গল্প: “ছোট্ট মায়ের স্বপ্ন”
একটা ছোট্ট গ্রামে থাকতো রহমান। রহমানের পরিবার খুব গরিব। তার বাবা দিনমজুর, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। টাকার অভাবে রহমানের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল।
কিন্তু রহমানের মা খুব দৃঢ়মনা ছিলেন। তিনি সবসময় বলতেন—
“আমার ছেলে মানুষ হবে, অক্ষর চিনবে, বই পড়বে। আমি যত কষ্টই করি না কেন, ওকে পড়াশোনা করাবো।”
প্রতিদিন ভোরে রহমানের মা অন্যের বাসায় ঝি-এর কাজ করতে যেতেন। যে সামান্য টাকা পেতেন, তা দিয়েই বাড়ি চালাতেন এবং রহমানের স্কুলের ফি ও বই কিনে দিতেন। মাঝে মাঝে টাকার অভাবে দু’দিনের খাবার একদিন খেতে হতো।
রহমান কখনও কখনও বলতো—
“মা, আমি স্কুল ছাড়বো। আমি কাজ করবো, যাতে তোমার কষ্ট কমে।”
কিন্তু মা সবসময় হাসিমুখে উত্তর দিতেন—
“না বাবা, তুমি কাজ করবে না। তুমি পড়বে। তুই পড়াশোনা করে মানুষ হবি, সেটাই আমার স্বপ্ন।”
রহমানও মায়ের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলো। গ্রামের সবাই বলতো—
“এত দারিদ্র্যের মধ্যে এই ছেলে কীভাবে পড়ালেখা চালাবে?”
কিন্তু রহমান হাল ছাড়েনি।
দিন যায়, বছর যায়। কঠোর পরিশ্রম আর মায়ের দোয়ার ফলে রহমান মেধাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেল। পরে সে শহরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করলো।
অনেক বছর পর রহমান চাকরি পেল একটি বড় অফিসে। তখন সে তার গ্রামের ছোট্ট বাড়িতে ফিরে এল মায়ের কাছে।
মাকে জড়িয়ে ধরে রহমান বললো—
“মা, তুমি যদি আমার জন্য কষ্ট না করতে, আমি কোনোদিন আজকের জায়গায় আসতে পারতাম না। আজ আমি যা হয়েছি, সব তোমার জন্য।”
মায়ের চোখে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তিনি শান্ত কণ্ঠে শুধু বললেন—
“আমার সব কষ্ট সার্থক হলো, বাবা।”