Posts

নন ফিকশন

আমার চোখে দেখা ইতিহাস

September 16, 2025

KANISHKO DAS MUGDHO

39
View

২০২৪ সালের জুলাই মাস। দেশের বাতাসে যেন মিশে আছে বিদ্রোহের গন্ধ, পরিবেশ তখন থমথমে। চারিদিকের কোলাহল যেন হঠাৎ থেমে গেল। রাস্তা-ঘাট থেকে চায়ের দোকান সব জায়গায় শুধু একটাই আলোচনা: কোটা আন্দোলন। আমার মনেও আগ্রহ জাগলো 'কোটা আন্দোলন' সম্পর্কে জানার। তারপর জানতে পারলাম, ৫ জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায় ছিল আন্দোলনের পুনর্জাগরণের কারণ। এর আগে ২০১৮ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিল এবং তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ, আওয়ামিলীগ এবং পুলিশ নির্বিচারে হামলা ও সহিংসতা শুরু করে। সেই সহিংসতায় হাজারো শিক্ষার্থী আহত হয় ফলে, শিক্ষার্থীদের ভিতর ক্ষোভ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রতিহত করার খবর যেনো কেউ জানতে না পারে তাই প্রায় সকল সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম সেই খবর প্রচার করতে থাকে এবং আন্দোলন আরো বড় আকার ধারণ করে। ফলশ্রুতিতে, শেখ হাসিনা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে বাধ্য হয়। অনেকেরই অজানা বিষয় যে, ২০২৪ এবং ২০১৮ সালের আগেও ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়। 


 

২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন যেন আগের আন্দোলনেরই প্রতিধ্বনি। ২০১৮ সালের পর যখন কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন যে কোটা আর পুনর্বহাল হবে না এবং আন্দোলন শেষ। তবে, ২০২৪ সালের ৫ই জুন কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করার পর পরই ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় যা আবার নতুন করে তীব্র আন্দোলনের রূপ ধারণ করে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক নতুন তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, বিশেষত শিক্ষার্থী এবং সরকারি চাকরির জন্য প্রার্থী হওয়া তরুণদের মধ্যে। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমার মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। সেই সময়, কোটা আন্দোলন নিয়ে নানা কথা শুনছিলাম, আর মনে হচ্ছিল—এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেন এক নতুন ধরনের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জমে উঠেছে। একদিকে, কোটা ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের মনের মধ্যে যে অসন্তোষ ছিল, তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। আর অন্যদিকে, কোটা আন্দোলন কেবল একটি ব্যবস্থা পরিবর্তন চাচ্ছিল না—এটা ছিল তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম, যা আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো যে: একজন শিক্ষার্থী তার জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় মেধাকে কাজে লাগিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, শেষমেশ জীবনের সফলতা খুঁজতে গিয়ে কেনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে? সেই প্রশ্নকে মাথায় রেখেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিবাদ শুরু করি এবং চব্বিশের রক্তাক্ত জুলাইয়ের প্রথম থেকে শেষ অব্দি ঘটে যাওয়া সেই নির্মম ঘটনার স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা নিয়েই 'আমার চোখে জুলাই' গল্পটি সম্পূর্ণরূপে শুরু করছি।


 

১ জুলাই ২০২৪, দিনটি ছিল সোমবার। সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হলো পরিবেশটা কেমন যেন নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে, সময় যেন হঠাৎ থেমে গেল। চোখ কচলাতে কচলাতে মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখলাম, কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক 'কোটা' নামক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তারা এই আন্দোলনের নাম দেয় 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন'। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের দাবির বিষয়ে সরকারকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানায় এবং শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। আমিও সেই 'কোটা' নামক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলাম এবং শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলাম। 


 

পরে, ২ জুলাই থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তবে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে হাইকোর্ট অবৈধ বলে ঘোষণা করে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৬ জন বিচারপতি ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন। এর পর, ৪ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে ঢাকার শাহবাগ মোড় সহ দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক এবং মোড় অবরোধ করে রাখে। ৬ জুলাই, শনিবার সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। সেই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় 'বাংলা ব্লকেড'। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, রাজপথের মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থীরা 'কোটা' নামক বৈষম্যের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে শুরু করেছে। ৮ জুলাই শিক্ষার্থীরা ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠন করে, যাদের মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক। সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের নেতৃত্বে 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' আরো তীব্র আকার ধারণ করে। তারুণ্যের শক্তি যেন আবারো এই বাংলার মাটিতে জেগে উঠলো। তবে, ছাত্রদের এই আন্দোলন ও কর্মসূচিকে প্রতিহত করতে শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা শুরু করে। পুলিশের সাথে ছাত্রলীগের কর্মীরাও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে, হাজারো শিক্ষার্থী আহত হয়।


 

এভাবেই ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ-ছাত্রলীগ একজোট হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে হামলা শুরু করে, এতে আহতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নিজেদের ন্যায্য দাবির স্বীকৃতির জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন জানালেও, সরকার তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়নি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ নেতা-মন্ত্রীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়, যা শিক্ষার্থীদের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শুধু নেতা-মন্ত্রীরাই নয়, ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যা দেয়। আমি তার এই মন্তব্য শুনে আশ্চর্য হলাম। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কিভাবে তার দেশের মানুষকে এমন কথা বলতে পারে তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না ! শেখ হাসিনার প্রতি আমার ঘৃণা ও ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পেলো।


 

১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন বেশ শান্তিপূর্ণ হলেও তার এই মন্তব্যের পর পুরো ছাত্রসমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং আন্দোলন আরও তীব্র ও জোড়দার হয়ে ওঠে। ১৪ জুলাই রাতেই, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে উত্তাল। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকে - "তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার"


 

এরপর দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে, শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একে একে হলগুলোকে ছাত্রলীগ মুক্ত করতে শুরু করে। এতে, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ শুরু করে এবং নারী শিক্ষার্থীদেরও লাঞ্চিত করা হয়। ছাত্রলীগ এই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে ব্যার্থ হলে, শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ এবং গুলি করা শুরু করে। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী আহত হতে থাকে, বাংলার রাজপথ যেন সম্পূর্ণ রক্তমাখা। সবুজ-শ্যামল দেশটা হঠাৎ করেই যেন লাল রক্তের সাথে মিশে গেল। দেশের রাজপথ তখন রক্তে লাল। ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ খবর আসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী পুলিশ নামক হায়েনাদের গুলিতে শহীদ হয়, তার নাম আবু সাঈদ। পুলিশ যখন তার বন্ধুদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ করছিলো তখন এক প্রকার জেদ থেকেই সে দুই হাত প্রশারিত করে নিজের বুক চিতিয়ে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়ায়। হয়তো সে মনে মনে বলছিলো: বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। আবু সাঈদকে নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি করে হত্যার পর, সারা দেশের রাজপথে ফুঁসে ওঠে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। কিন্তু সেই আন্দোলন দমন করতে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ একজোট হয়ে চালায় দমন-পীড়ন। তাদের হামলায় শহীদ হয় ওয়াসিম, মুগ্ধসহ নাম না জানা আরও অনেক সংগ্রামী। সরকারের দমন-পীড়ন রূপ নেয় গণহত্যায়। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চালানো হয় নির্বিচার গুলি, এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও করা হয় হামলা। একের পর এক নিথর দেহ পড়ে থাকতে থাকে রাস্তায়।


 

১৮ জুলাই সন্ধ্যার পর, পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ছাড়া সব ধরনের তথ্য প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দেশবাসী বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এর পর জারি করা হয় কারফিউ। কারফিউ জারির পরও আন্দোলন থামেনি; প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা অবিচল ছিল। কিন্তু নিরস্ত্র এই শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় নৃশংস হামলা—বৈদেশিক অস্ত্র ব্যবহার করে দমন করার চেষ্টা চলে তাদের। এতে শহীদদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে, আর অসংখ্য মায়ের কোল শূন্য হয়ে যায়। রাতে আন্দোলন শেষে যখন শিক্ষার্থীরা বাসায় ফিরে, তখন তাদের টার্গেট করে নিজ বাসা থেকে গুম করে ফেলা হয়। শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই নয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়কদেরও গুম করা হয় এবং জোড়পূর্বকভাবে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা বলানো হয়। জোড়পূর্বকভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করানোর কৌশল সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুঝে ফেলে। ৯ দফাসহ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন না থামানোর ঘোষণা দেয় তবে, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নিহত শিক্ষার্থীদের লাশ গোপনে গুম করতে শুরু করে শেখ হাসিনার পোষ্য হায়েনারা। এভাবেই প্রতিদিন চলতে থাকে গণহত্যা, গুম ও গণগ্রেফতার। সারা দেশের মানুষের মতো আমিও রাত জাগতে শুরু করি এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকা সত্বেও গোপন মাধ্যম VPN এর সাহায্যে দেশের পরিস্থিতির সকল তথ্য জানতে পারি। রাজপথে জনতার ঢল নামে, যেখানে শিক্ষক-অভিভাবক, গায়ক-নায়ক, ব্যবসায়ী-রিক্সাওয়ালা, ড্রাইভার-দিনমজুরসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ একত্রিত হয়। ৯ দফা দাবি পরিণত হয় ১ দফা দাবিতে। সকলের সেই একটাই দাবি ছিল: স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগ। আন্দোলনের পক্ষে কথা বলায়, অনেক শিক্ষক ও গায়কদেরও গ্রেফতার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের প্রফাইল লাল। ২ আগস্ট বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লক্ষ লক্ষ মানুষ একত্রিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের প্রফাইলগুলো ছিল লাল। সবার শুধু একটাই দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেদিন ছিল আমার জন্মদিন, কিন্তু এই প্রথম আমি জন্মদিন পালন করিনি। শোকের মাঝে কি আর জন্মদিন পালন করা যায়? 


 

২ আগস্ট, সারা দেশের প্রতিটি মুখে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ভেসে ওঠে, আর সেদিনের রাতও কাটে নির্ঘুম সংগ্রামে। ৩ আগস্ট সকালে নতুন রক্তমাখা লাল সূর্য উঠে, চারিদিকে শুধু রক্ত আর লাশ। সমন্বয়কেরা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সেদিনও দেশের বিভিন্ন রাজপথে এবং শহীদ মিনারে লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হয়। আন্দোলন চলতে থাকে দিন-রাত, ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলিবর্ষণ করে। চারপাশে এক ধরনের উচ্ছ্বাসের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে, তবে গণহত্যা থেমে থাকেনি। ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের মানুষকেই হত্যার শিকার হতে হয়েছে—এমন দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি। এভাবে ৪ আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকে গণহারে হত্যা, হঠাৎ দুপুরের দিকে বৃহৎ এক কর্মসূচির ঘোষণা আসে। ৬ আগস্ট "লং মার্চ টু ঢাকা" অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু, পুলিশ-ছাত্রলীগ ও আওয়ামিলীগের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা চিন্তা করে সমন্বয়কেরা সারা দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেন: "পরশু নয়, কালকেই লং মার্চ টু ঢাকা"। এই ঘোষণার পর ৪ আগস্ট রাতেই সারা দেশের সকল প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং ভোরের দিকে সারা ঢাকা জনসমূদ্রে পরিণত হয়। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু মানুষ আর মানুষ। আন্দোলন রূপান্তরিত হল গণঅভ্যুত্থানে। স্বৈরাচারী হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার জন্য লাখ লাখ মানুষ যাত্রা শুরু করে গণভবনের দিকে। দেশের মানুষের ঢল ও জনসমূদ্রের তীব্রতার মুখে পতন হয় বাংলার ভয়ংকর এক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার। নিজের বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিমানে করে পালিয়ে যায় ভারতে। শেখ হাসিনার পতনের ফলে, সারা দেশে ছড়িয়ে পরে উচ্ছাস-আনন্দ। সব জায়গায় শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ এবং সারা দেশে একের পর এক মিষ্টির দোকান খালি হতে শুরু করে। এভাবেই গণঅভ্যুত্থান হয়ে ওঠে গণবিপ্লব।

Comments

    Please login to post comment. Login