মারা গেছেন লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
ফয়জুল হাকিম গণমাধ্যমে বলেন, প্রায় এক মাস ধরেই বদরুদ্দীন উমর অসুস্থ ছিলেন। তাকে একাধিকবার হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আজ (রোববার) সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে লেখক শিবির ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত মুহাম্মদ কাইউম জানিয়েছেন, বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হবে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় শহীদ মিনার বা অন্য কোনো স্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ রাখা হবে। এরপর দুপুরে জানাজার পর জুরাইনে মা–বাবার কবরে তার দাফন সম্পন্ন হবে।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। ছোট মেয়ে সারা আকতার তার দেখাশোনা করতেন। এছাড়া বড় মেয়ে লন্ডনে থাকেন। তিনি আগামীকাল দেশে আসবেন বলে জানা গেছে।
বদরুদ্দীন উমর লেখক-গবেষক এবং বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। তিনি ১৯৩১ সালে ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবুল হাশিম ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন। পাকিস্তান আমলে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে এবং ১৯৫০ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পিপিই ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতি ও লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন।
তার লেখা ‘পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম গবেষণাগ্রন্থ। তার গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে 'সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা', 'পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি', 'বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর', 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ' এবং 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক'।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, '১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।'