শুকনো গোলাপ
ষষ্ঠ পর্ব
সন্ধ্যার পর তানিশা সৈকতের ঘরে গিয়ে গল্পের ছলে নৌকা ভ্রমণে তোলা ছবি গুলো দেখতে চাইলো।
মোবাইল ফটো দেখেই চোখ স্থির হয়ে গেলো তানিশার
আরে এটা তো ঐ ছেলেটা...
যাকে কলেজ গেটের সামনে দেখেছিলাম..
তাহলে কি আমার জন্যই মাহিম কলেজ গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকতো...
কিন্তু আমাকে মাহিম চিনে কিভাবে...
এর আগে তো কখনো ওর সাথে দেখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
আমার বাড়ি থেকে শুরু করে কলেজ সহ সব খবরই সে রাখে দেখছি।
এতো কিছু কিভাবে জানে ও...
নিজের ঘরে চলে এলো তানিশা...
রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে গেল।
পরদিন খুব সকালে ঘুম ভাংলো তানিশার।
বারান্দায় গিয়ে আজ শুধু একটা গোলাপ নয় এক গুচ্ছ গোলাপের সাথে একটা চিঠি পেলো।
চিঠি পড়েই চিন্তায় পড়ে গেলো...
এই যে জল পরী
ডাঙায় থাকতে বুঝি আর ভালো লাগে না তাই না..
এ জন্য জলের গভীরে চলে যেতে চাও...
তুমি জানো
যখন তুমি নদীতে পড়ে গিয়েছিলে তখন আমার মনের অবস্থা কি হয়েছিলো...
আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম
আল্লাহ তায়ালা'র কাছে হাজার শুকরিয়া তোমাকে খুঁজে পেয়েছি আর এখন তুমি সুস্থ আছো স্বাভাবিক আছো।
তুমি তো জানো
আমার হৃদয়ের স্পন্দন একমাত্র তুমি
এতো কষ্ট দাও কেন আমাকে...
যদি কিছু একটা হয়ে যেতো...
আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকতাম বলো তো...
যাই হোক
আজকে সকাল এগারোটায় তুমি কলেজ গেটের সামনে যে লাইব্রেরি আছে সেখানে আসবে।
আমার অনেক কিছু বলার আছে।
তোমাকে আসতেই হবে।
আমি অপেক্ষায় থাকবো।
ভালো থেকো।
চিঠি ভাজ করতে করতে তানিশা ভাবছে কিভাবে যাবে সেখানে...
এখন তো আর কলেজে কোনো কাজ নেই।
বাসা থেকে কি বলে বের হবে সে।
বাজারে বাবা আছেন।
উফ কি ঝামেলায় পড়লাম।
মন চাইছে যেতে কিন্তু কিভাবে যাবো....
ভাবতে ভাবতে সকালের নাস্তার সময় হয়ে গেছে।
মা নাস্তা খেতে খেতে বললো...
তানিশা তোর তো এখন আর পড়ার চাপ নেই।
তুই আজ সৈকতের স্কুলে গিয়ে ওর ফি গুলো দিয়ে আসার সময় লাইব্রেরি হয়ে ওর কিছু স্টেশনারি জিনিসপত্র লাগবে সেগুলো এনে দিবি।
ইস
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো হয়ে গেলো।
সৈকত বললো
না মা
আপু অসুস্থ
হয়তো আপুর শরীর এখনো ঠিক হয় নি।
আমি নিজেই দিতে পারবো।
গতকাল কি ধকল গেছে।
সৈকত কে থামিয়ে দিয়ে যেতে রাজি হলো তানিশা।
এখন শুধু অপেক্ষা সেই মূহুর্তের।
কখন দেখা হবে...
লাইব্রেরীতে পৌঁছাতেই মাহিম তানিশা কে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকলো।
মানুষ এতো সুন্দর হয় কিভাবে...
নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
কেমন আছেন...?
তানিশা বললো জ্বি ভালো আছি।
আপনি কেমন আছেন..?
আমি এতো দিন যতোটা না ভালো ছিলাম এখন তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো আছি।
চোখ কে কি বলে আটকানো যায় বলুন তো...
শুধু আপনাকে দেখতে চায়।
মন চায় যুগের পর যুগ চেয়ে থাকি ঐ মুখের দিকে...
যে মুখ একবার দেখলে
ক্ষুদা পিপাসা কিছুই লাগে না।
বিধাতার কি অপরূপ সৃষ্টি...
তানিশা বললো
এসব কি বলছেন...
আমার খুব লজ্জা লাগছে।
আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
আপনি আমাকে চিনেন কিভাবে বলবেন প্লীজ...
আপনার বাবার ওখানে হাফিজুল নামে যে ছেলেটা কাজ করে তার বাড়ী আমাদের গ্রামে।
ওর কাছ থেকেই আপনাদের সবার ব্যপারে জেনেছি।
আপনার হয়তো মনে আছে
অনেক দিন আগে আপনাদের বাড়ীতে পাত্র পক্ষ যাবার কথা ছিলো।
আমি সেই পাত্রের বন্ধু।
আপনাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিনই ভালবেসে ফেলেছি।
যখন আবীর আমাকে বললো এই মেয়ে দেখতে যাবো তো তাই আগে থেকে তোকে দেখাতে নিয়ে আসলাম।
তখন মন ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
পারি নি বন্ধু কে বলতে যে তোর আর দেখতে গিয়ে কাজ নেই।
আমার পাকা দেখা হয়ে গেছে।
ঘটক যখন খবর দিলো আপনি এখন বিয়ে করতে ইচ্ছুক নন।
আরো পড়াশোনা করতে চান।
তখন আমি ভেবেই নিয়েছি
আপনার জন্ম শুধু আমার জন্যই হয়েছে।
হাফিজুলের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সব কিছু জানতে শুরু করলাম।
আর মন যখন বেশি উতলা হতো
তখন কলেজ গেটের সামনে দাড়িয়ে আপনাকে দেখতাম।
আমি জানি
শুরু টা এতো সহজ নয়।
এ জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার গোলাপ দিয়ে শুরু করলাম।
আমার বাবার মাছের আরৎ আছে।
সেখানে হিসাব রক্ষক হিসেবে আমি কাজ করি।
এজন্য সারা সপ্তাহ খুব ব্যস্ত থাকতে হয়।
শুধু বৃহস্পতিবার আমি অবসর পাই।
এ জন্য ফুল দেয়া ঐ দিন চালু করলাম।
আমার বিশ্বাস
আমার জন্য আপনার মনের কোণে একটু হলেও জায়গা তৈরি হয়েছে।
এখন আপনার কথা শুনতে চাই।
এতোক্ষণ তানিশা চুপচাপ মাহিমের কথা গুলো শুনছিলো।
খুব বড় একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে তানিশা বললো
যদি বলি আপনাকে আমার একটুও ভালো লাগে নি।
যদি বলি আপনি এতোদিন আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন।
এই কথা শুনে মাহিমের চোখ মুখ লাল হতে লাগলো।
তানিশা বুঝতে পারলো
ছেলেটা সত্যিই তাকে অসম্ভব ভালবাসে।
এভাবে দেখে তার নিজেরও খারাপ লাগছে।
মানুষ প্রিয়জনের বেদনায় কত তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়ে।
ইস কি মায়া লাগছে মুখ টা দেখে।
আর একটু হলেই চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে।
নাহ আর কোনো কষ্টদায়ক কথা বলবো না
যদি বলি আপনার এই পাগলামির জন্য রাতের পর রাত আমাকে না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে।
আপনাকে এক নজর দেখার ইচ্ছে আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে।
এতো নিষ্ঠুর কেন আপনি...
আমার মন কে এতো কষ্ট কেন দিয়েছেন..
এবার মাহিম স্বাভাবিক হতে শুরু করলো।
মুখের লালচে ভাবটা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে।
কিন্তু চোখের কোণে যে অশ্রু জমে গিয়েছিলো
সেটা আর সামলাতে পারলো না মাহিম।
একটি ছেলে একটা মেয়ে কে কতোটা ভালবাসলে তার জন্য চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রু বেয়ে পড়ে...
তানিশা হাত দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে দিলো।
মাহিমের সারা শরীরে একটা শিহরণ জেগে উঠলো।
প্রথম প্রেমের প্রথম পরশ...
তানিশার হাতে কি জাদু আছে...
মন কে অশান্ত করে দিলো
মন বলছে এই ছোঁয়া সারাক্ষণ লেগে থাকুক আমার গায়...
কি অনুভূতি তোমার ছোঁয়ায়
চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো মাহিম।
তানিশা আরো বললো...
আপনার জন্য আমার মনের কোণে একটু নয়
পুরো জায়গা টা দখল হয়ে গেছে।
আমার অজান্তেই আমার অবুঝ মন আপনাকে নিজের করে নিয়েছে।
এখন সেখানে শুধু আপনার বসবাস।
তবে এতো আত্মবিশ্বাস ভালো না।
যদি আমি আপনাকে পছন্দ না করতাম তাহলে কি হতো।
মাহিম আর কিছু বলতে পারছে না।
হয়তো বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গেছে।
ছোট কাগজে ফোন নাম্বার টা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো মাহিম।
বাড়ি ফিরে তানিশা ঐ নাম্বারে ফোন করলো।
ওপাশ থেকে খুব ঠান্ডা গলায় মাহিম বললো
আমি জানতাম আপনি ফোন করবেন।
249
View
Comments
-
Mst Mukta
2 months ago
অসংখ্য ধন্যবাদ।
-
Chameli Akter
2 months ago
লিখেছেন ভালো