Posts

নন ফিকশন

রুহের কান্না

September 12, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

52
View

নিরন্তর ছুটে চলা এক হায়াত। গোলকধাঁধায় ঘোরার মত, অনিঃশেষ যাত্রা যেন। হায়াতের ভাঁজে ভাঁজে থাকা আনন্দ-বেদনা-কষ্ট গুলো আমাদের নিজ স্বত্বাকে এলোমেলো করে দেয়, সময়ের সাথে আমরা বদলে যাই। ঝড়ের হাওয়ায় যেমন সবকিছু বদলে যায়। 

                                                        শত ব্যাস্ততা। 

                                                   কত কথার ফোয়ারা ।

                                                    হাসি-আনন্দ-বেদনা। 

                                                       ঘূর্নায়মান চক্র। 

                                                     ছুটে চলছি। চলছিই।

                                                  রুহের নিশ্চুপ আহ্বান, 

                                                    শুধুই আকুতি আজ। 

                                                    কিছু বলতে চায় সে। 

                                                  কিন্তু সেই সময়? সুযোগ? 

                                               দিব না আমরা, পণ করেছি!

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি রহমাতুল্লাহ আলেহ বলেছেন,

                                                  এবার তুমি থামো,  

                      তোমার ভেতরে যে কথা বলতে চায় তাকে বলতে দাও।

একাকী নিরালায় যখন নিজের সাথে কথা বলা হয়,  নিজের ভেতরে জমে থাকা কথা গুলো খোলামনে শুনার অবসর হয়, তখন ধাপে ধাপে বেরিয়ে  আসে অনেক সত্য, উন্মুক্ত হয় নিজের গহীনের আহ্বান।  নিজের নিঁখুত, নিষ্কলুষ আমি’কে ঠিক এই সময়ে অনুভব করা যায়। যেই আমি অন্য কিছুতে বদলে গিয়েছিল। 

আমাদের অন্তরের গহীনে থাকা এই কণ্ঠস্বর একটি পবিত্র শক্তি– যা নিজের ভিতরের প্রকৃত স্বত্তাকে ও এর আকাঙ্খাকে উদ্ধার করে আনার বাহন। কিন্তু আমাদের ব্যাস্ততা-বাহ্যিকতা-আমিত্ব অধিকাংশ সময়ে এই কন্ঠ রোধ করে রাখে। এই কন্ঠকে মুক্ত করা উচিত, সরব হতে দেয়া উচিত। সাধারণত জীবনের দুঃসময়গুলোতে নিজ রুহের কণ্ঠস্বর সরব হতে শুরু করে। দুঃসময়ে আমরা নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকি– আমার এমন কেন হলো…? কী ভুল ছিল আমার? এই প্রশ্নগুলো রুহের জবান খুলে দেয়।

আমার এই অস্থিরতা কেন?

কেন আমি স্বস্তি পাচ্ছি না?

আমি কী খুঁজছি?

কেন খুঁজছি?

আমি আসলে কী চাই?

যা করেছি, করছি তা কি আমি চাই ?

হৃদয়ের গহীনে কি কোনো সুপ্ত ব্যাথা আছে? যা ভিতর থেকে কিছু করতে বাঁধা দিতে চাচ্ছে, যেগুলো আমি করছি মানুষের চাপে, মানুষকে খুশি রাখার জন্য ?

মানুষের সন্তুষ্টি-সমালোচনার ভয় না থাকলে আমি কী করতাম?

অন্তর কি কাঁদছে? গোপনে? 

কেন?

কেন এই অস্থিরতা, কেন এই কান্না?

জীবন কি অর্থপূর্ণ কিছু ?

নাকি গতিময় মিথ্যা একটা স্বপ্ন?

হায়াতের যাত্রার শেষে আমি কোথায় পৌঁছাবো?

কী আমার মাকসাদ?

কেন কিছু কষ্টের কোনো উপশম নেই? কেন মনে হয় সেগুলো অন্যায্য?

কেন কিছু কষ্টে, কিছু ব্যাথাময় বাস্তবতায় কারো উপর ভরসা রাখা যায় না?

নিজের উপর আস্থা হারিয়ে যায়? 

হায়াতের অনভিপ্রেত কষ্টগুলো কেন আসে?

হায়াত কি এতই নির্মম? 

মৃত্যুতে, হঠাত দূর্ঘটনায় আপনজন কেন হারিয়ে যায়? 

কোথায় যায়?  তাদের স্মৃতি কেন মুছে যায়?

প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে আমরা কীভাবে আবারও হাসি-আনন্দে দিন কাটাতে শুরু করি? মানুষ হিসেবে এটা কি আমাদের কপটতা? 

কেন সবকিছু থাকার পরেও কখনো নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়?

কেন, কোন ভরসায়, কোন মোহে আবার নিঃসঙ্গতা ভুলে যাই?

নিজের নিঃসঙ্গতাকে ঢেকে রাখি কেন?

কেন নিজেকে প্রবোধ দিয়ে স্রোতে ভাসিয়ে দিই?

কেন আবার কষ্ট ফিরে ফিরে এসে জীবনকে নাড়িয়ে দেয়?

কেন?

প্রশ্নগুলোর বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে এবার নিজের গহীনে লুকানো রুহের কন্ঠস্বরে কান পাতার সময় । এই কন্ঠস্বর আপনার নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। এই মুহুর্তটাতে মহান আল্লাহর স্মরণকে নিজের সঙ্গী করলে ও তাঁর কাছে নিজের সবকিছুকে সমর্পন করে দিলে রুহের কন্ঠস্বরও তার বাঁধ ভেঙ্গে দেয় । 

রুহ আপনাকে জানাবে আপনার অস্থিরতার কারণ, কেনই বা আপনার ভেতরে এত হাহাকার । সে বলবে আপনার জীবনের গতিপথ মূল পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। এজন্য রুহ নিজেও অশান্ত, সে স্বস্তি ফিরে পেতে চায়। সে চায়, তাকে যেন আপনি তার মালিকের নৈকট্যের পথে চলে প্রশান্তি পেতে দেন। সে চায় তার রবের দয়া, নিরাপত্তা, অবিভাবকত্বের শীতল ছায়া । রুহ চায় আপনি রবের পথে চলে হায়াতের প্রত্যেকটা ক্ষণ ও ঘটনার অর্থ খুঁজে পান, খুঁজে পান পুরো হায়াতের সত্যিকার মানে। এই খুঁজে পাওয়া আপনাকে অনিশ্চয়তার ভয় থেকে মুক্তি দিবে। রুহ চায় নিশ্চয়তার আনন্দে কেটে যাক আপনার সব অস্থিরতা, হাহাকার। 
 

নিজের ভেতরের এই আহবানগুলো এক একটি কল্যাণের ফোয়ারা। এই ফোয়ারার প্রবাহে আপনি নিজের সফলতার পথ ও পরিক্রমা কখনো জোছনার চাঁদের প্রতিচ্ছবির মত স্পষ্ট দেখতে পাবেন । 





 

Comments

    Please login to post comment. Login