শুকনো গোলাপ - সপ্তম পর্ব
ওপাশ থেকে তানিশা বললো...
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন আপনি..?
এতো তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন কেন...
জানতে পারি কি জনাব..?
মিহি গলায় মাহিমের উত্তর...
জ্বী
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আসলে আপনাকে সামনাসামনি দেখে মনের ভেতর কেমন যেন একটা ঝড় বয়ে গিয়েছিলো।
আমি আজকে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম।
কেন জানিনা মনের ভেতর আপনাকে হারানোর ভয় তৈরি হচ্ছে।
আমি জানি না কেন এমন মনে হচ্ছে...
মন বার বার বলছে হয়তো আপনাকে আপন করে পাওয়া হবে না।
কেন মনের এই চিন্তারোগ হলো বুঝতে পারছি না।
খুব ভয় হচ্ছে।
তানিশা একটু মজার ছলে বললো
আরে ধুর..
আপনার যতো বাজে চিন্তা ভাবনা।
আসলে আপনি হয়তো আমাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবেন।
তাই নানান ধরনের আজেবাজে কথা মাথায় আসে।
যাই হোক।
এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে।
এখন একটা কথা বলুন তো...
আপনি আমাকে প্রথম কোথায় দেখেছিলেন..?
সে অনেক কথা।
আপনাকে বললাম না
আমার বন্ধু আবীর আপনাকে দেখতে যেতে চেয়েছিলো...
হ্যাঁ বলেছেন।
কিন্তু আবীর আমাকে কিভাবে চিনে..?
আপনার বাবা মকবুল আঙ্কেল কে মোটামুটি বাজারের সবাই এক নামেই চিনেন।
আবীরের বাবা ও একজন ব্যবসায়ী।
আপনারা বছর দুই আগে স্ব-পরিবারে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেট গিয়েছিলেন মনে আছে..?
সেখানে আমি আর আবীর ও ছিলাম।
আবীরের বাবা হাশেম খান কে আপনার বাবা চিনেন।
কিন্তু আবীর কে ভালো ভাবে চিনেন না।
কারণ আবীর ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করেছে।
আপনারা যখন পোশাক দেখছিলেন তখন আবীর আপনাকে প্রথম দেখেছিলো।
সাথে আপনার বাবা ছিলেন,
এ জন্য সেদিন সেখানে যায় নি।
আপনার কি মনে আছে ...
সেদিন মার্কেটে আপনার মা গরমে অস্থির হয়ে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন...
একটা ছেলে আপনার মা কে পানির বোতল দিয়েছিলো...?
হুম মনে পড়েছে।
সেই ছেলেটাই আবীর।
আর আমিও পাশেই ছিলাম।
কিন্তু আপনার মা কিছুটা অসুস্থ হওয়ায় আপনারা কেউই আমাদের কে খেয়াল করেন নি।
আবীর আপনার বাবা কে চিনতো।
সেদিন আপনার মায়ের অসুস্থতার জন্য আপনার বাবার সাথে আলাপ হয় নি।
অবশ্য এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
সেদিন আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম।
আবীরও জানতো না মকবুল আঙ্কেল এর এতো সুন্দরী একটি মেয়ে আছে।
আর আমি তো ভালো করে আপনাদের কে চিনতামই না।
আপনাকে দেখার পর আমার সারারাত ঘুম হয় নি।
আপনার মুখখানা সব সময় চোখে ভাসছিলো।
হালকা গোলাপি রঙের থ্রি পিস এ আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো।
বিধাতার কি অপরূপ সৃষ্টি আপনি।
যে কোনো ছেলের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারেন আপনি।
যেনো আকাশ থেকে এক পরী ভুল করে মাটিতে নেমে এসেছে।
বুঝলেন আমার গোলাপ রাণী...
তানিশা এতোক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে সব কথা শুনছিলো..
আর কথার মাঝে সেই দিনের ঘটনায় ফিরে গিয়েছিলো...
মাহিমের কথায় যেনো বর্তমানে ফিরে এলো সে।
ও আচ্ছা ।
তাহলে আপনি আমাকে অনেক আগে থেকেই দেখে আসতেছেন তাই না...?
নজরবন্দি করে রেখেছেন আমাকে।
আপনার বন্ধু আবীর সে এখন
কোথায় আছে..?
আবীর এখন ঢাকায় আছে।
গ্রামে কম সময় থাকে।
সামনের সপ্তাহে আবীর বাড়ীতে আসবে।
এ জন্যই মনে ভয় হচ্ছে।
যদি আবীরের বাবা আপনার আর আবীরের বিয়ে ঠিক করে রাখে।
তখন আমার কি হবে..?
আমি কিভাবে আবীর কে বলবো...?
আর
আপনাকে ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ।
আমার মাথায় কাজ করছে না
আবীর আমাকে বলেছে
বিয়ে যদি করে সে আপনাকেই করবে।
উফ কি ঝামেলায় পড়ে গেলাম।
এখন কি হবে…?
একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা ই জানেন।
আপনি এসব কি বলছেন...
আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।
আমিও তো মহা ঝামেলায় পড়ে গেলাম।
সামনে আমার রেজাল্ট বের হবে।
সেই চিন্তায় আমি অস্থির,
এখন আবার কি ভয়ংকর চিন্তায় ফেলে দিলেন আপনি....
মাহিম বললো
আপনি তো আর এখনি বিয়ে করতে ইচ্ছুক নন।
তাহলে এতো ভাবনার কি দরকার...
আগে তো আবীর গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে আসুক।
পরে দেখছি কি করা যায়।
তানিশা
আপনি আমাকে সত্যিই কি পছন্দ করেন..?
কি হলো
উত্তর দিচ্ছেন না কেন..?
চুপ করে থাকবেন না
আমার প্রশ্নের জবাব দিন
প্লীজ প্লীজ প্লীজ...
তানিশা এবার একেবারেই চুপ হয়ে গেলো
কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
বাবা কে সে ভীষণ ভালবাসে।
তার কোনো আচরণে বাবা কষ্ট পাক এটা সে চায় না।
হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন...
হ্যালো...
তানিশা....
আপনি কি আমার কথার কোনো উত্তর দিবেন না।
হ্যালো....
বেশ কিছুক্ষণ পর...
গম্ভীর গলায় তানিশা মাহিম কে বললো
আপনার কি মনে হয়...
আপনি কি বুঝতে পারেন না...
আমার সাথে এতোদিন ধরে ফুল বিনিময় করছেন
অথচ আমার মন টা কি আজও বুঝতে পারেন নি....
কেমন প্রেমিক আপনি...
শুধু কি স্বপ্ন দেখলেই প্রেয়সী নিজের হয়ে যায়...
আপনার মন কে প্রশ্ন করুন...
সে আমাকে কতটুকু ভালবাসে...?
আপনার ভালবাসা যদি পবিত্র হয় এবং সত্যি হয়
তাহলে আপনার সাথে আমার সারাজীবন কাটবে।
আর যদি কোনো ছলচাতুরী করেন
তাহলে সেটা আজ হোক বা কাল
এক সময় ঠিকই সমস্ত ভালবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে।
ভালো থাকবেন।
পরে কথা হবে।
তানিশা ফোন কল শেষ করেই
এক গ্লাস পানি পান করলো।
এতো কঠিন কথা সে এ জীবনে কাউকে বলে নি।
কিন্তু পরক্ষণেই মাহিমের বলা কথা গুলো নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেলো সে
মাহিম সে মন থেকে পছন্দ করে ফেলেছে।
কি হবে এখন...
তার প্রেমের ফুল কি ফোটার আগেই ঝড়ে পড়ে যাবে...?
সে কি পাবে না তার প্রিয় মানুষ কে..?
এক অজানা ঝড় বয়ে চলেছে মনের ভেতর..
প্রেম কেন মনকে কাঁদায়...?
প্রেমের নাম যদি বেদনাই হয়
তাহলে আমার জীবনে কেন এলো এই প্রেম..?
এই প্রেমের শেষ পরিণতি কি শুধুই বিরহ...?
নাহ
সে আর ভাবতে পারছে না।
স্বপ্ন দেখার আগেই স্বপ্ন হয়ে গেছে দুঃস্বপ্ন।
কেন এমন হয়...?