Posts

গল্প

পুত্রবধূ

September 7, 2025

Chameli Akter

99
View

ছেলের বউকে ইচ্ছামতো মেরে রুমে বেঁধে রাখলেন অন্তরা বেগম। তারপর মেইন দরজা খুলে দিতেই দাত কেলিয়ে হাসলেন রুয়াশাকে দেখে। রুয়াশা মুখ কেমন করলো। এই মহিলাটাকে তার একটুও ভালো লাগে না। কোনোভাবে মুখ দিয়ে গুটিকয়েক শব্দ বের করলো,
" মা পাঠিয়েছে এটা, রূপা ভাবীর জন্য।"

অন্তরা বেগম হেসে প্লেটটা নিলেন। একটু আগে যা করেছেন তার কোনো অংশের ছাপ মুখে নেই। তিনি রুয়াশাকে কিছু বলতে যাবেন এর আগেই রুয়াশা চলে গেলো। অন্তরা বেগমের মন চাইলো এই মেয়েকেও কয়েক ঘা বসিয়ে দিতে। কিন্তু পরের মেয়ে। এই কাজ কি আর করা যায়?

রুয়াশা হঠাৎ থেমে গেলো একটা আওয়াজ শুনে। কারও গোঙানোর আওয়াজ। পেছনে ফিরে তাকালো। অন্তরা বেগমকে দ্রুত দরজা বন্ধ করতে দেখা গেলো। রুয়াশা পা টিপে টিপে সেদিকে এগিয়ে গেলো। দরজার কাছে কান পেতে শুনতে চাইলো কিছু। অন্তরা বেগমের হালকা চেঁচানোর আওয়াজ শুনলো। কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজও শুনলো। বুঝতে বাকি রইলো না মহিলাটা নিজের পুত্রবধূকে হয়তো মারছেন। রুয়াশা দৌঁড়ে নিজেদের রুমে এসে তার মা-কে ডাকতে লাগলো,
" মা মা, ও মা!"

মনিষা বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন," কি হয়েছে কি? চেঁচাচ্ছিস কেন এভাবে?"

" মা ওই বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রূপা ভাবীকে মারছে মনে হয় ওই মহিলা।"

মেয়ের কথা শুনে মনিষা বেগম দৌঁড়ে গেলেন ওদের ফ্ল্যাটের সামনে। সত্যিই কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে হালকা। দরজায় করাঘাত করলেন মনিষা বেগম। 
আর বলতে লাগলেন,
" অন্তরা ভাবী কি হয়েছে? রূপার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে যে?"

বেশ জোরে জোরেই বলতে লাগলেন। পাশের ফ্ল্যাটের মহিলাটাও বেড়িয়ে এলেন।

" কি হয়েছে ভাবী?"

" রূপা কান্না করছে। কি হয়েছে নাকি?"

এদিকে অন্তরা বেগম বিপদে পড়লেন। কি করবেন না করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। রূপার মুখ চেপে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে বললেন,
" শোন। কিচ্ছু স্বীকার করবি না। নাহলে তোকে আজকেই মেরে ফেলবো।"

কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দেওয়া হলো। বেশ মানুষজন জড়ো হয়েছে। উপরের থেকে নিচের থেকে কিছু মহিলা এসেছেন। অন্তরা বেগম মনিষা বেগমকে দেখে হেসে বললেন,
" কি হয়েছে আপা? এভাবে ডাকছেন যে? আর এত মানুষ কেন?"

মনিষা বেগম উঁকি দিলেন ভেতরে। অন্তরা বেগমকে বলে উঠলেন,
" রূপা কোথায়? ওর কান্নার আওয়াজ শুনলাম আমরা!"

" ও রূপা! কাপড় ধুতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে। তাই..."

রূপা দৌঁড়ে এলো তখন। এসেই বলল,
" না উনি মিথ্যা বলছেন। আপনারা আমাকে বাঁচান। উনি আমাকে অনেক মারধোর করেন প্রতিদিন।"

এই বলে কাঁদতে লাগল। মহিলারা সবাই অবাক হয়ে গেলেন। রুয়াশা দূর থেকে বলে উঠল,
" এই মহিলাকে আমার সন্দেহ হতো আগে থেকেই। কি নোংরা।"

অন্তরা বেগম রেগে গেলেন। রূপাকে এক ধমক দিলেন,
" এসব কি বলছো তুমি? সাহস কতবড় তোমার! মিথ্যা কথা বলছো।"

মনিষা বেগম রূপাকে উপরনিচ দেখেই বুঝলেন মেয়েটাকে সত্যিই অমানবিক নির্যাতন করা হয় হয়তো। রুয়াশা আবার বলে উঠল,
" আপনাকে তো জেলে দেওয়া উচিত।"

অন্তরা বেগমের রুয়াশার ওপর রেগে গেলেন। এমনিতেই রক্ত মাথায় উঠে গেছে উনার রূপার প্রতি। কিন্তু রুয়াশার ওপরও অনেক রাগ উঠলো উনার। মনিষা বেগম রূপাকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে যেতে লাগলেই অন্তরা বেগম চেঁচিয়ে বললেন,
" ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা?"

উপরের তলার সুমনা বেগম বলে উঠলেন,
" রূপাকে তো এখন একা পেলে মেরেই ফেলবেন। তাই ও আপনাদের কাছে নিরাপদ নয়।"

অন্তরা বেগম চেঁচাতে লাগলেন। কিছুতেই রূপাকে তিনি যেতে দেবেন না। কিন্তু মনিষা বেগম জোর করেই নিয়ে গেলেন নিজের রুমে।

________________

রূপা সমস্ত কথা বলল। কিভাবে তার স্বামীও তাকে মারধোর করে। সমস্ত কথা শুনে সবাই অবাক। বিকালে পুলিশ এলো। রূপার স্বামী মাহিনকেও ডাকা হলো অফিস থেকে। পুলিশ ওয়ার্নিং দিয়ে গেলো অন্তরা বেগম আর মাহিনকে। তারা স্বীকার করলো না যে তারা এমন কাজ করেছে। বিল্ডিং এর সবাই তাদের বিপক্ষে। এদিকে অতিরিক্ত প্রমাণ না থাকায় মা ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে পারলো না পুলিশ।

“ দেখুন মেয়েটা এখনও অল্পবয়স। আপনাদের জেলও হতে পারতো যদি আজকে শক্তপোক্ত প্রমাণ থাকতো।”

মাহিন বলে উঠল,
“ স্যার আপনারা ভুল বুঝছেন। এমন কিছুই নয়। রূপা হয়তো মিথ্যে বলছে।”

মনিষা বেগম বললেন,
“ এত এত মানুষের কথা আর রূপার শরীরের মারের দাগ নিশ্চয়ই ভুল নয়।”

মাহিন ফোস করে শ্বাস ফেলে বলল,
“ আন্টি আপনাদের ভুল হচ্ছে।”

“ আমাকে শেখাতে এসো না ছেলে। কি বুঝো তুমি?”

কিছুক্ষণ হাঙ্গামা চললো। পাঁচতলায় দুজন ছেলে থাকে। তারা নাকি দুই ভাই। বড়টার নাম প্রাপ্ত আর ছোটটার নাম দীপ্ত। প্রাপ্ত এসব দেখেই যাচ্ছিলো। তারা সামনের মাসে চলে যাবে এই বাসা ছেড়ে। বাসায় আসতেই তার ভাই দীপ্ত বলল,
" ওই রূপা মেয়েটাকেই আমার কেমন যেন লাগে। গতকাল তো ভালোই দেখলাম। কোন ছেলের সাথে ছাদে হেসে কথা বলছে।"

প্রাপ্ত দীপ্তর দিকে তাকালো। বলল,
" তুই এসব শুনেও শুনবি না, দেখেও দেখবি না। ভার্সিটি থেকে এসে লেখাপড়া করবি টিউশনের সময়ে টিউশনিতে যাবি। আর কোনোকিছুতে না। সামনের মাসেই তো চলে যাবো। ছোট্ট একটা রুম খুঁজে পেয়েছি। ভাড়া কম আমাদের হয়ে যাবে।"

দীপ্ত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। 
প্রাপ্ত রান্না করার জন্য রান্নাঘরে চলে গেলো। বাবা মা নেই তাদের। প্রাপ্তই দীপ্তকে মানুষ করেছে। সংগ্রামটা অনেক কষ্টের ছিলো।

_________________

এদিকে,
পুলিশ চলে গেলো। কিন্তু রূপাকে মনিষা বেগম যেতে দিলেন না তার শ্বশুরবাসায়।

“ দেখুন আন্টি রূপাকে নিয়ে যাবেন না। আপনাদের সমস্যা হবে।”

মাহিনের কথায় মনিষা বেগম বললেন,
“ সাইড দাও মাহিন। আমি তোমার কথা শুনতে বাধ্য নই।”

মাহিন আবারও হাত জোর করে বলল,
“ আন্টি আমি আবারও বলছি। কিভাবে বোঝাবো আপনাকে?”

অন্য মহিলারা তখন বলল,
“ দেখো মাহিন তোমাদের বাসায় রূপা সেইফ নয়।”

মনিষা বেগম একপ্রকার জোর করেই নিয়ে এলেন রূপাকে। তিনি পেশায় একজন ডাক্তার। স্বামী নেই। মেয়েকে নিয়েই থাকেন। রুয়াশা ভার্সিটি স্টুডেন্ট। বিইউপিতে বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। খুবই শান্ত একটা ফ্যামিলি।

রাতে খাওয়ার জন্য রূপাকে ডাকা হলো। রূপা খাবে না বলল। মনিষা বেগম তবুও জোর করেই খাওয়ালেন রূপাকে। আর মাহিনকে ডিভোর্সের জন্য সবকিছু রেডি করতে বললেন। রূপার বাবা মা নেই। কোথায় যাবে কোথায় কি? এই ভেবে বেশ চিন্তিত হলেন মনিষা বেগমও। রুয়াশা চুপ। সে নিজের মতো করে রয়েছে। রূপাকেও তার কেমন যেন লাগে।

গভীর রাত তখন। রুয়াশা তার রুমের লাইট অফ করে এসাইনমেন্টের কাজ করছিলো। এমন সময় কিছু একটার আওয়াজ হলো। রুয়াশা খুবই কান সজাগ। তাদের ফ্ল্যাটের তিনটে রুম, একটি ড্রয়িং রুম, একটি রান্নাঘর আর প্রতি রুমেই টয়লেট। রূপাকে একটা রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে। সে নাকি আগামীকাল তার মামা বাড়ি চলে যাবে।

আওয়াজটা শুনে রুয়াশা ল্যাপটপটা সাইডে রেখে আস্তে করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। সবটাই অন্ধকার হওয়ায় দেখা যাচ্ছিলো না কিছু। তবে হঠাৎ করেই কারও ছায়া দেখতে পেলো রুয়াশা। বুঝলো এটা নিশ্চয়ই রূপা হবে৷ ভাবমতি বুঝার চেষ্টা করলো রুয়াশা। মেয়েটা কি করতে চাইছে? রূপাকে ফিসফিস করে কথা বলতে শোনা গেলো। কাউকে বিল্ডিং এর নিচে আসতে বলছে। রুয়াশা ভীষণ চমকালো। পা টিপে টিপে সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট অন করতেই যাবে এর আগেই রূপা যেন রুয়াশার দিকে তাকালো। ততক্ষণে লাইটও অন করলো রুয়াশা। আর সামনে তাকাতেই একদমই স্তব্ধ হয়ে গেলো রুয়াশা।

Comments

    Please login to post comment. Login