Posts

নিউজ

বদরুদ্দীন উমরের পুরস্কার প্রত্যাখানের কারণ

September 9, 2025

নিউজ ফ্যাক্টরি

116
View

দেশের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি রাজনীতি, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়ে গবেষণামূলক লেখালেখি করেছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় পদক ও পুরস্কারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন। তবে তিনি সবসময়ই এসব পুরস্কার প্রত্যাখান করেছেন। 

চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি।’

তিনি আরও বলেছিলেন, 'এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।'

এদিকে পুরস্কার গ্রহণ না করার বিষয়ে ‘প্রতিধ্বনি’ নামের এক ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পুরস্কার নিই না এ কারণে যে প্রথমত, আমি যে লেখালেখি করি এটা আমি নিজের আন্তরিক তাগিদ থেকে করি। এর জন্য আমাকে কেউ পুরস্কার দেবে, এটা আমার ভালো লাগে না। মূলত একজন লেখকের আসল পুরস্কার হলো, মানুষ তার লেখা পড়বে, আলোচনা করবে এবং উপকৃত হবে।’ 

তিনি আরও বলেছেন, ‘পুরস্কার সাধারণত দেওয়া হয় লেখকদের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করার জন্য। ধনিকশ্রেণি কিংবা রাষ্ট্র এসব পুরস্কার দেয় লেখককে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখতে। একবার পুরস্কার নিলে আবার অন্য পুরস্কারের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। আর সেটা লেখালেখির স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

তিনি পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা লেখক মহাশ্বেতা দেবীর উদাহরণ টেনে বলেছেন, ‘মহাশ্বেতা দেবী প্রথমে পুরস্কার না নেওয়ার অবস্থান নিলেও পরে বিভিন্ন পুরস্কার থেকে শুরু করে ম্যাগসেসাই পুরস্কারও নিয়েছেন। এর ফলে তার লেখার মান নষ্ট হয়েছে এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে আপসহীনতা হারিয়েছেন। লেখককে মুক্ত থাকতে হলে পুরস্কার প্রত্যাখ্যানই প্রকৃত শক্তি ও সততার বহিঃপ্রকাশ।'  

উল্লেখ্য, ৯৪ বছর বয়সী প্রখ্যাত এই বুদ্ধিজীবী ৭ সেপ্টেম্বর মারা যান। তার লেখা ‘পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম গবেষণাগ্রন্থ। তার গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে 'সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা', 'পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি', 'বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর', 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ' এবং 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক'।  

Comments

    Please login to post comment. Login