Part:1
********
"I can see you, from behind
'you can hear me,in your mind'
'Run so fast as, you can go'
Time will catch you, before you know "
"লিরিক্সটা পর পর দুবার শোনার পর বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে "এলেন "। এত রাতে জঙ্গলে কাজ বাদে গান কে শুনছে,। একেতো ভুতুড়ে জঙ্গল চারিদিকে অন্ধকার আচ্ছন্ন নিস্তব্ধ পরিবেশ। মাঝে মাঝে গাছের ডাল ভেঙে পড়াবশব্দও শোনা যাচ্ছে।চারিদিক নিস্তব্ধ থাকায়া তা বেশ জোরালো শোনাচ্ছে। নিশ্চয়ই কিছু বুঝতে পারছেন না। তাই পরিচয়টা দেওয়া যাক।এলেন হলো রোমানিয়ার একজন নামকরা ইঞ্জিনিয়ার। যার দরুন এলেনের গ্রুপকে একটি প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছিল । যা ছিল "রোমানিয়ার ট্রাইংগেল ফরেস্টের" ভেতরের মাঝ বরাবর দর্শনার্থীদের জন্য রিসোর্ট তৈরি করা। আজকে তারই সেম্পেল কালেক্ট করতে এসেছিল তারা। তবে জঙ্গলের ভেতরে থাকার কারণে সময়ের অবস্থান বুঝতে পারা যাচ্ছিল, আর চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসার ফলে তারা সিদ্ধান্ত নেয়।আজকের রাতটা তারা এই জঙ্গলে কাটাবে এবং সকালে কোম্পানিতে ইনফর্ম করবে এবং কাজ শুরু করবে। এলেন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটু দূরে আলাদা হয়ে যায় সিগন্যাল ঠিকমতো পাচ্ছিল না । তবে কথার মাঝে এরকম গানের লিরিক্স শুনে মেজাজটা একটু চটে যায়, একে তো কোন ভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না তার ওপর এই গান। গানের উৎসব খুঁজতে তিনি পেছনে তাকান। তবে পেছনে কাউকে না দেখে তিনি আবার ফোনে মনোযোগী হন। তখনই আবার সেই একই গান শোনা যায়। তবে এখন তা দূরে নয় বরঞ্চ অনেকটাই কাছে এবং জোরালো শোনাচ্ছিল । এতে শুরুতে কোন কিছু না মনে হলেও এখন যেন কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে অ্যালেনের। একেতো দম বন্ধ কর পরিবেশ তার মধ্যে আশেপাশে কেউ নেই সে একা।
তবে সে আর ভাবতে পারল না তার আগে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাক্ষী হল তার দুচোখ। পিছন ঘুরতে দেখা মিলল একটি বাচ্চা মেয়ের জামাটা সাদা তবে নোংরা,ঝড়ো হাওয়ায় চুলগুলো উঠছে এলোমেলো ভাবে মেয়েটি উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়ানো। এলেন ভেবেছিল হয়তো বা মেয়েটি হারিয়ে গেছে। তাই সে তাকে ডাক দেয় উত্তরের আশায়,
—এই মেয়ে তুমি এত রাতে এখানে কি করছো? তুমি একা কেন তোমার পরিবারের লোক কোথায়?
"তবে কোন উত্তর আসে না, একটু থেমে আবার,"
—তুমি কি জঙ্গলে হারিয়ে গেছো।তাহলে আমাকে বলো আমি তোমাকে তোমার বাড়ি পৌছে দিবো।
"এবার উত্তর এলো অপর পাশ থেকে, গলাটা অত্যন্ত শান্ত,তবে ভারী কন্ঠে বলল "
—আমার বাড়ি এখানেই একটু সামনে আগালেই আমার বাড়ি।
"তাই বলে সামনের দিকে হাতে দিলো। এলেন আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।এত রাতে গভীর জঙ্গলে বাচ্চা মেয়েটি এলো কিভাবে। সে বুঝতে পারল না এই জঙ্গলে কারো বাড়ি আদো হতে পারে।তার তো তা জানা ছিল না।বাচ্চাটার ভেতর ছিটে ফোঁটা ভয়ও দেখতে পাইনি সে। যেখানে তাদের মত বড় বড় মানুষ এই জঙ্গল আসতে ভয় পায়। সেখানেই বাচ্চা মেয়েটি বলছি এখানে তার বাড়ি। আর কোন ভয়ের লেস মাত্র নেই তার চোখে মুখে। তবে সে আর ভাবলো না বাচ্চাটিকে চলে যেতে দেখে পিছু ডাকলো
—এই মেয়ে দাঁড়াও
—এই মেয়ে
—একা একা কোথায় যাচ্ছ জঙ্গলের ভেতর? দাঁড়াও...
"ডাকতে ডাকতে পিছনে এলো এলেন মেয়েটির কিছুটা সামনে যেতেই তা যেন আরো গভীর হয়ে উঠলো পুরো জঙ্গল। এখন যেন নিজের শরীর ও দেখতে পাচ্ছে না এমন এক পরিস্থিতি। তবে হাতে থাকা স্বল্প আলোর টর্চের সাহায্য কিছুটা দেখা যাচ্ছে চারিপাশ। হঠাৎই যেন মনে হলো তার কাধটা ভিজে যাচ্ছে।যেন বারবার কিছুর
উষ্ণ ফোটা পড়ছে তার গায়ে। এতক্ষণ মালুম না হলেও এখন বুঝতে পারছি তার গাটা ভিজে স্যাঁঁটসেতে হয়ে গেছে। দৃষ্টি সামনে থেকে সরিয়ে কাধের দিকে তাকালো পরপর হাত রাখল সেই জায়গায়। হাত সামনে আনতে রীতিমতো চোখ বড় বড় হয়ে গেল এলিনের। এত রক্ত তবে এই রক্ত এলো কোথা থেকে তার গায়ে।রক্তের উৎস খুঁজতে উপরে তাকাতেই যেন শ্বাস আটকে গেল তার। একি দেখছে সে গাছের উপরে ঝুলে আছে অসংখ্য লাশ এ লাশগুলো অন্য কারো নয় সহকর্মীদের। এসব দেখে ভয় তোমাকে আসছে তাই রাখি পরান পাখি উড়ে যাবে কাছে থেকে। ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকালো মেয়েটিকে নিয়ে পালানোর উদ্দেশ্যে। তবে কই কোন মেয়েই তার সামনে নেই কোথায় গেলে বাচ্চাটা এ অন্ধকারের মাঝে কোথায় খুজবে সে। ভয়ে কারণে অনেক আগেই হাতে থাকা টর্চলাইটটি পড়ে আলো বন্ধ হয়ে গেছে। তখন সে অনুভব করলেও পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয় পাচ্ছে ভিশন ভয় পাচ্ছি তবু নিজের মনে সাহস দিয়ে পিছন ফিরে তাকায়,দেখতে পাই বাচ্চা মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে এক হাত বাড়িয়ে। তার প্রাণে যেন প্রাণ ফিরে আসে। সে আর কিছু না ভেবেই বাঁচা মেয়েদের হাত ধরে পালাতে চায়। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে এত দৌড়িয়ে এক কদম এগোতে পারেনি। হলেও তাই সে দেখতে পেল এতক্ষণ যাবৎ সে একই জায়গায় দৌড়াচ্ছে এগোতে পারিনি এখান থেকে কিছু একটা শক্ত করে ধরে আছে তাকে।তবে তার জানামতে সে বাচ্চা মেয়েটির হাত ধরেছিল। তাহলে তার হাত এত শক্ত করে ধরলেই বা কে এত শক্ত করে কিভাবে হাত ধরতে পারে। মনে হচ্ছে হাতটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। এখন যেন ভয় তাকে আরো ঘিরে ধরল তবে সে কি কোন মানুষ নয়। ভয়ে একটি শুকনো ঠুক গিললো।পিছন ফিরে তাকাতে কিছু একটা তার কলা চেপে ধরল শক্ত হাতে হাতের বড় বড় নখগুলো গিয়ে বিধলো তার নরম চামড়া ভেদ করে।তার সামনে কোন মানুষ হয় বরং নরও পিচাশ দাঁড়িয়ে আছে।চুলগুলো উড়ছে মুখটা ফেকসে একদম রক্ত শুন্য মুখে অসংখ্য কাটা, চোখের কোটরের ভিতরে কোন মুনি নেই,তবে সেখানে কেমন যেন রক্ত পড়ছে দেখে এমন লাগছে।এমন বিভাস্য মুখ দেখে এলেন তো মানও সেখানেই ফ্রিজ হয়ে গেছে ভয়ে কথা বলতে পারছি না আটকে আসছে নিঃশ্বাসগুলো। অনেক মোচা মুচরি পর কোনমতে তার হাত ছাড়িয়ে পালাতে লাগে। এই অন্ধকারে দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় জঙ্গলের শেষ মাথায় চলে এসেছে আর কিছুটা এগোলেই হাইওয়ে এরকম সময় পিছন থেকে ভেসে এলো আবারো সেই গানের দুই লাইন.....
"Run so fast as you can go
time will catch you before you know "
তখনই হঠাৎ হোঁচট খেয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে এলেন। এতে করে তার হাত পা কেটেছিলে যায় শক্ত ডালপালার ঘর্ষণে। যখন উঠতে যাবে তখনই আচমকা তার পা টেনে হিচরে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে চলে যায় এক টানে।তারপরে বুড়ো জঙ্গল নিস্তব্ধ কোথাও কোন শব্দ নেই। তারপর মুহূর্তেই গগন বিতারিনি চিৎকার শোনা যায়। তারপর আবার নিশ্চুপ হয়ে যায় পুরো জঙ্গল।
************************************************
" আরিয়ান –হেই গাইস আমার প্রজেক্ট এর লিস্ট পেয়ে গেছি।
"আয়ান– ভাই এত লেট হল কেন?অনেক ভিড় ছিল নাকি?
"আরিয়ান–তেমন কিছু না। প্রফেসর কেবিনে ডেকেছিল।
"রিক– আরে বাদ দে তো কি প্রজেক্ট দিয়েছি সেটা বল, আই এম সো এক্সাইটেড ফর দিস। (আগ্রহ নিয়ে বলে সে)
"রুচি–হুম। এবার বল কি প্রজেক্ট পেয়েছি আমরা?
"আরিয়ান– একটা মিশরের উপর রিসার্চ যার জন্য আমাদের ইজিপ্ট যেতে হবে।
"রেহা–কি ইজিপ্ট! আমি ইজিপ্ট যাব না। ইটস টু ডেঞ্জারাস ফর মার স্কিন। দেয়ার টেম্পারেচার ভেরি হাই।
"আয়ান –রেহা তুই চুপ করবি। অর্ধেক কথা শুনে কান্নাকাটি লাগিয়ে দিয়েছিস, দু নাম্বার অপশনটা তো শোন।
"রিক–তুই কিসের অপেক্ষা করছিস,বল পরে প্রজেক্টটা কি? (আরিয়ান এর উদ্দেশ্যে কথাটি বলে রিক।আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে সম্মতিতে।তারপর বলতে শুরু করে)
"আরিয়ান –পরেরটা হল প্যারা নরমাল একটিভিটিস রিসার্চ। যেটার জন্য আমাদের "রোমানিয়ার বাইমুডা ট্রায়াঙ্গেল ফরেস্টে" যেতে হবে।
(পিছন থেকে লুসি, রেহান একসাথে বলে ওঠে এটাই সিলেক্ট করা যাক। নিউ অ্যাডভেঞ্চার করা যাবে।)
★চলুন এবার এদের সম্পর্ক ও পরিচয় জানা যাক। আরিয়ান, লুসি, আয়ান, রুচি,রেহা,রিক,রেহান আর আনায়া এরা হলো বেস্ট ফ্রেন্ড। আমেরিকায় আসার পর একই ইউনিভার্সিটি তে এডমিশন নেই এই ৮জন। সবাই বাঙালি এবং সেম ক্লাসের। আর এখন বেস্ট ফ্রেন্ড অফ দ্য ইউনিভার্সিটি। যারা ইউনিভার্সিটি তাদের ফ্রেন্ডশিপ সম্পর্কে জানে।তারা একে অপরের জন্য অনেকটা বেশি পসেসিফ।এদের মধ্যে রুচি, রিক হলো জমজ ভাই বোন। তাছাড়া আরিয়ান,রুচি আর আয়ান,লুসি রিলেশনে আছে।এখন গল্পে ফেরা যাক★
"তবে তাদের সাথে সবার সহমত হতে পারত না। কেউ বলছে এ প্রজেক্ট ভালো,আবার কেউ বলছে ওই প্রজেক্ট ভালো।প্যারা নরমালের বিপক্ষে রুচি, আয়ান।আর অপজিটে লুসি,রেহান, রেহা।পেছন থেকে আনায়া বলে হারিয়ানের উদ্দেশ্যে.....
"আনায়া –কিরে তুই চুপ করে আছিস কেন? তুই কি প্রজেক্ট আগে সিলেক্ট করে কনফার্ম করে দিয়েছিস? (আরিয়ান বলে)
"আরিয়ান – হুম।
"রুচি – কি সিলেক্ট করেছ তুমি? প্যারানরমাল একটিভিটিজ নই তো?
(আরিয়ান নিশ্চুপ মাথা নাড়ায় যার মানে হ্যাঁ)
"এখন যেহেতু আরিয়ান আগে কনফার্ম করে দিয়েছে তাই সেটা পরিবর্তন করার যেত না। তাই বাধ্য হয়ে সবাই যেতে রাজি হয়ে যায়। ভার্সিটি থেকে এ প্রজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য এক মাসের হলিডে দেয়া হয়। এবং পাঁচ দিন রেস্ট এর জন্য। টোটাল একমাস ৫ দিন। অবশেষে সবাই তারা প্রয়োজনীয় জিনিস প্যাকিং শুরু করে যেহেতু তারা একমাস থাকবে। ৫ দিন পর তাদের ফ্লাইট।
★এখন কথা হল এই আটজন এখন যে ফরেস্টে যাচ্ছে রিসার্চের জন্য। এটা সেই ফরেস্ট গত ৩ মাস আগে এলেন তার প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে গেছিল তবে এখনো তার সহকর্মীদের কোন খবর পাওয়া যায়নি। শুরুতে কোম্পানি তাদের সাথে কন্টাক্ট খোঁজাখুঁজি করলেও একমাস পর তারা এই বন্ধ করে দেয়। তারা চাচ্ছিল না তাদের কোম্পানির নাম বদনাম হোক। তাই এই প্রজেক্টটাকেউ তারা বাতিল ঘোষণা করে। এই ঘটনার ফলে প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত জঙ্গলে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সিল করে দেয়। তাদের ধারণা এবং ভাষ্য মতে জঙ্গলের ভেতরে জংলি প্রাণীদের জীবনযাত্রায় বেঘাটের কারণে তারা খেপে গিয়ে জঙ্গলের উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ চালায়। যার ফলে তাদের দেহের কোন অংশই খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর সেখানেই রিসার্চের জন্য আসছে আমেরিকার নামকরা ইউনিভার্সিটি আচ্ছা স্টুডেন্ট। এখন প্রশ্ন হল তাদের সাথেও কি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।