
(৪র্থ পর্বের পর)
(৫)
হাসান ভাবছে, আপাতত মানিক চাচাকে ইনভেস্ট হিসেবে টাকা দিবে না। যদি ভালোমত জানা যায় তিনি ঠিকঠাক ব্যাবসা করছেন, তাহলে পরে দেয়া যাবে। জহিরের মত ফাঁদে পড়া যাবে না। আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। এভাবে যদি মানুষের সঞ্চয় নষ্ট হয়, তাহলে কীভাবে হবে? সঞ্চয়ের সাথে সাথে বিশ্বাসও নষ্ট হচ্ছে। মানিক চাচাকে কোনো একটা কারণ দেখিয়ে বলতে হবে যে, এখন টাকা দেয়া যাচ্ছে না। চাচাকে অপেক্ষায় রেখে লাভ নেই। আগেই জানিয়ে দেয়া ভালো। কিন্তু চাচা কি আসলেই অপেক্ষায় আছে? তার এত এত পরিচিতি, টাকা তো ম্যানেজ করা কঠিন হবার কথা না। হাসান কল দিল।
‘হ্যালো, চাচা। আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হাসান।’
‘চাচা আপনার ব্যাবসায় ইনভেস্টের কথা বলেছিলেন। কিন্তু কিছু মনে করবেন না, এখন সঞ্চয় খুব বেশি নেই। হাতে টাকা রাখা দরকার। আল্লাহ অন্য কোনো ব্যাবস্থা করে দিন আপনার ব্যাবসার পুঁজির।’
চাচা চুপ করে আছেন। কিছু বলছেন না। ফোনের নেটোয়ার্কের সমস্যা নাকি?
‘চাচা, শুনতে পান?’
‘হ্যাঁ, ভাতিজা। কী যেন বলতেছিলা?’
‘ঐ ইনভেস্টের ব্যাপারে। দিতে পারতেছি না আরকি।’
‘আরে ভুইলা যাও! সমস্যা নাই, ভাই বেরাদারগো লগে কথা কইলে পুঞ্জি পাইতে টাইম লাগবো না। তোমারে বিনিয়োগের কথা কইছিলাম, সেইটা হইল কথার কথা আরকি। আর ভাবলাম, তুমি ছোট মানুষ। কিছু টাকা ইনভেস্ট নিয়া প্রফিট কইরা বাড়ায় দিতে পারলে তো ভালো তোমার। তাই না? হা হা।’
‘আচ্ছা, আচ্ছা।’
‘বাপজান রাখি অহনে। কোনো দরকার হইলে ফোন দিবা। ব্যাবসা বানিজ্যে লাইগা পড়তেছি এইবার কইলে!’
‘আল্লাহ সহজ করুন আপনার জন্য চাচা।’
‘হ, দুআ কইরো।’
মানিক চাচার মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছে না হাসান। চাচা কথার মোড় পরিবর্তন করে ফেলেছে । কথার মোড় পরিবর্তন করা লোকেরা সুবিধার হয় না। মানিক চাচা কি তাহলে কোনো অসুবিধার লাইন ধরেছে?
বাসার নিচে নেমেই সিয়ামের সাথে দেখা হলো হাসানের। হাসান সিয়ামকে বোঝার চেষ্টা করছে। সিয়ামের পোশাক আশাক বেশ দামি মনে হলো। দামি জুতা, হাতে ঘড়ি। ছেলেটার কেতাদুরস্ত থাকার স্বভাব আগে থেকেই। স্বভাবটাকে খুব একটা খারাপ বলা যায় না। হাসান জিজ্ঞেস করল, চাকরীর খোঁজ করছিলে, পেয়েছ কোনো খোঁজ?
‘বড় ভাই, চাকরী করব না ভাবতেছি। ব্যাবসায় নামব। স্বাধীন ব্যাবসা।’
‘চাকরীর কথা বললে এখন বলছ ব্যাবসা। হঠাত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে ?’
‘হুম, বড় ভাই। ব্যাবসায় স্বাধীনভাবে চলা যায়।’
‘কী ব্যাবসা করবে ভাবছ?’
‘জানাবো ভাই। সময় হোক। বড় ভাইদের না জানিয়ে কিছু করবা না!’
‘ইনভেস্ট লাগবে না? পুঁজি আছে তোমার?’
‘যে ব্যাবসা করব পুঁজি লাগবে না খুব একটা। আপনি ইনভেস্ট করতে চান নাকি ভাই?’
‘ভালো কোনো ব্যাবসা হলে ভেবে দেখব।’
সিয়ামের চোখ চকচক করে উঠল। হাসান খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করছে সিয়ামের চোখের দৃষ্টি। চোখে লোভ খেলা করল কিছুক্ষণ। লোভের খেলা টা একবারে মিটে গেল না, ধীরে ধীরে কমে গেল। তবে শেষ হয় নি । হাসান সিয়ামের চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে।
‘সিয়াম, আমার কি মনে হয় জানো?’
‘কী বড় ভাই?’
‘তুমি আমার থেকে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছ। আসলে যা ভাবছ, তা বলছ না।’
‘কী বলেন ভাই?’
‘শোনো ব্যাবসা এত সহজ কিছু না। চাকরীর চেয়ে কয়েকগুন কঠিন। ব্যাবসায় যে স্বাধীনতার কথা বলছ, সেটা ম্যাচুরড একটা ব্যাবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এমন পরিপক্ক একটা ব্যাবসা একটা লাভজন সিস্টেমে পরিণত হয়। তখন ব্যাবসার মালিক আরামসে থাকতে পারে। কিন্তু, নতুন ব্যাবসা শুরুর পর করেক বছর কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় সেটা আমি অনেক ব্যাবসায়ীর মুখে শুনেছি। তুমি আজ একটা ব্যাবসা শুরু করবে, কাল থেকেই প্রফিট পাবে, আরামসে দিন যাবে– এটা ভেবো না।’
সিয়াম আমতা আমতা করছে।
‘শোনো সিয়াম, ব্যাবসার নামে কারো দেখানো লোভের ফাঁদে পড়বে না। আমি অনেক পুরাতন ব্যাবসায়ীদের ইনভেস্ট করতেও ভয় পাই। আমি যে তোমাকে ইনভেস্টের কথা বললাম, সেটা বলেছি তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য। তুমি ব্যাবসার নলেজ রাখো কি রাখো না জানার জন্য।’
‘বুঝছি বড় ভাই।’
সিয়াম হঠাৎ চলে যাওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। হাসানও ধরে রাখল না তাকে। দুআ করল, আল্লাহ সিয়ামকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনুন এবং ধরে রাখুন। চাওয়া যখন আল্লাহর কাছে, তখন কার্পণ্যের মানে হয় না।
হাসান লক্ষ্য করল, মানিক চাচার মধ্যে কথার মোড় পরিবর্তনের যে মনোভাব, সিয়ামের মধ্যেও তা-ই। তবে মানিক চাচার অর্থনৈতিক ক্রাইসিস আসলেই প্রকট। বড় মেয়ের বিয়ে দিলেন অনেক টাকা যৌতুক দিয়ে। তার জমানো টাকা প্রায় সব শেষ হলো । এরপরে ঢাকায় এসে পড়লেন মামলায়। তার সংকট বেশ গভীর । তার আরও দুই মেয়ে, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মামা। অনেক খরচ। এই অবস্থায় তার আচরণ কিছুটা এলোমেলো হওয়া মেনে নেয়া যায়। কিন্তু সিয়াম?
সিয়ামের কোনো দায় দায়িত্ব নাই। বয়স কম। জড়িয়েছে জুয়ায়। সে কি ভালো কিছু করার মত পায় নি? আইপিএল, বিপিএল খেলাগুলো গ্রামে গ্রামে জুয়ার বিস্তারে অনেক ভূমিকা রেখেছে। প্রতিটা টেলিভিশনের সামনেই জুয়ার আসর। অথচ খেলাগুলো জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হয়। জাতীর কর্ণধাররা আসলে চাচ্ছে কী? হাসান ভাবছে, আরেকটু খোঁজ খবর নিয়ে সিয়ামের সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে। তার টাকাপয়সার সমস্যা থাকলে সাময়িক কিছু অর্থসাহায্য করে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। খারাপ পথে যাওয়ার পরে ফিরতে না পারার হতাশা থেকেই অনেকে খারাপ রাস্তার আরো গভীরে যেতে থাকে। সিয়ামের ব্যাপারে তা ঘটতে দেয়া যায় না। এজন্য একই বিল্ডিং এ তো থাকে। অবশ্য তার মনোভাব কি আগে বোঝা দরকার। হাসান শুনেছিল সিয়ামের মামা ঢাকায় চাকরী করে। প্রয়োজনে তার সাথে কথা বলবে ও ।
(৬)
হাসান ভেবেছে সিয়াম ব্যাবসার কিছুই জানে না। কিন্তু সিয়াম যে কী জানে, হাসান যদি তা জানত তাহলে হতবাক হয়ে চোখ গুলো পিংপং বলের মত বড় করে ফেলত। ‘এই চোখ আর ছোট হত না আধা ঘন্টা, হা হা’, সিয়াম ভাবছে। সিয়াম তার ব্যাবসায় নেমে পড়েছে। সে তিনরুমের একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে, দারুন নাজাত মাদ্রাসার পাশে। বাড়িওয়ালা দূরে থাকেন। তার সাথে কথা বলে ৩ হাজার টাকা দিয়ে আপাতত কনফার্ম করা হয়েছে। এবার সিয়াম নিজের নাম্বার দিয়ে রুম ভাড়া হবে লেখা বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে মাদ্রাসার ছাত্রদের এলাকায়। তার টার্গেট ছাত্ররা। সিয়ামের বসে থাকার সময় নেই। দূরে থাকে এমন বাড়িওয়ালা খুঁজে বের করে আরও বাসা ভাড়া করতে হবে।
২ দিনের মধ্যে আরও একটা বাসা ভাড়া নিল সিয়াম। ইতিমধ্যেই সে প্রথম বাসার জন্য ৯ জন ছাত্রের একটা গ্রুপকে টার্গেট করে ফেলেছে। এই কমবয়সী ছাত্ররা জানে না তারা কার পাল্লায় পড়েছে। সিয়াম তাদের বাসা দেখালো। নিজের পরিচয় দিল বাড়িওয়ালার ছেলে হিসেবে। রুম পছন্দ হল ছেলেগুলোর। ভাড়া ১২ হাজার। সিয়াম বলল,
‘এলাকায় নতুন আসছ তোমরা? ‘
‘জি।’
সিয়াম সানগ্লাস তার আংগুলে নিয়ে ঘোরাচ্ছে। তার চেহারার মধ্যে আভিজাত্যের ভাব। কথাগুলো ঠান্ডা, কিন্তু দৃঢ়। সে নিজের অভিনয়ে খুব তুষ্ট।
‘বাসা পছন্দ হয়েছে?’
‘জি ভাই।’
‘১২ হাজার টাকা ভাড়া। সব মিলে। শুধু বিদ্যুৎ বিল আলাদা দিবা।’
‘ভাড়াটা কমানো যায় না ভাই? আমরা ছাত্র মানুষ।’
‘থাকবা তো নয়জন। পার হেড কত টাকা পড়ে? সামান্য টাকা, এটা নিয়ে দর কষার কিছু নাই।’
‘তা ঠিক।’
‘বাসা পছন্দ না হলে বলো। অন্য পার্টি রেডি আছে। আমার সমস্যা হবে না।’
‘না ভাই, পছন্দ হইছে বাসা।’
ছেলেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিল, বেশি বাসা খুঁজে লাভ কী? এই বাসা নতুন চকচকে। ঠিক করে ফেলা উচিত। সিয়াম হাঁক ছাড়ে,
‘ভাড়া নিতে চাইলে– দুই মাসের এডভান্স ২৪ হাজার দিয়ে কনফার্ম করবা।’
‘ভাই একটু বেশি হয়ে যায় না? ২০ হাজার দেই?’
সিয়াম মনে মনে হাসছে– আহা বাচ্চা ছেলে, মাত্র ৪ হাজার কমালো সাহস করে! কিন্তু তার চেহারায় ফুটে উঠল বিরক্তি ।
‘এত কথা তো বলতে পারব না ছোট ভাই। বললাম তো অন্য পার্টি আছে আমার কাছে। এই বাসা নিলে লাভ করবা। এত নতুন বাসা খুঁজে পাইবা এলাকায়? আর কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাবা। এলাকায় সবাই আমার ভাই বেরাদার।’
২৪ হাজার এডভান্সে বাসা ভাড়া হয়ে গেল। সিয়াম টাকা মানিব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। চাবি দিয়ে দিয়েছে একজনের হাতে। সে কিছুটা এগিয়ে ফোন থেকে সিম বের করল একটা । সিম দুই টুকরা করে রাস্তার ময়লায় ছুঁড়ে মারল। এই সিম কার্ড দিয়েই বাড়িওয়ালা আর ছাত্রদের সাথে কথা হয়েছে তার । সে যাচ্ছে আরেকটা ভাড়া বাসায়, ঐ বাসার জন্য নতুন লিফলেট ছাপাবে নতুন ফোন নাম্বার দিয়ে। বাসা টা বেশ দূরে। এই এলাকায় আর ভূলেও পা দিবে না সে। বেশ-ভূষা পরিবর্তন করে ফেলবে ভবছে। গালে দাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। পাঞ্জাবী পরে ঘুরতে হবে এখন।
অফিসিয়াল কাজে সারাদিন হাসানের অনেক পরিশ্রম গেছে। রাত দশটায় শুয়েছে বিছানায়। এক ঘুমে ৫ ঘন্টা পেরিয়ে গেল। ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ । দেখল যেভাবে শুয়েছে, ৫ ঘন্টা পরে ঠিক একই ভাবে শুয়ে আছে। এত ক্লান্ত শরীর! ঘুম ভালো হয়েছে। ফজরের জামাতের আরও ১ ঘন্টার বেশি বাকি। আর আধা ঘন্টা ঘুমানো যাক, ভাবল হাসান । পাশ ফিরতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। ঘুমে কতক্ষন কাটল এই বোধ তার নেই। ঘুমের মধ্যে সে দেখছে তার বাসার সামনের রাস্তা। আকাশে মেঘ করেছে, দিনেও কেমন অন্ধকার। সিয়াম দৌড়াচ্ছে। সিয়ামকে তাড়া করছে কিছু ছোট ছোট ছেলে, সিয়াম হা হা করে হেসে দৌড়ে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। হঠাৎ অপর পাশে কী যেন দেখে সিয়াম ভীষন ভয় পেয়ে গেল। আতঙ্কিত চেহারায় সে দৌড়ে এল হাসানের ঘরের সামনে। ডাকতে লাগল, হাসান ভাই, হাসান ভাই।
ঘুম ভেঙ্গে গেল হাসানের। ধরফর করে উঠল। বুঝল এটা স্বপ্ন ছিল। বাম দিকে তিনবার থু থু ফেলে আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাইল। স্বপ্নে এমন ডাক সে মাঝে মাঝে শুনে, বেশিরভাগ শুনে ফজরের আগে ঘুম না ভাঙলে। কিছু দিন আগে শুনল আজাদ ডাকছে তাকে, উঠে দেখল নামাজের ওয়াক্ত ৭ মিনিট বাকি। সে আল্লাহর প্রশংসা করল। এভাবেই আল্লাহ কখনো কখনো তাকে নামাজের জন্য জাগিয়ে দেন, যখন এলার্ম শুনেও ঘুম ভাঙেনা। কিন্তু আজকের স্বপ্নে সিয়ামের ডাকও কি একই রকম? কয়টা বাজে এখন? মোবাইল দেখল হাসান। ২০ মিনিটের মত ঘুমিয়েছে সে। নামাজে দেড়ি আছে। তাও উঠে পড়া যাক। আবার ঘুমালে সময়মত উঠা যাবে না। হাসান ফ্রেশ হয়ে ওজু করে ঘরে এল। তোয়ালে দিয়ে চেহারা, হাত মুছছে সে । ঘুমের ঘোর কেটে গেছে । ফজরের সুন্নাহ টা বাসায়ই পড়বে ভাবল। সময় আছে। জায়নামাজ টেনে নিল। হঠাৎ মনে হলো, সকাল বেলার স্বপ্ন তো সত্যি হয়। তাহলে আজকের এই সপ্নের অর্থ কী? নাকি সিয়ামকে নিয়ে সে ভেবেছে, এ কারণেই মনের খেয়ালে এমন স্বপ্ন দেখল? স্বপ্নটা খুব স্পষ্ট ছিল। অদ্ভুতও বটে। আল্লাহ জানেন এই স্বপ্নের মানে কী। হাসান মনে মনে দুআ করল, ‘আল্লাহ আমাকে স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে বাঁচান, সিয়ামকে অকল্যান থেকে বাঁচান, সবাইকে হেফাজত করুন।’
স্বপ্নটা ভাবলেই কেমন ভয় ভয় লাগছে হাসানের । নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে গেল সে।
পরদিন মাগরিবের আজান হয়েছে। হাসান নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছে । পাশ থেকে কেউ বলল, আসসালামু আলাইকুম বড় ভাই । সিয়ামের গলা। হাসান ফিরে দেখল সিয়ামের মুখ হাসি হাসি। সিয়ামের গায়ে পাঞ্জাবী, ঢোলা পাজামা। মাথায় ক্যাপ। অন্য লুক।
‘সিয়াম!
জি ভাই!
ব্যাপার কী? এরকম পোশাকে তোমাকে আগে দেখি নি আগে।
আপনাদের মত ভালো না বলে, এরকম পোশাক পরতে পারব না ভাই!?
আচ্ছা যাই হোক, যেজন্যেই পরছ, ভালো হইছে। যাচ্ছো কোথায়?
বাসা যাই ভাই।
নামাজে আসো? তারপর একসাথে বাসায় যাই?
চলেন ভাই।
সিয়াম নামাজে যাবে হাসান ভাবতে পারে নি। হাসান খুশি হলো। সিয়ামও ভাবে নি, সে নামাজে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়ে যাবে। কথার টানে রাজি হয়ে গেছে। সে মনে মনে বলছে, আল্লাহ! আল্লাহ! মাফ করেন। তার মনে ভয় । এতক্ষণে তার মনে হচ্ছে– তার অপরাধ আল্লাহ ভালো মত দেখেছেন। নামাজে গেলে এরকম ভয় কাজ করে। এই ভয়েও সিয়াম নামাজ থেকে দূরে থাকে। হঠাৎ সে বলল, হাসান ভাই, দুআ করবেন আমার জন্য। হাসান চমকে তাকালো। বলল, তুমি নিজে নামাজ পড়বে, নিজেই দুআ করবে! আমার দুআ করার কিছু নাই। তারা মসজিদে চলে এসেছে। হাসান বাসা থেকে ওজু করে এসেছে। সিয়ামের ওজু নেই। তাকে ওজু করতে হবে। পাজামা গুটিয়ে সে বসে পড়ল ওজুখানায়। তার হাত অল্প অল্প কাঁপছে।
মসজিদের গলি পেরিয়ে পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাসান। সন্ধ্যার আধো আলো, সাথে ঠান্ডা মৃদু বাতাস। হাঁটতে ভালো লাগছে। ২/৩ মিনিট পর মূল রাস্তা। বামের একটা পোলে হাসানের চোখ আটকে গেল। মাঝারি সাইজের বিলবোর্ডে লিখা– ‘এই ভাই কই যান?’ মানে কী? হাসান যাচ্ছে তমিজন বেগমের বাসা। কিন্তু এই উত্তর নিশ্চয়ই বিলবোর্ডকে দিতে হবে না। বিলবোর্ডের কাছে গিয়ে দাড়াল হাসান। ঘটনা বুঝতে হবে। বিলবোর্ডে লিখা– আপনার সন্তান কি ফেসবুক, ইউটিউবে (ফেসবুক, ইউটিউব লিখা নেই, এগুলর বড় বড় আইকন দেয়া) আসক্ত? শুধু জেনারেল শিক্ষা মানে চিইইল! (মটরসাইকেলে এক বালকের ছায়া দেয়া, মনে হচ্ছে মটরসাইকেল উড়ে যাচ্ছে)। এ কে আজাদ ক্যাডেট মাদ্রাসায় থাকছে জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা, কুরআন হিফজের সুযোগ। আপনার সন্তান হবে সুশিক্ষিত ও সুসন্তান , ইন শা আল্লাহ। ভর্তি চলছে। বিলবোর্ড পড়ে হাসান হকচকিয়ে গেল। চমৎকার মার্কেটিং বলতেই হবে! বিলবোর্ড ছেড়ে হাসান হাঁটা শুরু করল আবার।
(চলবে ইন শা আল্লাহ)