্রতি দয়া ও দায়িত্ববোধের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এতিমের সংজ্ঞা
“এতিম” শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো—যে শিশু বাবাহীন হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে বলা হয়, ১৮ বছরের নিচে যে শিশু পিতামাতার একজন বা উভয়কে হারায়, তাকেই এতিম বলা হয়। তবে প্রকৃত অর্থে এতিম শুধু বাবা-মা হারানো নয়, সমাজে অভিভাবকবিহীন অসহায় জীবনকেই বোঝায়।
এতিমের জীবনে কষ্ট
স্নেহের অভাব: মায়ের আদর ও বাবার ভালোবাসা ছাড়া একটি শিশু একাকিত্বে ভোগে।
শিক্ষার অভাব: আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তারা বিদ্যালয়ে পড়তে পারে না।
সামাজিক অবহেলা: অনেক সময় সমাজের লোকজন এতিমদের গুরুত্ব দেয় না।
মানসিক যন্ত্রণা: ভালোবাসাহীন পরিবেশ তাদের মনে কষ্ট জমায়, তারা আত্মবিশ্বাস হারায়।
অর্থনৈতিক সমস্যা: কাজ না থাকায় বা উপার্জনের পথ না থাকায় তারা দারিদ্র্যের শিকার হয়।
ইসলাম ও এতিমের মর্যাদা
ইসলামে এতিমদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন—
“এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।”
রাসূল (স.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি এতিমকে নিজের কাছে রাখে, আমি কিয়ামতের দিন জান্নাতে তার সাথে থাকবো।”
অতএব, এতিমদের যত্ন নেওয়া শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি ধর্মীয় কর্তব্যও।
সমাজের দায়িত্ব
শিক্ষার সুযোগ: এতিম শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও বৃত্তি দেওয়া উচিত।
আবাসনের ব্যবস্থা: এতিমখানা বা অনাথ আশ্রম স্থাপন করতে হবে।
স্নেহ-মমতা: সমাজের প্রতিটি পরিবার যদি অন্তত একজন এতিমকে সাহায্য করে, তাহলে আর কোনো শিশু অভাবী থাকবে না।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব: সরকারকে আইন করে এতিমদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ইতিহাসে এতিমদের অবদান
অনেক বড় মানুষ এতিম হয়েও সমাজে অবদান রেখেছেন।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ছোটবেলায় এতিম ছিলেন।
বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানী, কবি ও নেতা এতিম হয়েও ইতিহাস গড়েছেন।
এতে বোঝা যায়, সঠিক যত্ন ও দিকনির্দেশনা পেলে এতিমও মহৎ মানুষ হতে পারে।
উপসংহার
এতিম শুধু অসহায় শিশু নয়, বরং তারা আমাদের দায়িত্ব। যদি আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই, তাহলে তারা ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিতে পারবে। তাই আসুন—আমরা প্রতিজ্ঞা করি, এতিমদের প্রতি দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতির হাত প্রসারিত করবো।