কথিত আছে, ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ) একদা পথ চলছিলেন। তাকে ঘিরে রেখেছিল তার শতাধিক ছাত্র। তিনি যেন সূর্য। আর ছাত্ররা সেই সূর্যের আলো পেতে তার চারপাশ ঘিরে রাখছিল গ্রহগুলোর মতই। এই আলো হলো ইলমের আলো। ওয়াহীর জ্ঞান শিখতে উৎসুক শত শত ছাত্র-শিষ্যদের বহরটি সত্যিই ছিল অপার্থিব আলোয় ঝলমলে। যা সবার নজর কেঁড়ে নেয়।
কিন্তু সেই সময়টা ছিল অস্থির, অত্যন্ত নাজুক। রক্ত-পিপাসু ক্রুসেডার, অন্যদিকে বর্বর মোঙ্গলদের হামলা-হুমকিতে মুসলিম বিশ্বে স্বস্তি নেই। রাজ্যে রাজ্যে বিভক্তি, অন্তর্কোন্দল থেমে নেই। মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বাতিল বিভিন্ন ফেরকা। তাদের দুষিত চিন্তার বিষবাস্পে সাধারণ মুসলিম থেকে শুরু করে, আমির-সুলতান অনেকরই বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস টলমল করছে। এটা যেন শরীরের ভেতরের ক্যান্সারের মত, বাইরের আঘাত-আক্রমণে মৃত্যুর ভয়ে তটস্থ মানুষটির শরীরকে নিঃশব্দে নিঃশষ করে দিচ্ছে ভেতরে ভেতরে । ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ) সব ব্যাপারে গভীর ভাবে অবগত, তাই তার বিশ্রাম নেই। তিনি মুসলিম বিশ্বকে অভ্যন্তর থেকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষার মিশনে নেমেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক না কেন, তিনি হতাশ হতে রাজি নন। আল্লাহই ভরসা। তিনি বাতিল ফেরকাগুলোর চিন্তা-বিশ্বাসের খন্ডনে পুস্তিকা রচনা করে যাচ্ছেন। স্থানীয় সুলতান, গভর্নরদের বিশুদ্ধ আকীদা ও ইসলামের ব্যাপারে অবগত করছেন। তাদের সন্তানদের সুশিক্ষিতি করে তোলার দিকে তিনি বিশেষ নজর দিচ্ছেন। হয়ত এরাই পরিবর্তী ইসলামী বিশ্বে নেতৃত্ব দিবে! সব ব্যস্ততার পাশাপাশি ইমাম রাযী (রহ) জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন ফেরকার নেতাদের সাথে বিতর্ক-মোনাজারাতেও অংশ নিচ্ছেন। বেশ সফলতাও পাচ্ছেন। বাতিল গোষ্ঠীগুলোর ভিত্তি ধ্বসে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । আজও হয়ত এমন কোনো উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন শ্রদ্ধেয় ইমাম ।
তার শিষ্যরা তাকে অনুরসরণ করছে । পথের পাশের মানুষগুলো বিস্ময় নিয়ে তাকাচ্ছে। সবার মত এক বৃদ্ধা মহিলাও আগ্রহ নিয়ে তাকালেন কাফেলার দিকে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কেন এতগুলো মানুষ একজনকে ঘিরে আছে? তিনি কে? একজনকে প্রশ্ন করে বসলেন বৃদ্ধা।
একজন জানালো, ইনিই তো প্রখ্যাত আলেম আবু আব্দুল্লাহ ফখরুদ্দীন রাযী! কিন্তু বৃদ্ধা মোটেও চমকাল না। হয়ত তিনি ইমাম রাযী (রহ) এর নাম শুনেন নি। তার চেহারা ভাবলেশহীন। একজন ছাত্র বলল, আপনি ইমাম রাযীকে জানে না? তিনি আল্লাহর অস্তিত্বের ১০০০ প্রমাণ জানেন !
ছাত্রটি ভেবেছিল বৃদ্ধা অবাক হয়ে যাবেন। কিন্তু তা না। বৃদ্ধা মহিলাটি আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিল, তার অন্তরে যদি ১০০০ সংশয় না থাকে, তাকে ১০০০ প্রমানও খুঁজতে হত না। আল্লাহর ব্যাপারে আবার সংশয় কী ?
বৃদ্ধার উত্তরে সবাই থ’ বনে গেল। ইমাম রাযীও (রহ) বৃদ্ধার কথা শুনতে পেলেন। বৃদ্ধার উত্তরে তিনি অবিভূত হলেন। শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, সবার ঈমান এই বৃদ্ধা মহিলার মতই হওয়া চাই।
ঈমান হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ একটি প্রাপ্তি বা অনুগ্রহ । কেউ অনেক বুদ্ধিমান হলেই যে তার ঈমান-বিশ্বাস গভীর হবে এর কোন মানে নেই। খুবই সাধারণ মানুষের মধ্যেও অনেক সময় ঈমানের গভীরতা থাকতে পারে, হয়ত সেই গভীর ঈমানের নাগাল পেতে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সারাজীবন ছুটে চলে।