হাসান আজ অফিসে গেল কিছুটা আগে। আগে আগে যেতে ভালো লাগে তার । যদিও সবসময় পারে না। অফিসে ঢুকেই কাজে ঝাপিয়ে পড়া, ব্যস্ততা ভালো লাগে না। কাজ শুরুর আগে বসে একটু বিশ্রাম নেয়া, মাথা ঠান্ডা করার সুযোগ মন্দ না। আগে মাথায় সব কাজকর্ম, পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গুছিয়ে নিতে হয় । এরপর একশান। হাসান প্রথমেই ম্যাসেজগুলোর রিপ্লাই দিবে । কাজের সময়, ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে বিরক্তি লাগে । কম্পিউটারের স্ক্রীন খুলল হাসান। দেখল আতহার সাহেব ম্যাসেজ দিয়েছেন– তিনি আজ আসবেন না অফিসে। তার শ্বশুর পক্ষের কোন আত্মীয় মৃত্যু বরণ করেছে, তাকে সেখানে সারাদিন থাকতে হবে। মৃত আত্মীয়ের বাড়িতে অফিসিয়াল কাজের জন্য বারবার ফোনকল, ম্যাসেজিং ভালো দেখায় না। এজন্য সারাদিনের জন্য ইন্সট্রাকশন দিয়ে রেখেছেন আতহার সাহেব। হাসান পড়ে নিচ্ছে। আতহার সাহেব গুছানো মানুষ, তার গুছানো ভাবটাই হয়ত হাসানকে প্রভাবিত করেছে। অথবা হাসান নিজে বেশ গুছানো, এজন্যই হয়ত আতহার সাহেব কাজকর্মে আরাম পান তার সাথে । অগোছালো স্বভাবের কারো সাথে গোছালো স্বভাবের মানুষ একসাথে কাজ করলে ক্ষণে ক্ষণে ঝামেলা হয়, অস্বস্তি তৈরি হয় । আতহার সাহেব কাজের অবহেলায় কাউকেই ছাড় দেন না । তবে ২ বছরের চাকুরীকালে হাসানের সাথে আতহার সাহেবের তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি ।
হাসান ভাবছে, আজ তাহলে সিয়ামের চাকুরীর ব্যাপারটা আতহার সাহেবকে বলা হলো না। সিয়াম বেশ কয়েকদিন ধরেই বলছে, কোনো চাকরীর খোঁজ দিতে। সিয়ামের বাড়ি হাসানের উপজেলায়। হাসানের চেয়ে কয়েকবছরে ছোট হবে সে । হাসানের বাসারই উপর তলায় মেসে থাকে। কয়েক মাস হলো এই এলাকায় এসেছে। আগে থাকত তেজগাও এ। কী একটা চাকরী করত। ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার চাকরী খুঁজছে। সিয়ামের আচরণ অত্যন্ত উৎসুক, আনন্দিত ধরণের। সবসময়ই কেতাদুরস্ত। হাসানকে দেখলেই বড় ভাই, বড় ভাই করে। টুকটাক কাজ এগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। সেদিন হাসান যাবে মধুবাগ, সিয়াম তার পাশে দাঁড়িয়ে। সিয়াম নিজ উদ্যোগে রিকশা ডেকে ভাড়া পর্যন্ত ঠিক করে দিল। হাসান জানে তার কম্পানীতে এখন কোনো পোস্ট খালি নেই। কিন্তু আতহার সাহেবের কাছে কোনো অপশন তো থাকতে পারে, তাই না? অথবা তার বন্ধুদের কারো কম্পানিতে তো একটা চাকরীর ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারে। এতটুকু প্রত্যাশা হাসান আতহার সাহেবের কাছে রাখে। হাদিসে এসেছে, ‘একজন মুমিন যতক্ষন আরেকজন মুমিন ভাইয়ের সাহায্যে লেগে থাকে, ততক্ষন আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।” এই হাদিসের উপর হাসান সবসময়ই আমল করতে সচেষ্ট। একসময় সে ছিল সচেষ্ট, কিন্তু এখন সে রীতিমত উদগ্রীব। মানুষকে সাহায্য করার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। তার বাবা বলে, মানুষকে সহজে বিশ্বাস তোকে ভোগাবে একদিন, মানুষ তোকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবে, ফাঁদে ফেলবে। সময় থাকতে সতর্ক হয়ে যা। হাসান শুনে। মাথা নাড়ায় তার বাবার কথায়। আসলে তার বাবার কথাও তো একেবারে ফেলনা না, তাই না? মানুষ তো সত্যিই অনেক খারাপ হয়ে গেছে আজকাল। হাসান ভাবে, তার আসলেই একটু সতর্ক থাকা দরকার। সহজ বিশ্বাসে কারো উপকার করতে গিয়ে ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। এই সিয়ামের মতিগতিই কি সন্দেহের না? সে কেনই বা আগের চাকরি ছাড়ল? আর তার এই অতিভদ্র আচরণের পেছনে অন্য কোনো কারণও তো থাকতে পারে। হাসান ভাবল, সিয়ামের ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর করবে। তারপর তার চাকরির ব্যাপারে ভাবতে হবে। এর আগে নয়।
অফিস থেকে বাসা ফেরার পথে ইমরুল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল হাসানের । ভদ্রলোক একই বিল্ডিং এ ৪ তলায় থাকেন। তার বড় ছেলের বয়স ১৫। তার বয়স ৩৫। আরো দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তিনি সুখেই আছেন বলে মনে হয়। ইমরুল ভাইয়ের স্বভাব অতি আমুদে ধরণের। সবকিছুইতেই তার চোখে কৌতুকের হাসি চকচক করে। আর একটানা কথা বলতে থাকেন। অপরজন কি বলল না বলল তার প্রতি খেয়াল থাকেনা । আজও বলা শুরু করলেন, হাসান ভাই, আপনি তো ধরা ভাই! শিওর ধরা। চালাক হন মিয়া। সিয়াম পোলাডা আপনার লগে ঘুরে ক্যান? পাত্তা দিবেন না।
কো-ইন্সিডেন্স হোক আর যাই হোক, ইমরুল সিয়ামের ব্যাপারেই কথা তুলল। এজন্য খানিকটা আগ্রহ বোধ করল হাসান।
‘কেন বড় ভাই?’
‘আরে জানেন না? অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ, হা হা। এলাকার বইলা বেশি সাঁয় দিয়েন না হ্যারে। আমার লগেও লাইন দেয়ার ট্রাই নিতাছে সিয়াম। জোকারি করে আমার সাথে, ভাবছে আমি সোজা লোক। রাখ তোর জোকারি, এমন কঠিন চোখে তাকাইছি! বলছি, আমার বড় পোলার চেয়ে কত বড় হবি তুই? বলে, ৫ বছর হবে। বললাম, ৫ বছর? দেখতে তো সেম সেম লাগে। এবার মাথা চুলকায়। কইলাম, সম্মান দিয়া কথা কইবি। দূরে দূরে থাকবি।’
সিয়াম ইমরুল ভাইয়ের পরিচিত কেউ না। বেশি দিন হয় নি যে তাকে চেনেন। তবুও তিনি তার মধ্যে চোরের লক্ষণ দেখে ফেললেন। সোজাসাপ্টা সব বলে ফেললেন, হাসান ভাবছে। কারো ব্যাপারে এত দ্রুত কিছু বলে ফেলা ঠিক না। কিন্তু ইমরুল ভাইয়ের উদ্দেশ্য ভালো, এটা নিশ্চিত। ইমরুল কথা চালিয়েই যাচ্ছে। কথা বলতে বলতেই বাসার গেটে ঢুকে গেল দুজন। হাসান থাকে নিচের তলার এক রুমে। একা। রুমটা বানানো হয়েছিল কেয়ারটেকারের জন্য, কিন্তু বাড়িওয়ালা কেয়ারটেকার না রেখে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। কেয়ারটেকারের দায়িত্ব বাড়িওয়ালা নিজেই পালন করার চেষ্টা করে, থাকে অন্য বাসায়। সকাল, বিকাল, দুপুর এই বিল্ডিং এর আশপাশে ঘুরে যায়। সিসিটিভি লাগিয়েছিল মাস দুয়েক আগে। বাড়িওয়ালা সপ্তাহ খানেকের জন্য গেছিল মেয়ের বাড়ি বেড়াতে । এর মধ্যেই এক রাতে চোর সিসিটিভি ক্যামেরার সব সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে গেল । সিসি ক্যামেরা চোরের দৃশ্য ধরবে কি! চোরই সিসি ক্যামেরাকে গাপ করে দিল। হাসান ছিল তখন গ্রামের বাড়িতে। সে এসে জানতে পারে চুরির ঘটনা। বাড়িওয়ালা বড়ই ঘাউড়া ধরণের লোক। নিশ্চয়ই হাসানকে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদ করত চুরির ব্যাপারে, যদি সেসময় সে ঢাকায় থাকত । কারণ তার রুমই সবচেয়ে নিচে, গেটের কাছে। কিন্তু, আল্লাহর কি যে দয়া! বোঝা মুশকিল। । হাসানের ইচ্ছাই ছিল না গ্রামে যাওয়ার। হঠাত শেষ মুহুর্তের সিদ্ধান্তে সে গিয়েছিল গ্রামের বাড়িতে। আর এর মধ্যেই চুরি। হাসানের মা ভাবেন, হাসানের সাথে আল্লাহর এক্সট্রা রহমত আছে, আল্লাহ তাকে নিরাপদ রাখেন। কিন্তু হাসানের ধারণা, আল্লাহ সবাইকেই নিরাপত্তা দেন, কিন্তু সবাই সেটা উপলব্ধি করতে পারে না।
মাগরিবের আর ৪৫ মিনিটের মত বাকি। হাসান যাবে পাইটির দিকে, খোলা মাঠ ওদিকে । স্থানীয় ছেলেরা খেলে । অনেক দূর থেকেও আসে দলবেঁধে । হাসান সেখানে খালি পায়ে হাঁটে কিছুক্ষন। বিকালের হালকা রোদ, দিগন্ত, ঘাস, গাছপালা সবই উপভোগ করার মত। অন্তত এই ঢাকা শহরের ভেতরে এমন জায়গা কম। হাসান সময় কাটায়, ছেলেদের খেলা দেখে। আর মাঝে মাঝে দূরে তাকায়। অনেক বড় এলাকা, খোলামেলা– তাই দূরে তাকিয়ে থাকা যায়। শহরের মত চারদিকে বিল্ডিং এ ঘেরা না। ব্রিটিশ জার্নাল রিপোর্ট করেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হবে। মায়োপিয়া হলো চোখের একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা দূরের দৃশ্য খুবই ঝাপসা দেখতে পায়, সাথে চোখে, মাথায় ভয়ানক ব্যাথা। ডেস্ক জব, সারাক্ষণ কম্পিউটার, মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকার ফলে এই রোগ আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে। হাসান এজন্য সকাল বিকাল দূরে তাকিয়ে নিজের চোখ রক্ষার কসরত করে। কসরতই বলতে হবে। আগের যুগের মানুষেরা নিশ্চয়ই ভাবতেও পারত না যে, মানুষকে একসময় রোগ থেকে বাঁচার জন্য দূরে তাকিয়ে থাকার ব্যায়াম করতে হবে। আধুনিক যুগের যন্ত্রসভ্যতা খুবই জটিল, তাই মানুষের জীবনে জটিলতার জন্ম দিচ্ছে। অথচ মানুষ আশা করত, যন্ত্রনির্ভর যুগ তাদের খুব সহজ আরামের একটি জীবন উপহার দেবে!
হাসান হাঁটতে হাঁটতে ঠিক করল মানিক চাচাকে তার জমানো টাকা থেকে লাখ খানেক টাকা দিবে ব্যাবসায় বিনিয়োগ হিসেবে। হাসান স্বল্প খরচে চলার চেষ্টা করে। বাসায় টাকা পাঠাতে হয় না সবসময়। এজন্য কিছুটা টাকা জমানো থাকে সবসময়। মানিক চাচা ব্যাপারটা জানেন। এজন্য হয়ত হাসানের কাছে টাকা চেয়েছেন। ঠিক টাকা চাওয়া না, ব্যাবসায় বিনিয়োগ। হাসানও আগ্রহী। হাসানের আগ্রহের পেছনে কারণ দুটি– প্রথমত, হাসান এক পর্যায়ে চাকরী ছেড়ে ব্যাবসা করতে চায়, এজন্য এখন বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, মানিক চাচা বিপদগ্রস্থ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে সাহায্য করা উচিত। তবে জানতে হবে, চাচা ব্যাবসা কিভাবে করতে চায়।
মাগরিবের পর হাসান দেখল আজমল তার হোয়াটসএপে ম্যাসেজ দিয়েছে। নাম্বার তো সেভ করা নেই। সে বুঝল আজমলের পুলিশি পোশাকের ছবি দেখে। হাসানের কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই। ভাবল ম্যাসেজ আনসিন করে রাখবে। পড়ে থাকুক, সমস্যা কি। হাসানের মনে হচ্ছে, আজমল চাচ্ছে তার সাথে খাতির জমাতে। একটু বেশিই আগ্রহী লেগেছে তাকে। নিজে থেকে ফোন নাম্বার নিল, দিনের মধ্যেই নক দিল। আগ্রহের ব্যাপারটা মোটামুটি পরিস্কার। তবে আগ্রহের পেছনের কারণ পরিস্কার না। এমনও না যে, হাসান যখন হাইস্কুলে পড়ত, তখন খুব একটা কথাবার্তা হতো বা আন্তরিকতা ছিল আজমলের সাথে। আজমল পুলিশের চাকরি করছে– এটা হাসানের কাছে খুশি হওয়ার মত ব্যাপার না, বরং পুলিশের চাকরি না করে যদি অন্য চাকরি করত, ধরা যাক চাকরি না করত, চাকরি খোঁজার ব্যাপারে হাসানকে নক দিত– তাহলে হাসান আগ্রহের সাথে আজমলের ম্যাসেজ দেখত। অন্যকে সাহায্য করার ব্যাপারে হাসান অনেকটা আচ্ছন্নের মত আগ্রহ বোধ করে। আর অন্য কারো সাহায্য নেয়ার ক্ষেত্রে এর বিপরীত। হাসানের ল্যাপটপের স্ক্রীনে হোয়টসএপ খুলে আছে। আরো কয়েকজনের ম্যাসেজ আছে, রিপ্লাই দিবে। মাকে ভিডিও কল দিতে হবে । সপ্তাহে ৩/৪ দিন সে কল দিবেই তার মা’কে। পারলে প্রতিদিন। হাসান একটা ম্যাসেজে ক্লিক করতে যাবে, এমন সময় দেখল কল এসেছে। আজমল কল দিয়েছে। হাসান রিসিভ করল।
‘আসসালামু আলাইকুম বড় ভাই।’
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কি অবস্থা আজমল।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। ভালো ভাই। ভাই এলাকায় থাকি মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ করব আপনার সাথে। ‘
‘আচ্ছা সমস্যা নাই।’
হাসান সাক্ষাৎ করার প্রসঙ্গ এড়াতে চাচ্ছে। এজন্য যেটা করতে হবে– অন্য কোনো বিষয়ে কথা তুলতে হবে, যেটাতে আজমল উৎসাহিত বোধ করবে কথা বলতে। কী বলা যায়?
‘আজমল।’
‘ জি ভাই।’
‘তোমার না বাবু হইছে শুনছিলাম।’
‘হ্যাঁ, আরিশের বয়স তো প্রায় দুই বছর।’
‘মাশাআল্লাহ। নাম কী যেন বললা?’
‘নাম রাখছি – আরিশ রোহান খান।’
‘বেশ নায়োকচিত নাম।’
‘বড় ভাই, ও দেখতেও মাশাআল্লাহ নায়কের মত হইছে। আপনার ভাতিজার ছবি পাঠায় দিব ভাই।’
‘হুম।’
‘ভাই, ঢাকায় আছেন বহুদিন– ব্যাবসা বানিজ্য কিছু করেন না? মানে চাকরির পাশাপাশি করবেন।’
‘না করি না এখনো, তবে ইচ্ছা আছে।’
‘আমারও শখ যে একটা ব্যাবসা থাকুক। কিন্তু সরকারী চাকরী করলে আইনের ঝামেলা।’
‘কী ঝামেলা?’
‘আইনে আছে, সরকারি কর্মচারীর নিজ দায়িত্ব পালনের বাইরে অন্য বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত লাভজনক কাজে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ।’
‘ও আচ্ছা।’
‘ কিন্তু বিজনেস আমি করবই। শ্বশুরের কাছে কিছু টাকা চাইলাম শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টের জন্য । দেখি কবে দেয়! শ্বশুরের তো মাশাআল্লাহ শহরের মেইন রোডে বাসা। ৪ তলা বাড়ি । ৬ তলা ফাউন্ডেশন। আর আমার ওয়াইফের তো ভাই বোন নাই! হি হি হি।’
হাসানের ইচ্ছা হচ্ছে না আর কথা চালিয়ে যেতে। কিছু একটা বলে রেখে দিতে হবে। আজমল ছড়ছে না, সে কথা বলে মজা পাচ্ছে।
‘বড় ভাই, ব্যাবসা করলে বইলেন। আমি আপনার বিজনেস পার্টনার হলাম, ইনভেস্টর হলাম। কি বলেন ভাই? ‘
‘দেখা যাক।’
‘রক্তের মধ্যে বিজনেসের নেশা ঢুকে গেছে, বলতে পারেন। হা হা হা।’
হাসান বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু সে মুখের উপর না বলতে পারে না। কল রেখে দিবে – এটাও বলতে ইতস্তত লাগছে। কিন্ত আজমলকে থামায় কে?
‘ভাই, কথা মনে হয় বেশি বলতেছি! কিছু মনে কইরেন না!’
‘ঠিক আছে, সমস্যা নাই। কি বলছিলে বলো।’
‘আরেকদিন বলব ভাই। বাসায় ফিরছেন বিশ্রাম নেন। আমার এখন ডিউটি শুরু হবে। হা হা।’
অবশেষে কথা শেষ হলো আজমলের। হাসান হাঁফ ছাড়ল। শরীরের ক্লান্তি টা যাচ্ছে না তার। স্যালাইন বানিয়ে খেতে হবে এক গ্লাস। মনে হচ্ছে প্রেসার লো হয়ে গেছে। আগে মা’কে কল দেওয়া যাক, ভাবল হাসান। হোয়াটসেপের ম্যাসেজের আওয়াজ এল আবার । আজমল ছবি পাঠিয়েছে তার ছেলের। ছবি দেখে হাসান অবাক। ২ বছরে বাচ্চা, মুড নিয়ে বসে আছে। হাতে ঘড়ি, চোখে সানগ্লাস। পাংকু স্টাইলে চুল কাটা। নায়ক স্টাইলে ৩০ ডিগ্রি এংগেলে মাথা বাঁকা করে উপরে দিকে তাকিয়ে আছে। হাসান কি বলবে এই ছবি দেখে বুঝতে পারছে না । বারাকাল্লাহ– কি বলা যায়? নাকি বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য দুআ করা উচিত। বাচ্চা তো তার বাবার হাতেই দেখি অনিরাপদ । আজমল ম্যসেজ দিয়েছে– ব্যাটা বাপকে ছাড়ায় যাবে, কিউট হইছে না আপনার ভাতিজা? হাসান স্তম্ভিত হয়ে আছে।
(চলবে ইন শা আল্লাহ)