Posts

প্রবন্ধ

দ্বীনের আলো

September 6, 2025

Chameli Akter

118
View

'নিয়মিত আমল: ছোট হলেও আল্লাহর কাছে প্রিয়'

অনেক মানুষ আছেন, যারা দ্বীন পালনের শুরুতে প্রবল উদ্যম নিয়ে প্রায় সব ধরনের ইবাদত শুরু করেন। কিন্তু একপর্যায়ে ভার বহন করতে না পেরে ক্লান্ত- শ্রান্ত হয়ে ইবাদত ছেড়ে দেন এবং পূর্বাবস্থায় ফিরে যান।

কখনও কখনও তাদের ঈমানের অবস্থা পূর্বাবস্থার চেয়েও শোচনীয় হয়ে যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রতি কোনো ভয় থাকে না, থাকে না কোনো প্রকার ভালবাসাও। আবার অনেকে ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারেন না। ফলে ইবাদতের পূর্ণ স্বাদও পান না।

অনেকে দ্বীনে নতুন প্রবেশ করে মুস্তাহাব বিষয়কে ওয়াজিব পর্যায়ের মনে করে ফেলেন, মুবাহ বিষয়কে হারাম মনে করে ফেলেন। এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আসতে পারে দ্বীনের সর্বোচ্চ স্তর অর্থাৎ ইহসানের স্তরে পোঁছে গেলে। কিন্তু তার জন্য দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এগুলো জেনে বুঝে আমল করা প্রাথমিক স্তরের মুসলিমদের জন্য কিছুটা কঠিন।

আবার অনেকে শুনে শুনে হয়তো এমন অনেক আমল করে ফেলেন যা করতে আদৌ বলা হয়নি।

এগুলো খুবই দুঃখজনক ও সম্পূর্ণ ভুল। ইসলাম কখনও এভাবে বাড়াবাড়ি করতে বলে না, যেমন বলে না ছেড়ে দিতে। ইসলাম সহজ ও মধ্যমপন্থার একটি দ্বীন। কখনও অতিরিক্ত আমলের চাপ আমাদের কাছে দুঃসাধ্য মনে হবে, ইসলামে এমন কিছু নেই। আমাদেরকে এটা মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত আমল আমাদের জন্য যেন এতটা ভারী হয়ে না যায় যে, ফরয আমলে ও আমাদের অলসতা চলে আসবে।

যার যতটুকু সাধ্য আছে, সে যদি পরিপূর্ণ ইখলাস নিয়ে আমল করে, তবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেটাই কবুল করবেন ইনশা আল্লাহ। ইখলাস মানে শুধুমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই আমল করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সবার সাধ্য জানেন। তাই যার আমলে যত বেশি ইখলাস থাকবে, তার আমল কবুল হওয়ার সম্ভাবনা ও ততো বেশি হবে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহিমাহুল্লাহ) ইখলাস পূর্ণ ছোট আমলের ব্যাপ্তি বুঝিয়েছেন এভাবে,

"কখনও কখনও একটি ছোট আমলে এত ইখলাস ও সততা থাকে যে, এর মাধ্যমে অনেক বড় বড় গুনাহ মাফ হয়ে যায়।"

অতিরিক্ত ইবাদত করতে গিয়ে কখনোই শারীরিক, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা ইসলামে নেই। নেই কোন লোক দেখানো আমলের স্হান ও। সূরা আল- বাকারাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বুঝিয়েছেন তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের উপর কোন ধরনের বোঝা চাপিয়ে দেন না। যে যতটুকু কাজ করতে পারবে সে ততটুকুরই ফল পাবে। বরং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রাহমায় সৎকর্মশীলদের পুরস্কার আরো বহুগুণে বর্ধিত করা হবে।


কোন আমল আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য ইখলাস ও ধারাবাহিকতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ছোট আমল হলেও যদি নিয়মিতভাবে ইখলাসপূর্ণ আমল আমরা করতে পারি, তবে সেগুলো আল্লাহর কাছে অনেক বেশি প্রিয় হবে।

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর নিকট আসেন, তাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইনি কে?’ ‘আয়িশাহ (রাযি.) উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সালাতের উল্লেখ করলেন।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ‘থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততোটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাআলা ততোক্ষণ পর্যন্ত সওয়াব দিতে বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আমল সেটাই, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে।"

[মুসলিম]

কত সরল আর সহজ পথ!

শাইখ আহমাদ মূসা জিবরীল (হাফি:) বলেন,

"ইবাদত করা হলো নতুন গাড়ি কেনার মতো। দোকানদার আপনাকে বলে দেবে - আস্তে আস্তে ইঞ্জিনের জড়তা কাটাতে। শুরুতেই সত্তর মাইল বেগে চালাতে শুরু করলে হবে না। আস্তে আস্তে শুরু করতে হবে। এক দিনে অনেক ইবাদত করে, পরদিন থেকে তা ছেড়ে দেওয়ার চাইতে, নিয়মিত অল্প অল্প ইবাদত করাই উত্তম।"

তাই ফরয আমলের পাশাপাশি আমরা এমন কিছু নফল আমল করার চেষ্টা করতে পারি, যা নিয়মিত করতে পারবো। যেটা আমাদের জন্য তেমন কঠিন কাজ হবে না।

কারো জন্য হতে পারে সেটা শেষ রাতের দুই রাকআত সালাত, কারো জন্য দিনের প্রথম প্রহরের দুই রাকআত সালাত। কারো জন্য হতে পারে কুরআন তিলাওয়াত। আবার হতে পারে প্রতি ওয়াক্ত ফরয ও সুন্নাত সালাতের পরে দুই রাকআত নফল সালাত।

এছাড়া হতে পারে যিকির, ইস্তিগফার, সাদাকা বা যেকোনো ভালো কাজ। এভাবেই, যার যার সুবিধা অনুযায়ী আমরা সবাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য কিছু নফল আমল করতে পারি।

ইখলাস ও নিয়মিত আমলের মর্যাদা উপলব্ধি করে
আমাদেরকে অবশ্যই ইখলাসপূর্ণ নিয়মিত আমল করার
চেষ্টা করতে হবে। হোক তা বড়, হোক তা ছোট।

অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের আমলের বিভিন্ন ফযিলত রয়েছে। রয়েছে সেজন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও। তবে একেবারেই পথ বিচ্যুত হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার চেয়ে আলোর পথ আঁকড়ে ধরে থাকাটাই তো উত্তম।

দ্রুত চলে থেমে যাওয়ার চেয়ে ধৈর্যসহ ধীরে চলে গন্তব্যে পৌঁছানো ভালো নয় কি?

পথচলায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে আমাদের সবার চিরস্থায়ী গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন, ইনশা আল্লাহ।

Light Of Deen

Comments

    Please login to post comment. Login