Posts

গল্প

ক গ্রামে খুব গরিব এক বুড়ি বাস করতো। বুড়িটা এতটাই গরিব ছিল যে ঠিক মতো খেতেও পেতো না। একদিন বুড়ি একটা ক্ষেত থেকে মালিকের বাতিল করা কিছু সীমের দানা কুড়িয়ে নিয়ে এলো। ঠিক করলো সীমের দানাগুলো সে সিদ্ধ করে খাবে। খুব বেশি ক্ষিদে পাওয়ায় বুড়ি

September 18, 2025

Mamun Hoshen

71
View

এক গ্রামে খুব গরিব এক বুড়ি বাস করতো। বুড়িটা এতটাই গরিব ছিল যে ঠিক মতো খেতেও পেতো না। একদিন বুড়ি একটা ক্ষেত থেকে মালিকের বাতিল করা কিছু সীমের দানা কুড়িয়ে নিয়ে এলো। ঠিক করলো সীমের দানাগুলো সে সিদ্ধ করে খাবে। খুব বেশি ক্ষিদে পাওয়ায় বুড়ির যেন তর সইছিল না। কয়লাতে আগুন ধরানোর জন্য কিছু খড়ে আগুন ধরিয়ে চুলোতে গুঁজে দিলো।সীমের দানা গুলো চুলোয় বসানো হাড়িতে তাড়াহুড়ো করে দেবার সময় একটা সীমের দানা মেঝেতে খড়ের পাশে গিয়ে পড়লো। বুড়ির সেটা চোখে পড়লো না। কিছুক্ষণ পর একটুকরো কয়লা জ্বলন্ত চুলো থেকে লাফ দিয়ে মেঝের খড় আর সীমের দানার মাঝখানে ঝুপ করে এসে পড়লো। এ ব্যাপারটাও বুড়ির চোখ এড়িয়ে ঘটলো। তার সব মনোযোগ হাড়ির দিকে। বুড়ি যখন খাওয়ার চিন্তায় অস্হির, তখন মেঝের খড় ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "বন্ধুরা তোমরা কে কোত্থেকে এলে বলো দেখি?"
কয়লা বললো, "বড় বাঁচা বেঁচে গেছি বাবা! চুলোর আগুন থেকে পালিয়ে বেঁচেছি। নইলে এতক্ষণে পুড়ে ভাজা ভাজা হয়ে যেতাম।" সীমের দানা রিনরিনে গলায় বললো, "চামড়ায় আঁচ লাগবার আগেই পালাতে পেরে প্রাণে বেঁচেছি। আমার বেচারা বন্ধুদের মতো না হলে আমাকেও বুড়ি হাড়িতে পুরতো, আর আগুনের আঁচে গলে এতক্ষণে আমি স্যুপ হয়ে যেতাম।" একটা লম্বা দম নিয়ে খড় বললো, "আমারও একই দশা হতো বন্ধুরা। বুড়ি যেভাবে চুলোয় আমার ভাইদের ঠেসেঠুসে দিয়েছে, ওরা সব্বাই জ্বলে পুড়ে ধোঁয়া হয়ে গেছে। ভাগ্যিস বুড়ির আঙুলের ফাঁক গলিয়ে টুপ করে আমি নীচে পড়েছিলাম। নইলে আমিও এতক্ষণে ভাইদের মতো ধোঁয়া হয়ে পাক খেয়ে খেয়ে বাতাসে মিলিয়ে যেতাম।"

কয়লা প্রশ্ন করলো, "এখন আমরা কী করবো বলো দেখি?"

ঠাণ্ডা মাথার সীমের দানা ধীরস্হির ভাবে বললো ,"ভাগ্যের জোরে আমরা তিন বন্ধু যখন বেঁচে গেছি, তখন আমাদের তিনজনের এক সঙ্গেই থাকা উচিত। তবে এখানে বেশিক্ষণ থাকলে নতুন কোন বিপদ এসে হাজির হতে পারে। চলো, আমরা নিরাপদ কোথাও পালিয়ে যাই।"

সীমের দানার প্রস্তাব অন্য দুজনের খুব পছন্দ হলো। তিন বন্ধু তখনই নিরাপদ জায়গার খোঁজে চটপট বেরিয়ে পড়লো। হাঁটতে হাঁটতে তারা ছোট্ট এক নদীর পাড়ে এসে পৌঁছালো। কিন্তু নদী পার হবার জন্য তারা কোনো সেতু বা নৌকা কিচ্ছু দেখতে পেলো না। মহা চিন্তায় পড়ে গেল কয়লা আর সীমের দানা। খড় তখন দুজনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, "অত্ত ভেবো না হে। আমার মাথায় একটা চমৎকার বুদ্ধি এসেছে। বলছি শোনো, আমি শুয়ে পড়ে আমার শরীরটা নদীর এপাড় ওপাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেবো। তোমরা এক এক করে নদীটা পার হয়ে যাবে।"

খড়, কয়লা আর সীমদানার গল্প

কথা মতো খড় সটান শুয়ে পড়ে নদীর এপাড় ওপাড় পর্যন্ত নিজের শরীরটা ছড়িয়ে দিলো। কয়লা বেশ ডাটিয়াল একটা ভাব ধরে খড়ের তৈরি করা নতুন সেতুর উপর দিয়ে গটমট করে রওনা দিলো। কিন্তু মাঝ বরাবর গিয়ে সেতুর নীচ দিয়ে জলের স্রোতের শব্দ শুনে সেদিকে তাকাতেই কয়লার আত্মা খাঁচা ছাড়া হবার উপক্রম হলো। ভয়ে একদম কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল সে। নট নড়ন চড়ন। কয়লার টুকরা এতই ভয় পেয়েছে যে সামনে এগোনোর জন্য আর কিছুতেই সে নড়তে চড়তে পারছিল না। এদিকে জলন্ত কয়লা একজায়গাতে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে খড় বেচারার শরীর পুড়তে শুরু করলো। পুড়তে, পুড়তে, পুড়তে সে দু'টুকরো হয়ে নদীতে পড়ে গেল। খড় পড়ে যাওয়া মাত্রই কয়লাও হুড়মুড়িয়ে গিয়ে জলে পড়লো। জলন্ত কয়লা জলে পড়ে হিসহিস শব্দ তুলে শেষবারের মতো নিঃশ্বাস নেবার চেষ্টায় খাবি খেতে খেতে মারা গেল।

কয়লা আর খড়ের পরিণতির পুরোটা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখছিল সীমের দানা। দু্‌ই সঙ্গীর ওরকম করুণ পরিণতি দেখে সীমের দানা দুঃখ না পেয়ে বরং বেদম হাসিতে ভেঙে পড়লো। সীমের দানা পেটে ধরে হাসতেই থাকলো। থামতে পারে না এমন হাসি। হাসতে, হাসতে, হাসতে ফট্টাশ করে সীমের দানা পেট গেল ফেটে। খড় আর কয়লার মতো সেও আরেকটু হলে অক্কা পেতে যাচ্ছিল। কিন্তু নদীর পাড়ে একটা গাছের ছায়ায় যাত্রা বিরতি দিয়ে এক দর্জি বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। দর্জিটা খুব দয়ালু। সীমের দানার পেট ওভাবে ফেটে যেতে দেখে তার খুব মায়া হলো। সে তাড়াতাড়ি সুঁই সুতা বের করে, যত্ন নিয়ে সীমের দানার পেট সেলাই করে দিলো। সীমের দানা প্রাণে বাঁচলো। তার জীবন বাঁচানোর জন্য দর্জিকে ধন্যবাদ দিতে অবশ্য ভোলেনি সীমের দানা। কিন্তু দর্জিটা সীমের দানা পেট কালো সুতোয় সেলাই করেছিল বলে সীমের দানা দানার শরীরে একটা কালো দাগ হয়ে গেল। সেই থেকে কালো দাগটা সব সীমের দানার গায়ে এখনও দেখা যায়।

(মূল গল্প : The Straw, the Coal, and the Bean by The Brothers Grimm)

ছবিঃ আবির

Comments

    Please login to post comment. Login