গাজি তুমি তীরের উপর আনতে চাও নিয়ন্ত্রন?
তোমার নফস যে তপ্ত ভীষণ, উথলে পড়ে কুমন্ত্রণ!
পয়লা তাকে আনতে বশে, শান্ত করো দেহমন!
খুব খেয়ালে পরখ করো, হৃদস্পন্দন ঠাহর করো,
সেথায় যদি অস্থিরতায়, খুব ধকধক আওয়াজ শোনায়,
তবে প্রিয় সমঝে নিও,
প্রভুর মদদ পাওনি, থামো!
পাঁচ ইন্দ্রিয় সজাগ করে, ভাবো তামাম জাহান ভুলে,
প্রভুর কদর বিশ্বমাঝে, তার হুকুমই তোমার তুণে।
যিকির করো ক্ষণে ক্ষণে, শীতল ঝর্ণা হৃদয়-বনে।
আল্লাহ নামের শীতল জলে, ভিজাও তোমার তনু-মন,
সেই নামেরই ভালোবাসায়, ঝড়াও বিন্দু অশ্রু জল।
নিজেকে আখি শান্ত করো,
অতি খেয়ালে ঠাহর করো,
প্রশ্বাসের খুব গভীরে চলো,
শুনবে সেথায় প্রতি দমে-
যিকির তোমার রবের নামে,
দুলছে হৃদয়-মাল্লা,
আল্লাহ আল্লাহ
আল্লাহ আল্লাহ।
বুঝবে এবার কোন সে বলে
হচ্ছে সজাগ বাহুর পেশি,
হাতে নাও ধনু, তুণ থেকে তীর,
টানটান করো ছিলার রশি।
নিশানা বরাবর উঠাও দু-চোখ,
নজর তোমার করো স্থির।
চোখ বুজে বার অনুভব করো,
হৃদয় মাঝে রবের যিকির,
চোখ মেলে দেখো- পরখ করো
নিশানা তোমার সামনেই হাজির!
এবার শ্বাস ছেড়ে দাও, ছুড়ে দাও তীর,
যতদূর হোক পাল্লা,
আল্লাহ আল্লাহ,
আল্লাহ আল্লাহ।
গাজি, তোমার রবের নামে,
বাণ ছুঁড়লে সঠিক তানে
তুমি না আখি তোমার রবই,
তীর পৌঁছাবেন ঠিক নিশানে।
জানবে তুমি, আল্লাহর তীর
ভ্রষ্ট হয় নি কোনও ক্ষণে।
কবিতাটি নিয়ে কিছু কথাঃ
গাজিয়া-রোম। রোম সীমান্ত এলাকায় একটি মুসলিম সৈন্যদল, যারা আব্বাসীয় খেলাফতের সময় থেকেই বাইজেন্টাইন সীমান্তে অবস্থান করে সীমান্তকে নিরাপদ রাখার জন্য শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত। তারা খাস ভাবে এই কাজের জন্যই নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছিল। তাদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল অত্যন্ত চমৎকার। তারা বড় বড় আলিম ও শায়খদের অধীনে অবস্থান করতেন, নিজেদেরকে ইসলামের বাস্তবিক শিক্ষায় দীক্ষিত করতেন। উসমানি সালতানাতের সূচনালগ্ন থেকেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত তারা সুলতানের সাথে বিভিন্ন জিহাদে অংশ নিতেন এবং তা শুধু আল্লাহর জন্যই করতেন। তারাই ছিলেন উসমানি সম্রাজ্যের প্রাথমিক পর্যায়ের সেনাবাহিনী। আলিমগন সেনাদের যুদ্ধের আধ্যাত্বিকতার দর্শন শিক্ষা দিতেন। এর অনুসরণে সেই সেনারা পরিণত হয়েছিল হৃদয়-শরীর উভয়ের শক্তিতে বলিয়ান অনন্য একেকজন যোদ্ধায়। কবিতাটি এর একটি নিদর্শন।
কবিতাটি আমরা এভাবেও বুঝতে পারি-- আল্লাহর স্মরণ হৃদয়ে বুলন্দ না থাকলে একজন মানুষ তার জীবনের সঠিক লক্ষ্য থেকে পথচ্যূত হবেই। সমাজ তাকে তার পথ থেকে সরিয়ে দেবে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মূল দূর্গ হলো অন্তর। দূর্গের প্রাচীর হলো আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান ও সেনা হলো আল্লাহর স্মরণ।
(কবিতাটি লিখা হয়েছে, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত মুহতারাম প্রিন্স মুহাম্মাদ সজলের সানজাকে উসমান বই এর একটি অংশের গদ্যরূপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। লেখক, প্রকাশকের প্রতি যথার্থ কৃতজ্ঞতা)