হৃদয়ে গাঁথা তোমার ভাস্কর্য | ভোরের কোকিল ( মুহাম্মদ লিটন ইসলাম ও সাওদা ইসলাম )

—অতীতের ঢেউয়ের জোয়ার
আজও হানা দেয় তোমার প্রতিটি উচ্ছ্বাসে,
স্মৃতির তরঙ্গে ভেসে আসে,
হৃদয় জুড়ে অনন্ত আকাঙ্ক্ষা।
—সেই আকাঙ্ক্ষা কেমন, সৌদাকর বলতে পারবে?
—হৃদয়ের অন্তঃস্রোতে
যে আগুন জ্বলে নিরবধি তীব্রতায়।
চৈতের সোনালী হৈমন্তে ভেসে যায় বুক,
চিরতরে ছেড়ে যাওয়ার একখানি চিঠির দোলায়।
—চিঠিটা কি এমনি ছিলো?
—স্মৃতির পাতায় এক হাহাকার।
—অতীত নিয়ে বাঁচতে হবে?
—বেঁচে থাকার নেই অধিকার।
যেখানে তুমি নেই ,সেখানে বেঁচে থাকার মানেই বা কী?
তবুও শুধু তোমার স্মৃতিগুলোর মায়ায় ডুবে আছি,
নিজেকে রেখেছি একটুকরো জলের ঢেউয়ে ভাসমান।
—ভেবেছিলাম আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা,
কিন্তু কারে বলি মনের ব্যাথা,
লুকিয়ে থাকার যন্ত্রণা, অতীতকে ঘিরে থাকতে হবে!
—কোনো এক বৈকালের খক্কোস এসে
আমাদের সকল কিছু ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
আবার কি শুরু করা যায় না?
আমাদের অতীতের সেই যাত্রাকে
অনন্তকাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে?
—আবার যাত্রা শুরু করলে
অতীতের মতো আর সেই প্রথমে পরিচয়
হয়ে উঠবে না আগের মতো।
গোধূলির শেষ সময় অপেক্ষা করার মতো
মনের টানে ভালোবাসার কথাটা।
—কবিতার পরিমার্জন শতবার হয়,
আমাদেরটা না হয় কবিতার মতো
একবার পরিমার্জন করে দেখি।
আর ভালোবাসার অস্তিত্ব
শুধু কাছে থাকতেই পাওয়া যায় না,
সেটা দূরে থেকেও অনুভব হয়।
এটা নাহয় তেমনই।
—ভালোবাসাটা কি এমনি হওয়ার কথা ছিলো?
আমরা আর কি আগের মতো মিলতে পারবো?
আগের মতো কথা বলা,
আগের মতো বিকালের মিষ্টি বাতাসে
নদী পাড়ে বসে গল্পটুকু—
কিচ্ছু হবে না!
শেষ তো আগেই হয়ে গেল,
আর কি শেষ হওয়ার আছে বলবে কি?
—ভালোবাসার তো শেষ নেই।
যে বলে ভালোবাসা শেষ হয়েছে,
সে আসলে কখনো ভালোই বাসেনি!
—শেষ না হলেও স্মৃতির বোঝায় ধূলো পড়ে গেছে,
অতীতকে ঘিরে।
—ধূলোয় একটু ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেই
আবারো জেগে উঠবে আমাদের পূর্ণ হৃদয়।
পূর্ণজনম নেবে অন্তরালের গভীরে
লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা!
—এখন আর আগের মতো মিলতে চাই না,
চাই না আমাদের দেখা হোক।
বারবার মারা যাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করতে চাই না।
আমি চাই না আর আমার প্রেম হোক।
আর চাই না প্রতি রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে
তোমার কথা মনে পড়ে কান্না করতে হোক।
—কেঁদেছো কি শুধু তুমি একাই?
যার মুখে হাসি থাকে, তার মানে সে কি সুখী?
কিছু কিছু হাসিও রূপ নেয় কান্নায়।
যার গভীরটা কেউ দেখে না, দেখে শুধু হাসিটাই।
জানো, সোনায় জল করা গহনা সোনার মতো হলেও সোনা নয়—
ভিতরে অন্য কিছু।
ঠিক আমার মুখের হাসি মানেই হাসি নয়,
কান্নারও কিছু কথা আছে, যা কাউকেই বলিনি।
—ভুলে যেও আমাকে
নতুন বাসার খোঁজে উড়াল দিও
—কিন্তু আমি যে পারি না।
এখন তো তোমার স্মৃতিই একমাত্র অবলম্বন।
—সবকিছু ভুলেতে পারতেই যে হবে।
ছুঁড়ে ফেলে দাও অতীতকে—
যেন কখনো আমাদের কথাই হয়নি।
ভুলে যাও সেই অতীতের কথা,
যেইখানে আমি নামক কেউ ছিলো না।
—তা যে সম্ভব নয়।
অলিন্দের আনাচে কানাচে
খোদাই করা তোমার নাম।
—খোদাই করা ভাস্কর্য নির্মাণ না করলেও পারতে।
—যারে রাখা হয়েছে হৃদয় পোকা হিসেবে,
তার ভাস্কর্য সেই নির্মাণ করে রেখেছে।
—আর থাকতে চাই না তোমার জীবনে বোঝা হতে।
পারি তো জমাতে চাই ওপারে।
—ওপারে যেতে চাইলেই যাওয়া যায় না,
তার একটা সীমা আছে।
তোমার কাছে আবারো রক্তাক্ত হৃদয়ে,
রক্ত জবায় ডাকছি— ফিরে আসো !
—ফেরার পথ যেন আমার কাছে বন্ধ হয়ে গেছে।
যেতে চাইনি সেই চেনা শহরে,
ফেরা কি আর সম্ভব!
চেনা শহরে মুখ বন্ধ করে,
চোখ বুজে সহ্য করে নিতে চাই সব।
আর যেতে চাই না,
অতীতকে ঘিরে রাখা মূলিন কথার সুরে ভাসতে।
—ভাসতে তো বলিনি, বলেছি ফিরতে—
যেখানে থাকবে না কারো কোনো অভিযোগ,
না থাকবে অপূর্ণতা।
রবে শুধু, শুধুই আমাদের ভালোবাসা।
—তা হবে কেন?
কোনো না কোনো প্রেমিকা
রেখে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
—বন্ধুত্ব আর প্রেমিকা এক নয়,
কলিগ আর প্রেমিকা সেম নয়।
যাকে ভাবো প্রেমিকা,
হয় সে ফ্রেন্ড, নাহয় কলিগ।
—তা হয়তো সত্যি,
—হয়তো নয়। তাই সত্যি।