Posts

উপন্যাস

পল্টনে জ্যামবন্দি নাসিরুদ্দীন হোজ্জা (রম্য উপন্যাস) ৬ষ্ঠ পর্ব

September 14, 2025

ইহতেমাম ইলাহী

47
View

(৫ম পর্বের পর) 

                                   (৫) (নতুন পাতায় শুরু হবে এখান থেকে)

 

মুরাদ
হোজ্জা মার্কেটে যেতে রাজি হয়েছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম উনি রাজি হবেন না। মা জোড় করে পাঠাচ্ছে আমাকে। আমি, হোজ্জা, কবিরের জন্য তিন সেট পাঞ্জাবী পাজামা কিনতে হবে । টাকা মা’ই দিবে।
  ‘এখন পাঞ্জাবী দিয়ে কি হবে মা?’
  ‘আরে আজাদের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। হোজ্জাকে সাথে নেয়া যায় কি না ভাবছি। উনি মুরুব্বি হিসেবে গেলে একটা অন্যরকম ব্যাপার হবে না!’
  ‘হোজ্জা মনে হয় রাজি হবেন না মা। আর ভাইয়া এখন পাত্রী দেখতে না করেছে।’

মা আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালেন।
  ‘তোকে যেটা বলেছি সেটা কর আগে। হোজ্জাকে সাথে নিয়ে পছন্দ করে পাঞ্জাবী কিনে নিয়ে আয়।’
মা’র জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে গেলাম। নাহয় মার্কেট ঘুড়ে কেনাকাটা করা আমার খুবই অপছন্দের। এই উসিলায় হোজ্জার মার্কেট ঘোরা হবে অবশ্য। 


কয়েকটা দোকান ঘুরে ৪ নম্বর দোকানে হোজ্জার জন্য পাঞ্জাবী পছন্দ হলো। দোকানী হোজ্জার পরিচয় শুনে কফি, কেক খাওয়ালো । সুন্দর আচরণ করল।
একটা পাঞ্জাবী দেখিয়েছে। পাঞ্জাবীর কাপড়, ডিজাইন সবই সুন্দর মা শা আল্লাহ। হোজ্জারও পছন্দ হয়েছে।
হোজ্জাকে বললাম,  হোজ্জা, আরও দেখি? অন্য দোকানও আছে। 
    –এখানে যত দোকান, আর যত পাঞ্জাবী। দেখলে তো দেখা শেষ হবে না।
   –তাও ঠিক হোজ্জা। আমারও ভালো লাগে না।
    –পছন্দ হয়েছে দাম জিজ্ঞেস করে কিনে নাও। বেশি পাঞ্জাবী দেখলে পরে দোটানা তৈরি হবে, এটা ভালো না সেটা ভালো। মাঝে দিয়ে মন অস্থির চঞ্চল হয়ে যাবে।

দোকানীকে বললাম, ভাই দাম? তিনি আমাদের দিকে নির্মল হাসি নিয়ে তাকালেন। যেন দাম জিজ্ঞেস করে তাকে অপমান করা হয়েছে। ফ্রীতেই পাঞ্জাবী দিতে চান। ভাবছি, ফ্রী দিলেও ফ্রী নিব না। প্রশ্নই আসে না।
দোকানী বললেন, আপনাদের সাথে দামাদামি করব না। সবার সাথে তো দামাদামি চলেনা? চলে?
  -- তা অবশ্য চলে না!
  -- জি। এজন্য শুধু কেনা দামটাই দিবেন। লাভের দিকে তাকালে আর ভিনদেশের ভদ্রলোকের কাছে নিজের দেশের মান সম্মান বলে কিছু থাকে?
  -- কত দিব বলেন?
  -- ৩৫০০৳।  একদম এই দামে কিনছি। শুধু টাকাটা দিয়ে পাঞ্জাবী হাত বদল করব।

আমি কিছু বলতে গিয়েও চুপ করলাম। এই পাঞ্জাবীর দাম ৩৫০০ টাকা হতে পারে না। কিন্তু হোজ্জার চেহারায় সন্তুষ্টির ছাপ। তিনি মনে হয় ভাবছেন, দোকানদার লোকটি তো ভালোই! হোজ্জা আমার দিকে সমর্থনের আশায় তাকালেন। আমি চোখ স্থির করে রাখলাম। এই স্থির চোখের বিশেষ কোনো অর্থ বের করা যায় না। একবার ভাবছি দাম নিয়ে কথা বলব।  কিন্তু কেন যেন মনে চাচ্ছে না। জানি দোকানী ডাহা মিথ্যা বলছে। তবুও হোজ্জা লোকটির কথা বিশ্বাস করেছেন। তার এই ভালো বিশ্বাস ভাঙ্গাতে মন সাঁয় দিচ্ছে না । লোকটার প্রতিও রাগ হচ্ছে। হোজ্জার সাথে সে গল্প জমিয়ে ফেলেছে।

৩৫০০ টাকা বের করে দিয়ে বিদায় নিলাম ।
হোজ্জা বললেন, কেনা দামে পাঞ্জাবী দিয়ে দিল? এত ভালো মানুষ আমাদের সময়েও কম ছিল। খুবই কম। আল্লাহ তার ভালো করুন।
আমি চুপ করে আছি।

চারদিকে গিজগিজ ভিড়। ভ্যাপসা গরম। দ্রুত কেনাকাটা শেষ করতে পেরে আরাম বোধ হচ্ছে। কবির নিজের জন্য পাঞ্জাবী কিনে ফিরে এসেছে । সে আমার হাতে ব্যাগের দিকে তাকাল।
    ভাই, পাঞ্জাবী কিনেছেন আপনাদের?
    –হোজ্জার জন্য কিনেছি। আমার আজ কিনতে ইচ্ছে করছে না।    
    –ওহ।
    –তুমি কিনেছ?
    –জি ভাই কিনেছি। এই যে।
    –পাজামা কিনব এখন, চলো।


কবির হোজ্জার পাঞ্জাবী হাতে নিয়ে দেখল। হোজ্জা যেন শুনতে না পান এমন স্বরে কবিরকে বললাম, পাঞ্জাবী কত দিয়ে কিনেছি বলো তো?
    – ২০০০৳ - ২২০০৳ হবে।
    – ৩৫০০ নিয়েছে। বলেছে কেনা দাম।
    –আহ হা। এরা মিথ্যার হাড়ি ভাই। দামাদামি করলেন না?
    –যাক। বাদ দাও। ভালো লাগে না। তোমার পাঞ্জাবীটাও সুন্দর হয়েছে কবির।
    –জি ভাই!


বাড়িতে এসে একটা খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মাসুমকে নাকি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফ্যামিলি সন্দেহ করছে, তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কী একটা অবস্থা!  গতকাল রাতে নাকি সে বাড়িতে যায় নি। আজও তার খোঁজ নেই। থানায় জানানো হয়েছে।

দুইটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এক দুশ্চিন্তা বন্ধু মাসুমের জন্য। আরেকটা দুশ্চিন্তা হলো মাসুমের ফোন আমাদের বাসায়। পুলিশ যদি কোনোভাবে ফোনের অবস্থান খুঁজে বের করে! কঠিন প্যাঁচে পরে যাবো।  বাইরে ভীষন গরম থেকে এসেছি। এসব ভেবে মাথা আরো গরম হয়ে গেছে আমার। দ্রুত গোসল করা দরকার। হোজ্জার গোসলের বন্দবস্ত করে আমি চারতলায় চলে যাবো।
  ‘বৎস, মুরাদ। চিন্তিত লাগছে তোমাকে! কারণ কী?’
হোজ্জাকে কি সব কিছু খুলে বলব? না বলে থাকাটা ঠিক হবে না। বলি।
    ‘হোজ্জা, মাসুম কিডন্যাপড হয়েছে সম্ভবত। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
    ‘বলো কী!’

হোজ্জা খানিকটা অস্থির বোধ করছেন। তাকে পুরো কাহিনী শুনালাম। বাড়িতে মাসুমের ফোন রাখার বিপদটা বুঝিয়ে বললাম। পুলিশ বিশেষ পদ্ধতিতে ফোনের অবস্থান বের করে ফেলতে পারে।
পুলিশের কথা শুনে কবির হকচকিয়ে গেছে। সে বসে আছে চিন্তিত মুখে। তার চোখের মনি এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে।
  -মুরাদ ভাই, কী হবে?
  -আল্লাহ জানেন।
  -আল্লাহ এবার বাঁচালে আর জীবনে চুরি করব না।
  -আচ্ছা । মাসুমের যে ওদিকে কী অবস্থা! আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন। আল্লাহ আল্লাহ।
  -আল্লাহ। আল্লাহ। 

যুহরের নামাজ শেষে হোজ্জা দীর্ঘ সময় ধরে সালাতুল হাজত পড়ছেন। দুআ করছেন। আমি আর কবির বসে বসে দরুদ আর ইস্তেগফার পড়ছি। মসজিদের এসি বন্ধ করে দেয় নি। ভালো লাগছে। শান্তি শান্তি লাগছে। কবির বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। বললাম, দুআ করো কবির। আল্লাহ রক্ষা করুন বিপদ থেকে। মাসুমের জন্য দুআ করো। বেচারা কী যে অবস্থায় আছে!

বাসায় এসেছি খেতে বসব। কবির বলল, মুরাদ ভাই! মনে হয় আমার সরে থাকা উচিত। ভয় লাগছে! পুলিশ যদি চলে আসে এখানে?
    ‘দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যাও।’

হোজ্জা যিকিরের মধ্যে আছেন। তার চোখ বন্ধ। আমি তাকিয়ে আছি। বোঝার চেষ্টা করছি। তিনি হঠাৎ চোখ খুললেন। তার চেহারা হাসি হাসি। মানে কী?

খাবার সাজানো হয়েছে। কিন্তু খাওয়ার প্রতি তেমন উৎসাহ নেই কারো। দুশ্চিন্তা নিয়ে খেতে ভালো লাগে না। চুপচাপ খাবার বেড়ে দিচ্ছি । হোজ্জা বললেন– চিন্তা কোরো না। আল্লাহ আছেন। ইন শা আল্লাহ সব বিপদ দূর হবে।

সবাই খাওয়ায় মন দিয়েছি। দেখি কি হয়। বিপদ কেটে গেলে আলহামদুলিল্লাহ পড়ব। কিন্তু যে প্যাঁচ লেগেছে, এটা কি এত সহজে খুলবে? আর ওদিকে মাসুম কি কিডন্যাপড হয়েছে, নাকি আবার সুইসাইড করে ফেলেছে প্রেমিকা হারানোর হতাশায়? কে বলবে?

দরজায় নক পড়ছে। কে আসবে এখন? উঠতে ইচ্ছা করছে না।
  ‘কে?’
কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না।
  ‘এই,কবির, দরজার ফুটা দিয়ে দেখো তো, কে এল? দুপুরে কে আসবে?’
  ‘ভাই! পুলিশ নাকি?’
  ‘পুলিশ?’

কবির আতঙ্কিত। সে দ্রুত হাত ধুয়ে লুকানোর চেষ্টা করছে। ননসেন্স। এখানে কোথায় লুকাবে সে?

আমি উঠে গিয়ে লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখছি– বাইরে দুইজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। প্যান্ট শার্ট ইন করে পড়া । মধ্যবয়সী। দুজনেই ক্লিন সেভ করা । চোখগুলো চঞ্চল। এরা ডিবির লোক নাকি? সর্বনাশ!

দরজায় আবার কড়া পড়ল। না খুলে তো দেখছি উপায় নেই!


(চলবে ইন শা আল্লাহ) 

Comments

    Please login to post comment. Login