শুকানো গোলাপ
অষ্টম পর্ব
রাতে তানিশার বাবা বাসায় ফিরে মেয়ে কে তার ঘরে ডাকলেন।
আয় মা বস এখানে।
তোর রেজাল্ট বের হবার সময় একদম ঘনিয়ে এসেছে।
রেজাল্টের পর কি করতে চাস কিছু কি ভেবেছিস...?
তানিশা মুচকি হেসে বললো,
হ্যাঁ বাবা
আমি তো ভেবেছিলাম বাংলায় অনার্স করবো।
তোমার কি ইচ্ছে বলো।
মেয়ের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন মকবুল চৌধুরী।
দেখ মা
তুই আর সৈকত আমার চোখের মণি।
সৈকতের চেয়ে তোকে নিয়েই আমি বেশি চিন্তিত থাকি।
তুই যদি চোখের আড়াল হয়ে যাস, জানি না কিভাবে বাঁচবো আমি।
কথা শেষ করতে না করতেই তাঁর চোখ ভিজে উঠলো।
বাবার চোখে পানি দেখে তানিশাও কেঁদে ফেললো।
ঠিক তখনই মা এসে বললেন
তোমরা আবার শুরু করলে...?
এমন ভাব করছো যেন রাত পোহালেই দুজন দুই মেরুতে চলে যাবে!
মেয়ে কে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে মকবুল চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
- শোনো রাবেয়া,
তানিশার জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।
রাবেয়া চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন
কি বলো এসব...
তানিশা তো অনার্স করতে চায়।
ছেলেটা কেমন?
খোঁজ খবর নিয়েছো...?
মকবুল চৌধুরী একটু চিন্তিত মুখে বললেন,
- না এখনো কিছু বলি নি। শুধু খবর এসেছে। ছেলেটাও লেখাপড়া করে।
তারা চায় আগে রেজিস্ট্রি হোক।
পরে ছেলেমেয়ে দুজনের লেখাপড়া শেষ হলে বাকী আনুষ্ঠানিকতা।
রাবেয়া দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,
আমার একমাত্র মেয়ে।
এই বিষয়ে আমি কোনো আপোষ করবো না।
মকবুল চৌধুরী স্ত্রী কে দৃঢ়তার সাথে বললেন,
মেয়ে কি শুধু তোমার...? আমারও তো।
আমি তো এখনো পাত্রপক্ষ কে কিছু বলি নি।
তোমার মতামতই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রাবেয়া চৌধুরী কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললেন,
আমি আর কি বলবো তুমি যেটা ভালো মনে করবে সেটাই হবে।
মকবুল চৌধুরী বললেন
-আমি এই কথাটাই তোমার কাছ থেকে আশা করছিলাম।
তুমি তো জানো
আমি জীবনে কোনোদিন তোমার মতের বাহিরে কোনো কাজ করি নি।
আজও তার ব্যতিক্রম হবে না ।
কিন্তু অনুরোধ একটাই
তুমি সব বিষয় যেমন যত্নশীল
তারচেয়ে অনেক বেশি আমার মেয়ের বেলায় হবে।
ও নিয়ে তুমি ভেবো না রাবেয়া।
এই বিষয়ে আমি তোমার আশার চেয়ে অনেক বেশি যত্নশীল হতে চাই।
রাবেয়া চৌধুরী বললেন
এখন তানিশা কে এই বিষয়ে কিছু জানানো ঠিক হবে না।
আগে রেজাল্ট বের হোক।
তারপর কথা বলবো।
স্ত্রীর কথায় সম্মতি জানিয়ে মকবুল চৌধুরী বললেন,
আচ্ছা ঠিক আছে।
তোমার মতামতের মূল্যায়ণ তো আমাকেই করতে হবে।
রাতের খাবার টেবিলে বসে তানিশা হেসে বললো ,
আমার রেজাল্ট যদি খুব ভালো হয় তাহলে আমি কি উপহার পাবো...?
বাবা হাসি মুখে উত্তর দিলেন,
বল মা তুই কী চাস...?
- না এখন বলবো না
আগে রেজাল্ট বের হোক
সময় হলে আমি আমার উপহার চেয়ে নেবো।
তখন কিন্তু কোনো আপত্তি চলবে না বলে দিলাম।
বাবা-মা এই কথার কোনো মানেই বুঝলো না।
সেদিন গভীর রাতে তানিশা মাহিম কে ছোট বার্তা পাঠালো...
মাহিম
আপনার ধারণা সত্যি।
বাবাকে কারা যেন আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
বাবা-মা কথা বলছিলো,
আমি আড়াল থেকে সব শুনেছি।
পাত্রের নাম ঠিকানা বলে নি।
শুধু আলোচনা করেছে৷
আপনি আবার আমাকে বললেন আপনার বন্ধু আবীর গ্রামের বাড়ীতে আসবে।
সব কেমন মিলে যাচ্ছে।
পাত্র কি তাহলে আবীর...?
এদিকে এই বার্তা পাবার আগেই আবীর মাহিম কে ফোন করে বলেছে।
আবীর গ্রামের বাড়ীতে আসবে শুধু পাত্রী দেখার জন্য।
এই কথা শুনে মাহিমের মন খুব খারাপ ছিলো।
এর মধ্যেই তানিশার এই বার্তা পেয়ে
সে দিশেহারা হয়ে গেলো।
মাহিমের বুকের ভেতর হাহাকার -
" সত্যিই যদি আবীর তানিশা কে বিয়ে করে নেয়... আমি কিভাবে এটা সহ্য করবো....?
চোখের সামনে ভেসে উঠলো তানিশার বধূরূপ।
হৃদয় ভাঙা আর্তনাদ কেউ শুনতে পেলো না।
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে।
কি হবে এখন...
কি করবো আমি....
এভাবে নিজের এতোদিনের প্রেম কে বিসর্জন দেবো...
কিভাবে আটকানো যায় এই বিয়ে...
আবীরের বাবা কেন এই বিষয় এখনো মনে রেখেছেন...?
দম নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হলো -
এক্সিডেন্ট এ মরে গেলেই বোধহয় ভালো হতো।
প্রেমের এই নিষ্ঠুর পরিণতি তো আর দেখতে হতো না।
এই পৃথিবীতে আমিই একমাত্র অসহায় প্রেমিক।
যার সব কিছু থাকা সত্ত্বেও সে কিছুই করতে পারছে না।
শুধু ছটফট করছে।
নিজেকে এতোটা অসহায় কখনো লাগে নি।
সব কিছু যে ক্ষমতায় পাওয়া যায় না
এটা আরো একবার খুব নিষ্ঠুর ভাবে প্রমাণ হলো।
কি নেই আমার জীবনে...?
উচ্চশিক্ষা, ব্যবসা, সম্পদ, খ্যাতি সবই আছে।
কিন্তু তবুও আজ প্রেম কে হারাতে বসেছি।
মাহিমের মনে প্রথমবারের মতো তীব্র উপলব্ধি এলো -
সবকিছু টাকা কিংবা ক্ষমতায় পাওয়া যায় না।
প্রেম কে হারাতে হয় সবচাইতে নিষ্ঠুরভাবে।
জীবন মাঝে মাঝে এমন কিছুর মুখোমুখি হয়,
যার মোকাবিলা কোনো ভাবেই করা সম্ভব হয় না।
মাহিমের ফোন বেজে উঠলো...
আবীর ফোন করেছে...
কিন্তু কেন....?