সেদিন ভোরবেলা —
"ঢাকা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, আজকের দিনটা আর দশটা দিনের মতো নয়। প্ল্যাটফর্মে মানুষের ভিড়, চায়ের কাপে ধোঁয়া, হুইসেল বাজানো ট্রেন—সবকিছু মিলিয়ে অদ্ভুত এক কোলাহল, অথচ আমার মনে হচ্ছিল এই ভিড়ের ভেতরও আমি একেবারেই একা। হাতে ছোট্ট একটা ব্যাগ, টিকিট শক্ত করে ধরে আছি। গন্তব্য বান্দরবান—তবে ট্রেনে সরাসরি সেখানে পৌঁছানো যায় না, সেটা আমি জানি। তবুও এই ট্রেন ভ্রমণের শুরুটা যেন এক অদ্ভুত যাত্রার দরজা খুলে দিচ্ছে।
জানলার বাইরে সবুজ পাহাড়, ভেজা মাটি, আর আকাশের নীলাভ ধোঁয়া তাকে অদ্ভুত এক শান্তি দিচ্ছিল।চারিদিকে এতো সুন্দর পরিবেশ যা আপনার মনকে ছুয়ে যাবে। আমাড পরিচয় টা দিয়ে নেই। আমি বিজয়। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
গল্পে আসি....
ভ্রমণপাগল এক ছেলে আমি । হঠাৎ করেই কোথাও বেরিয়ে পড়া, অচেনা জায়গার গন্ধ খুঁজে বেড়ানো—এই ছিল আমার নেশা ।
মনটা এক অন্য রকম শান্তির সন্ধানে। মনটা সব সময় ঘুরার ইচ্ছে নিয়ে থাকে। হুট করেই মনে হলো ট্রুরে যেতে হবে। কোনো রকম ঘরে বলে অনুমতি নিয়ে নিলাম। তাই এবার আর কিছু চিন্তা না করে বের হয়ে গেলাম বান্দরবান এর উদ্দেশ্য।
আমার ট্টেনে যেতে অনেক ভালো লাগে । বাহিরে সুন্দর প্রকৃতি আর ট্রেন এর ঝনঝনানি শব্দ। মনে অন্য রকম অনুভূতি। হঠাৎ আচমকা চোখ পরে জানালার দিকে। ট্রেন টা এক স্টেশন থেকে এসে অন্য স্টেশনে কিছু সময়ের অপেক্ষা। ৫ মিনিটের ভিতর ট্রেন এই স্টেশন ত্যাগ করবে। জানালা দিয়ে চোখ যতদূর যায় অপলক তাকিয়ে ছিলাম। যেনো এমন কিছু দেখলাম যা আগে কখনো দেখি নি। অন্য রকম অদ্ভুত সুন্দরী এক পরী। ট্রেন ছেড়ে যাবে মেয়েটি দৌরে ট্রেনে উঠার চেষ্টা। সেখানেই প্রথম দেখা—মায়াবতীকে। চোখে তার মায়া_পড়নে শাড়ি দেখতে লাগে সুন্দর অপরূপ মায়াবী। হঠাৎ এমন এক অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। দেখতে যেনো কোনো এক স্বপ্নে দেখা পরী। যার রূপে আমি প্রথম দেখাতেই মায়ায় পড়ে যাই। কি সুন্দর তার হাসি। হরিণের মতো টানা টানা কাজল কালো চোখ তার। রক্ত বর্ণের তার গোলাপি ঠোঁট। যেনো কোনো এক স্বপ্নে আছি আমি।
কোয়াশায় ভেজা চুলে ছোট্ট সাদা ফুল গুঁজে রাখা, চোখে অদ্ভুত মায়া। যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পৃথিবীতে এতো সুন্দর মানুষ আছে তা আগে বিশ্বাস হতো না৷ মেয়েটি অদ্ভুত সুন্দর ছিলো৷ যেমন দেখতে সুন্দর তেমন ছিলো তার ব্যবহার ৷ সে আসতে আসতে ট্রেন প্রায় ছেড়েই দিলো। আমি ট্রেন এর দরজায় গিয়ে দাড়াই। কি সুন্দর সেই মায়াবী৷ যার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি হারিয়ে যাচ্ছি৷ মনে হচ্ছে জীবন এর পর জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে। হঠাৎ আচমকা এক কষ্ঠ সুর ভেসে আসে ~~
মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে প্লিজ হেল্প। আমিও হাতটি বাড়িয়ে দিয়ে তাকে ট্রেনে উঠালাম। সে মুখ থেকে স্থস্থি নিশ্বাস ফেলছে আর ক্লান্ত মন নিয়ে নিজের কেভিনে চলে গেছে। আমাকে ধন্যবাদ টুকুও দেওয়ার সময় হলো না তার। আমি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। স্বপ্নের পরীর মতো সুন্দর যে মেয়ে তার হাতের স্পর্শে যেনো আমার ভিতরে অন্য রকম অনুভূতি সৃষ্টি হয় তার প্রতি। আমি তাকিয়ে-তার দৌড়ে আসার মাঝে চুল গুলো উড়তে ছিলো তা দেখতেছিলাম। কি অপরূপ সুন্দর লাগতেছিলো। মনে হচ্ছিলো হারিয়ে যাই ~ তার মাঝে।
আমি ট্রেনের দরজার সামনে দাড়িয়ে হাজারো চিন্তা করতে থাকি। ওইদিকে মেয়েটি
ট্রেনে উঠে কেভিনে চলে গেলো, তখন আমি আর না দাড়িয়ে আমিও নিজের কেভিনে চলে যাই।
গিয়ে যা দেখি তাতে আমি মনে মনে অনেক খুশি হয়ে যাই। মনে হচ্ছিলো যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হচ্ছে। কি সুন্দর করে সব কিছু মিলে যাচ্ছিলো।এখন আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন থাকতে পারে কেনো আমার মনে অনেক খুশি তাই তো…? তার কারন টা হলো _কাকতালীয়ভাবে তার সিট পড়ল আমার পাশেই । আমি মনে মনে অনেক খুশি হই। কিন্তু দুজন ওই চুপ করে বসে থাকি। কিন্তু অনেক ইচ্ছে করতাছিলো সেই অপরূপ মায়াবী মেয়েটার সাথে একটু কথা বলি। কিন্তু সাহস পাচ্ছিনা। সে যদি কিছু মনে করে। যে যাই মনে করুক মন তো আর বুঝতে চায় না আমার এতসব চিন্তা । অনেক টা রাস্তা আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ কেভিনে আসে এক চা ওয়ালা মামা। মামা জিজ্ঞেস করছিলো _ চা খাবেন আপনারা। তখন খুব সাহস জুগিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি একসাথে চা খেতে পারি। মেয়েটি না করতে পারে নি। তখন চা ওয়ালাকে বলে চা নিলাম।
কথা শুরু হলো এক কাপ গরম চায়ের টানে।
— “আপনি একা ভ্রমণে যাচ্ছেন?”
— “হ্যাঁ, পাহাড়ে যেতে ভালো লাগে। তবে এই প্রথম একা যাচ্ছি।”
তার নাম ছিল রূপকথা । ট্রেনেই আমাদের পরিচয়। পরিচয় থেকে জানতে পারি ২জন আমরা একই জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি মানে বান্দরবান । শহরের ভিড় ছেড়ে তারা উঠে গেল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে। কুয়াশা নামতে শুরু করেছে, রাস্তার ধারে ঝরে পড়া জলপ্রপাত যেন তাদের পথচলাকে আশীর্বাদ করছিল।
গরম কফির কাপে দু’জনের আঙুল একবার ছুঁয়ে গেল। আমি টের পেলাম, রূপকথার হাসি শুধু ঠোঁটে নয়, পুরো পরিবেশকে আলোকিত করে তোলে।
আমরা চলে আসু আমাদের গন্তব্য বান্দরবানে। পাহাড় আর ঝড়না দেখতে দেখতে। চারিদিকে লত সুন্দর। সাথে ছিলো রূপকথা। কল্পনার জগতে ভাবতে থাকি অল্প কিছু সময়ের পরিচয়ে যেনো মনে হচ্ছে সে আমার অনেক পূর্ব পরিচিত। তার সাথে আমার হাজারো বছরের পুরোনো সম্পর্ক ৷ বড্ড আপন আপন মনে হচ্ছিলো। দেখতে অপরূপ সুন্দর, কথায় ছিলো মায়া। তার দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে সারাটা জীবন। কি অদ্ভুত মায়া।
কবি বলছেন:
ভালোবাসতে জানলে নাকি ভালোবাসা
পাওয়া যায়
মন থেকে চাইলে নাকি স্বর্গ জয় করা যায়
আমি চাইনা স্বর্গ আমি চাই আমার গল্পের রূপকথাকে। যার প্রতি জমে গেছে আমার অদ্ভুত এক মায়া। তাকে নিয়ে হাজারো কল্পনা করতে করতে কখন নিজে নিজে হেঁসে ফেলি তা নিজেও বুঝি না।
রাতের —তারা দাঁড়িয়ে আছে মাল রোডে, ঠান্ডা বাতাস চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। হঠাৎ রূপকথা বলল—
— “জানো, আমি সবসময় ভাবতাম ভ্রমণে কারও সাথে হৃদয় মিলে গেলে সেটা সারা জীবনের ভ্রমণ হয়ে যায়।”
তার কথাটা আমি অনেক কাছ থেকে খেয়াল করেছি। কথাটা ছোট হলেও মনে হচ্ছিলো এর বিশালতা অনেক।
আমরা সারাদিন পাহাড়, ঝড়না ঘুরে সন্ধায় বসে ছিলাম। আমি সাথে রূপকথা। আকাশে জুশনা মাখা চাঁদ সাথে জ্বলমলে তারা। আর পাশে দেখা যাচ্ছে জোনাকি পোকার খেলা। আর পাশে প্রিয় মানুষ টা। যদিও অল্প সময়ের পরিচয় কিন্তু সে আমার অনেক আপন হয়ে গেসে। সব কিছু মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি কাজ করে। জানি না কি বলে কথা শুরু করবো।
আমি স্তব্ধ। আর তার সেই কথাটা চিন্তা করতে থাকি ৷ আর মনে হলো এই মেয়েটিই সেই গল্প, যেটা সে খুঁজছিল এতদিন ধরে। তার প্রতিটা কথা আমার কানে বাজে। তার সাথে অনেক সময় আড্ডা দেই,গল্প করি। হঠাৎ সে বলল—
—" জানো, আমি সবসময় ভাবতাম ভ্রমণে কারও সাথে হৃদয় মিলে গেলে সেটা সারা জীবনের ভ্রমণ হয়ে যায়।”
তখন আমি তারে বললাম— রূপকথা
" আমি চাই এই ভ্রমণ শুধু পাহাড়েই শেষ না হোক। তুমি কি আমার সারা জীবনের ভ্রমণসঙ্গী হবে?”
চোখ ভিজে উঠল রূপকথার। কিন্তু তার ঠোঁটের হাসি ছিল ভোরের সূর্যের মতো উজ্জ্বল।
— “হ্যাঁ , আমি তোমার ভ্রমণসঙ্গী হবো, জীবনভর।”
তাদের চারপাশে পাহাড়-আকাশ-কুয়াশা যেন হাততালি দিচ্ছিল। সেই দিন থেকে প্রতিটি ভ্রমণ, প্রতিটি রাস্তাই হয়ে উঠল তাদের প্রেমের গল্পের নতুন অধ্যায়।
📙🖋️ জাহিদুল ইসলাম বিজয়
[ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ]