Posts

চিন্তা

ভিপি সাদিক কায়েম: রাজনীতিতে জামায়াতের বয়ান!

September 10, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

72
View

পতিত লীগের এত ভোট কোথায় গেল? যদি বলি শি'বির পেয়েছে, আকাশ থেকে পড়বেন? আ.লীগ তার এক নাম্বার শত্রু বানিয়ে রেখেছে বিএনপিকে। এর অনেকগুলো কারণ, জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ২১ আগস্টের গ্রে'নেড হামলা এর অন্যতম দুটি কারণ। গেল ১৫ বছর আ.লীগ জাশিকে বুকের ভেতর আগলে রেখে হিলমেটে মুড়িয়ে ক্যাম্পাস শাসন করতে দিয়েছে। অনেক শিবির সদস্যও সেটা স্বীকার করেছে। এবং তাদের নেতৃত্ব এটাকে বলছে মজলুমের টিকে থাকার কৌশল। অধুনা এনসিপি লিডার জামায়াত ঘরাণার হাসনাত-সারজিসের পুরনো ফেসবুক পোস্ট এখনো মুজিবপ্রেমের সাক্ষ্য বহন করে। আগে মুজিবপ্রেম থাকলে পরে মুজিববাদ মুর্দাবাদ হতে পারবে না -এমনটা নয়। যেমন নিখাদ কমিউনিস্ট ট্রেনিং পাওয়া ফ্রেঞ্চ প্রবাসী পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী দা এখন বাংলাদেশের রাইট উইং এর শীর্ষ মুখপাত্র।

আ. লীগ উপরে দেখিয়েছে তারা জামায়াত শিবিরকে কোণঠাসা করে রাখছে। ধুমায়ে মুক্তিযুদ্ধের বয়ান বিক্রি করে দেদারছে দুর্নীতি, লুটপাট এবং গণতন্ত্র হরণ করে গেছে। বস্তুত আ.লীগ নিয়মতান্ত্রিক কোনো পলিটিক্স করেনি। সেক্যুলারিজমের নামও মুখে নেয়নি গেল ১৫ বছর। নিজেদের বানানো সংবিধানকে তারা তেজপাতার বাইরে আর কিছু ভাবেনি। তাদের একমাত্র কাজ ছিল বিএনপিকে দৌড়ের ওপর রাখা এবং রাইট উইং নিয়ে নানামুখী টুইস্ট খেলা। এই ফাঁকে জামায়াত আপনমনে তাদের নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক রাজনীতির মাঠ গুছিয়েছে। গোছানো ওই দলটি গেল বছর ৫ আগস্ট আ.লীগকে দলবলসহ দেশছাড়া করে দিয়েছে। এবং বাংলাদেশের রাজনীতির আঁতুরঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্সে বিএনপিকে গতকাল বিগ জিরো উপহার দিল। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে দেশের বড় দুইদলকে ক্ষমতা দেখালো জামায়াত-শিবির। যারা মুক্তিযুদ্ধকে মনে করে ভারতের চাপিয়ে দেয়া দেশভাগের ষড়যন্ত্র। অপরদিকে দেশছাড়া আ.লীগ শেখ মুজিব ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে আর কাউকে দেখে না। গতকালের পরাজিত দল বিএনপি একাত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে মেজর জিয়া ছাড়া আর কাউকে ক্রেডিট দেয় না।

গতবছর গণ-আন্দোলনে রেজিম চেঞ্জের পর আ.লীগের দুর্বৃত্তদের তৈরি করা লোকালিটির মানি মেকিং পয়েন্টগুলোতে আধিপত্য ও দখলদারিত্ব কায়েম করতে গিয়ে বদনাম কুড়িয়েছে বিএনপি। এই সুযোগে জামায়াত এখন বিএনপিকে টেম্পুস্ট্যান্ডের দল বলে নিন্দামন্দ করতেও ছাড়ে না।

আ.লীগের অপকর্মের ধূম্রজালে পড়ে খোদ লীগাররাই এখন আর মুক্তিযুদ্ধের বয়ান মানে না। অধিকাংশ লীগ সমর্থক, অনুসারী ও কর্মীরা সেক্যুলারিজম শিকেয় তুলে রাইট উইং এর স্রোতে গা ভাসিয়েছে। অপরদিকে জামায়াত হলো রাইট উইং এর মাস্টারমাইন্ড। সুতরাং রাইটে রাইটে মিলেমিশে একাকার।

বিএনপি-আ.লীগের হার্ডকোর থিংকিং এর বাইরে এসে জামায়াত গণমানুষকে তাদের নিজস্ব ধর্মভিত্তিক ন্যারেটিভের অনুবর্তী করতে পেরেছে। বাংলাদেশের মানুষ বহুধা বিভক্ত মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ পছন্দ করছে না। তারা ভারতের তরফ থেকে থেকে আসা পলিটিক্যাল হেজেমনিও মেনে নেবে না। পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু হিন্দুস্তানের মাতব্বরি -মানবে না। জেন-জিরা একাত্তরকে বড় করে না দেখে জুলাই বিপ্লবকে স্বাধীনতা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।

বস্তুত এর ফলাফলই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ডাকসুতে ভিপি পদে শিবিরের প্রার্থী মোঃ আবু সাদিক (কায়েম)কে ভোট দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এতে করে একাত্তরের চেতনা ভুলুণ্ঠিত হয়ে গেল। এমনকি নির্বাচনেও এই বয়ান দেয়া হয়েছিল যে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫ মার্চ ও ১৪ ডিসেম্বর ৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশিয় দোসরদের পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে -তাদের উত্তরসূরীদের যেন না ভোট দেয়া হয়। এই কথা কেউ শোনেনি। সব বয়ান পায়ে দলে সাদিক কায়েম গংদেরকে ভূমিধ্বস বিজয় উপহার দিয়েছে ঢাবিয়ানরা।

নিঃসন্দেহে এটি জামায়াতের কৌশলগত দুর্দান্ত বিজয়। কিন্তু এর দায় কার? অতি অবশ্যই আ.লীগ-বিএনপির বিবদমান রাজনীতিই জামায়াতের হাতকে ভীষণভাবে শক্তিশালী করেছে। যেসময় বিএনপি জিয়াকে নিয়ে এবং আ.লীগ মুজিবকে নিয়ে পড়ে রয়েছে সেসময় জামায়াত বিপুলসংখ্যক মানুষকে তাদের ধর্মীয় ভাবাদর্শে দীক্ষিত করে নিয়েছে। এবং ওই ভাবাদর্শে দীক্ষিতরা জানবাজি রেখে ১৫ বছরের শক্ত রেজিমকেও হটিয়ে দিয়েছে। এবং এই জানবাজ হিসেবে জামায়াত সমাজের সবচেয়ে মেধাবী অংশকে হাতের মুঠোয় রেখেছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র এবং সেরা শিক্ষকরাই হলো জামায়াত ঘরাণার রাইট উইং এর গর্বিত সদস্য। এবং এর ধারাবাহিকতায় প্রশাসন ও বিচারালয়ের আধিকারিকদের মধ্যেও এখন জামায়াতেরই আধিক্য।

এখন এইসব বুদ্ধিমানের রাজনৈতিক ন্যারেটিভ টেক্কা দিতে পারে এমন লোক আছে বিএনপি, আ.লীগ, গণ পরিষদ বা সিপিবির? এক কথায় উত্তর হলো নাই। সারা বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পোস্ট শিবিরের কাছে গেলে এমনকি নেক্সট সংসদে জামায়াত মেজরিটি পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আপনাদের বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক বয়ান যদি জেন-জি'র হৃদয় স্পর্শ না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল টপ টু বটম সবখানে দেখতে বাধ্য থাকবেন। কেউ ভারতে বসে আফসোস করবেন। আর কেউবা সামান্য টেম্পুস্ট্যান্ড নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন। আমরা বরং সাদিক কায়েমদের অভিনন্দন জানিয়ে সামনে জামায়াতের শাসন একবার হলেও পরখ করি। যারা রবিঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা' জাতীয় সঙ্গীত চায় না। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদেরকে নেতৃস্থানে দেখতে চায় না।

লেখক: সাংবাদিক 
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login