পোস্টস

সত্তাশ্রয়ী

বাইপোলার ডিজঅর্ডার

২ জুন ২০২৪

কাজী যুবাইর মাহমুদ

মধ্যাহ্ন দুপুরের দুদিকে দুলছে আবছা আলোছায়া, অমীমাংসিত আলোরেখার পথ ধরে দিকচিহ্নহীন উড়ে চলছে সন্ধ্যার দলছুট পরিযায়ী পাখি। যেন নিয়তি তাড়া করে তুলছে তার ডানা। যেন দূর সমুদ্দুর কোন এক ঘুমন্ত বিভোর অন্ধকারে জেগে ওঠে তার ত্রিমাত্রিক সত্তা। দাম্ভিকতার ভার গলে গেলে খুলে যায় অনুভবের সকল দুয়ার। বোধ ও চৈতন্যের কোথাও হয়তোবা বেজে ওঠে স্বর্গীয় সুর, যে সুর হতে আবিষ্কৃত পৃথিবীর সকল মায়া। মীন ও মায়ার কাছে পরাজিত দম্ভ সমর্পিত হয়ে বশ্যতা মেনে নেয়; অবলীলায়। কোথাও প্রতীক্ষারত কোনো শান্তসবুজের চারিধার ভীড় করে ঝরনার নুনজল। অবশ বৃক্ষের মতো তালভাঙা ঢেউয়ের মতো গোলাপের শবদেহ আমি তুলে আনি দুর্ব্যোধ্য মায়াজালে। মরা রোদের ঘোর যত ভাঙনের মলাটে ভর করে থাকে তাকে আমি ছুঁয়ে দিই সামগ্রিক অনুযোগে। ঘুমের ভিতর ডুবে যাচ্ছে যে চোখ, তন্দ্রাচ্ছন্ন সে চোখের ভিতর ঘুরতে থাকে আলস্য দুপুরের সাধ। বিস্মৃতির পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে জেগে ওঠে প্রভূত সংরাগ। অবিন্যস্ত সুতোয় বোনা বুনোফুলের দুল থেকে বেরিয়ে আসা টেক্সচারে তুলে নাও জাগতিক বিন্যস্তবাসনা। ভীষণ লোভ বহুমাত্রিক এই বেঁচে থাকার, যেন তারে ধরি ধরি তবু অচেনা অন্ধকারে গভীর সন্তাপে পুড়ে যায় অধরা অভিলাষ। সে যেন ইচ্ছের দিগভ্রান্ত ভ্রমনে কোথায় মিলে যায় কোন বনে কোন অজানা অদেখায়। বিস্মৃতির অতলে কত রূপ ডুব দেয় কত প্রতচ্ছবি দোল খায় মোহের ইন্দ্রজালে। বিষণ্নবিকেলের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ে অশ্বথের ছায়া। সন্নিকটে এগোতে থাকে তার লতাপাতা, দ্যোদুল্যমান দূরত্বের ছায়াপথ ভারি হতে হতে জমে যায় নিঃশব্দের পাহাড়। অকথিত শূন্যতার স্থীর পাহাড় স্পর্শ করে যায় সমস্ত অবসাদ। নিঃসঙ্গ নদীতে ডুব দিয়ে খুঁজে চলি নিজেকেই, চোরাবালির ফাঁদে পা পড়ে যাবার ভয়ে কেবল মিশে থাকি সম্মোহিত রাত্রির পৃষ্ঠাজুড়ে। সেখানে ভুল করে উড়ে আসে ডাহুকের ডানা। কোথাও হয়ত বেজে চলছে স্রোতের ধারা, বেসুরো তালে, আনমনে, অন্য কোন ধূসর সন্ধ্যাবেলায়; অস্পষ্ট বোধ বুঝিবা ছুঁয়ে দেয় অবিনাশী সত্যের শরীর। ব্যক্তিগত অনাবশ্যক বিষয় হয়ে ওঠে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, তাতে ঘুরপাক খেতে খেতে যেন দুলে পড়ে ক্লান্তির পা জোড়া। ভাবা যায় স্বেচ্ছাচারিতা; তবু এর ভিতর নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে সামগ্রিক অর্থবহ সকল সত্য। বৈশিষ্টের খোলসে লুকিয়ে থাকা বিলাসীতার অব্যক্ত হাহাকারে ভারি হতে থাকে শব্দহীন নিঃশ্বাস। আমি শুনতে পাই প্রতিটা নিঃশ্বাসের সে ভাষা। তার বাক্যের কারুকার্য, শব্দগঠন হতে প্রকট হয়ে ধরা দেয়া বাকহীন নির্বোধ অবাধ্যতা। রাত্রির যেকোনো পৃষ্ঠাতে খুঁজে পাবে অনাগত ভাঙনের সরুপথ। তবু অনাস্থার দুয়ার ভেদ করে ঢোকা যায় বিশ্বস্ত সরণিতে; যেখানে সমবেত গুঞ্জনে ভুল ভেঙে গেলে নিথর অস্থিরতার চোরাবালিতে ডুব দেয় দৈহিক চেতনা। শুধু বিপন্ন বিস্ময়ে চেয়ে থাকা চলমান স্রোতের ধারা, এইপাড় থেকে ওইপাড়ে বয়ে যায় নিজের হিসেব নিজস্ব সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত অহংকার। ঘুমরাতের উড়ন্ত ডানায় ওড়ে চলা একান্ত ইচ্ছেভ্রমন খুঁজে নেয় কল্পিত নরকের উদ্যান। যদিওবা, সেখানে আমিহীন সকল অস্তিত্ব অনুপস্থিতির সাড়া দিয়ে থাকে। যদিওবা, সমস্বরে তাল ধরে বিদ্বেষের বিকৃত বেসুর কোরাস। যদিওবা, ব্যর্থতার সুড়ঙ্গে মিলে যায় আমৃত্যু বেঁচে থাকার সাধ। যা হতে পারতো থেমে যাওয়া নদীর মতো আমাদের প্রার্থনার আরাধ্য ঠিকানা। ক্রন্দরত রাত্রির বুক থেকে তুলে আনা বকুল সেখানে হয়তবা ছড়াতে পারতো তার নিজস্ব সুবাস। আর জানি, এ সকলই কেবল এক অদেখা  অভিযান, এ কেবল দিগন্তরেখার পথ ধরে নিসঙ্গ প্রান্তরে হেঁটে যাওয়া; ঘোলাটে দৃষ্টিতে শুধু চেয়ে থাকা অপলক। অবিমৃষ্য শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা যেন অনুভূতিশূন্য হয়ে ঝুলে থাকে অনুভবের দেয়ালজুড়ে।