স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা মানেই শুধু বই পড়ে পরীক্ষায় নাম্বার তোলা নয়। শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও পাঠাভ্যাস সমান জরুরি। তাই প্রতিটি স্কুলে গান, নাচ, ছবি আঁকা ও খেলাধুলার শিক্ষক বাধ্যতামূলক থাকা উচিত। পাঠাগার থাকা চাই, আর নিয়মিত পাঠাগার ক্লাসও হতে হবে। ধর্মশিক্ষার ক্ষেত্রেও সকল ধর্মের শিক্ষক নিশ্চিত করা দরকার, যাতে কোনো শিশু জবরদস্তিমূলকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের ক্লাসে অংশ নিতে বাধ্য না হয়। আমরা প্রফেসর আনু মুহাম্মদ স্যারের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশে শিল্প-সংস্কৃতির ভূমিকা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ইউনেস্কোর গবেষণা বলছে -শিল্প ও সংস্কৃতি শিক্ষায় সম্পৃক্ততা শিশুদের সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি, সামাজিক দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায় (UNESCO, The Role of Arts Education, 2006)। আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক সমীক্ষা অনুযায়ী গান, নাটক, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কার্যক্রম শিশুদের মানসিক সুস্থতা ও শেখার আগ্রহকে বহুগুণ বাড়ায়।
আড়াইহাজার বছর আগের গ্রিক পণ্ডিত মহামতি প্লেটো প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীতের গুরুত্ব নিয়ে যথেষ্ট গভীরভাবে লিখেছেন, বিশেষত তাঁর Republic (রাষ্ট্র) এবং Laws (আইন) গ্রন্থে। প্লেটো মনে করতেন, ছোটবেলাতেই (প্রাথমিক পর্যায়ে) শিশুদের মনে যে ছাপ পড়ে, তা স্থায়ী হয়। তাই সঙ্গীতের মাধ্যমে তাদের চরিত্র, নৈতিকতা ও আত্মার বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
প্লেটোর শিষ্য মহাত্মা এরিস্টটল প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীতের ভূমিকা সম্পর্কে যথেষ্ট স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Politics (Book VIII)-এ তিনি শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে চারটি প্রধান বিষয়কে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দেন—
১. পঠন-পাঠন (literacy/letters)
২. ব্যায়াম (gymnastics)
৩. অঙ্কন (drawing)
৪. সঙ্গীত (music)
এরিস্টটলের মতে, 'সঙ্গীত কেবল বিনোদনের জন্য নয়; বরং এটি চরিত্র গঠন ও নৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঙ্গীত মানুষের আবেগকে প্রভাবিত করে এবং শৃঙ্খলিত আবেগ গঠনে সহায়ক।"
আমাদের সন্তানদের একপেশে মুখস্থবিদ্যা নয়, বরং হৃদয়ে-মননে সমৃদ্ধ, সৃজনশীল ও সহনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে এখনই নীতিগতভাবে সুকুমারবৃত্তিচর্চার এসব উদ্যোগ বাধ্যতামূলক করতে হবে। 🌿
লেখক: সাংবাদিক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫