গল্প: জুলাই এর দিন গুলি
লেখক: আরাফাত চৌধুরী তন্ময়
তখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থান অত বেশি গড়াই নি,সবে মাত্র স্টুডেন্ট রা কোটা প্রথা বাতিল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা শুরু করেছে, তবে কেন জানি তখনো স্টুডেন্ট দের পক্ষে কোন কথা বলতে পারে নি, হোক তা ফেসবুক এর একটি পোস্ট হোক.কেননা আমি ছাএলীগ করতাম, আমাদের বড় ভাই রা যা বলতো আমাদের ও তা বলতে হতো, বড় ভাই রা যদি বলতো কোটার পক্ষে যারা তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে আমাদের ও তা বলতে হতো, বড় ভাই রা যদি বলতো যাঁরা কোটা প্রথা বাতিল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা হচ্ছে রাজাকার' আমাদের ও বলতে হতো তাদের কে রাজাকার রাজাকার।
কলেজ এ থাকাকালীন কিভাবে রাজনীতি তে ঢুকে পড়েছি তা টের ও পাইনি!
১০ই জুলাই সকালে আমি আর আমার ছোট ভাই মাহমুদ ফেসবুক ইউজ করছিলাম, হঠাৎ নিউজ ফিডে ভেসে উঠলো রক্তাক্ত কিছু ছবি, যেখানে আমার ভাই বোনদের চেহারা রক্তে রঞ্জিত হয়ে লাল হয়ে গিয়েছে,কারো কারো শরীর থেকে রক্তপাত হচ্ছে,এ ছবি গুলো দেখে কোন সুস্থ সবল মানুষ স্থির থাকার কথা নয়! ক্যাপশন দেখলাম কোটা প্রথা বাতিল এর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসী ছাএলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা দা রামদা এবং হট স্টিক দিয়ে হামলা চালিয়েছে নির্দোষ ছাএ ছাত্রী দের উপর, তখন হয়তো চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি বের হয়নি কিন্তু মন থেকে অনেক কষ্ট লেগেছে,যে মানুষ এমন নির্দয় কিভাবে হতে পারে? ওরা তো কোন দোষ করেনি,ওরা তো কারো কোন ক্ষতি করেনি , তাহলে ওদের উপর এত নিষ্ঠুর হামলা কেন? পুলিশ যাঁরা সাধারণ মানুষের জান মাল এর হেফাজতের দায়িত্ব নেওয়ার শপথ নিয়েছে সেই তারাই কিনা আজ ক্ষমতা এবং টাকার লোভে সন্ত্রাসী লীগ কে সুযোগ করে দিয়েছে স্টুডেন্ট দের উপর হামলা করার জন্য! সেদিন এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মনে, তার একটু পর আমার ছোট ভাই মাহমুদ জিজ্ঞেস করলো রাকিব ভাইয়া এই যে আমাদের নিরাপদ ভাই বোনদের উপর সন্ত্রাসী লীগ হামলা চালিয়েছে উপরওয়ালা কি এই জুলুম এর বিচার করবে না, তখন তাকে উওর দেওয়ার মতো আমার কাছে যে বাক্য টি ছিল লিমানুল মুলকুল ইয়াওম লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার!
১৫ই জুলাই ভোরে আমাদের চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের মেসেঞ্জার গ্ৰপ এ হঠাৎ একটি নোটিফিকেশন আসলো, কৌতুহল বসত মেসেজ টি চেক করলাম, মেসেজ টি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দিয়েছিল,যে আজকে বিকেলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সামনে সাধারণ ছাএ ছাত্রী রা কোটা প্রথা বাতিল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে,তাই তাদের কে ছএভঙ করতে তোমরা তাদের কে দা রাম দা হট স্টিক যা দিয়ে পারো তাদের উপর আঘাত করবে, তাদের উপর হামলা করবে, পুলিশ তোমাদের কিছু করবে না উপর থেকে সব সেট করা আছে. আর হ্যাঁ যার পারফরমেন্স যত ভালো হবে সে তত তাড়াতাড়ি জেলা কমিটি তে পদ পাবে. এ কথা টি মাথায় রেখো।
মেসেজ টি পড়ে আমি তাজ্জব বনে গেলাম,যে কিভাবে মানুষের পক্ষে সম্ভব সামান্য ক্ষমতার লোভে সামান্য বিরিয়ানি খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে দৈনিক ২০০ টাকার জন্য ঠান্ডা মাথায় সাধারণ নিষ্পাপ ছাএ ছাত্রী দের উপর হামলা করার জন্য বলতে পারে? আর যারাই নির্দেশ পেয়ে সামান্য পদের জন্য কিছু টাকা পাওয়ার লোভে দিন শেষে এক প্যাকেট বিরিয়ানি এর জন্য ছাএ ছাত্রী দের উপর হামলা করবে তাদের কি এতটুকু ও বিবেক বোধ নেই যে আজকে যদি আমরা হামলা করে আমার মুসলিম ভাই বোনদের রক্তাক্ত করি এর জন্য এই দুনিয়াতে না হোক কিয়ামতের বিভীষিকা দিনে উপরওয়ালা অবশ্যই আমাদের বিচার করবেন.ওরা যে স্টুডেন্ট দের উপর হামলা করবে যদি ওই আন্দোলন কারীদের মধ্যে ওদের ভাই থাকে বোন থাকে তাহলে ওরা কি হামলা করতো তাদের ভাই বোন দের উপর? রক্তাক্ত করতো তাদের ভাই বোন দের? এখন যাঁরা আন্দোলন করছে তারা ও তো কারো ভাই তাঁরা ও তো কারো বোন, একবার ও নিজের বিবেক বাঁধা দেয় না যে আমার ভাই বোন কে রক্তাক্ত দেখতে আমার কেমন লাগতো তখন? অবশ্যই খারাপ লাগত চোখ দিয়ে পানির ফোয়ারা নামতো দু হাত তোলে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করতাম হে মহান প্রভু জালেমদের তুমি এই জমিনে বিচার করো, ঠিক একইভাবে আমি যদি হামলা করি তাহলে কারো ভাই বা কারো বোন আমার জন্য ও তো এই ভাবে বদদোয়া করবে, আমি কি মাজলুম এর চোখের যে কান্না এর দোয়া তা হতে কি রেহাই করতে পারবো শত চেষ্টা করেও?এই সব চিন্তা নিজের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল আর সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম,যে দল জনগণের বিরুদ্ধে জুলুম করে যে দল জনগণের টাকায় চলে তাদের কেই তাদের গুলির নিশানা বানায় এ দল আর করবো না, হয়ত বাঁচার মতো বাঁচব আর না হলে দেশের জন্য নিজের জীবন কে উৎসর্গ করবো, বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ.
১৫ ই জুলাই সন্ধা ৭ টায় ফেসবুক এ একটি পোস্ট দিয়েছি যে আমি মোহাম্মদ রাকিব চাঁদ পাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি এর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম, এখন থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর কোন কার্যক্রম এর সাথে আমার আর কোন সমর্থন বা অংশগ্রহণ থাকবে না , সবাইকে ধন্যবাদ।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!!
পোস্ট দেওয়ার ২০ মিনিট পর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমার নাম্বার এ কল দিয়েছে,কল দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি কি কথোপকথন হতে পারে সামনে আমাদের মাঝে?
কল রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে জোর আওয়াজ এ ভেসে উঠলো একটি কন্ঠ এবং বলতে লাগলো ঐ তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? একে তো আজকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সামনে আজকে আমাদের যে কর্মসূচি ছিল তাতে তো তুমি অংশগ্রহণ করোই নি এখন তুমি আবার ফেসবুক এ পোস্ট দিচ্ছো যে তুমি আর ছাএলীগ এর সাথে নেই, তোমার হয়েছে টা কি? জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বড় ভাই কিন্তু তোমার উপর খুব ক্ষিপ্ত,২০ মিনিট এর মধ্যে পোস্ট টা ডিলিট করে দাও অন্যথায় খুব বিপদে পড়বে। তখন আমি বললাম দেখুন ভাইয়া আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা জেনে শুনেই নিয়েছি,এ সিদ্ধান্ত থেকে আমি আর ফিরত যাবো না, ভালো থাকবেন!
১৬ ই জুলাই, আমাদের চাঁদপুর উপজেলা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন একটি প্রতিবাদ মিছিল এর কর্মসূচি ডেকেছে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নির্দেশে, কর্মসূচি টি লক্ষীপুর বাজার থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে চাঁদপুর থানার দিকে যাবে, সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম এখনি সময় জনতার কাতারে শামিল হওয়ার. প্রতিবাদী মিছিল এর একদম ফন্ট লাইনে ছাএ ছাত্রী দের সাথে আমি ও গলা ছেড়ে বলতে লাগলাম আমার ভাই মরলে কেন জবাব দে জবাব চাই,আবু সাইদ মরল কেন জবাব দে জবাব চাই,এ দিল্লি না ঢাকা ঢাকা ঢাকা,এ আপোষ না সংগ্ৰাম সংগ্ৰাম সংগ্ৰাম. আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার।
মিছিল করতে করতে যখন আমরা প্রায় থানার কাছাকাছি চলে আসলাম তখন দেখলাম সন্ত্রাসী লীগ ছাত্রলীগ হাতে হক স্টিক লাঠি নিয়ে মনে হয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তারা কিভাবে আমাদের মিছিল কে সফল হতে দেওয়া যাবে না এজন্য , পিছনেই পুলিশ দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের সমর্থন এ. আমাদের টিম লিডার মাহফুজ ভাই আগেই ধারণা করেছিলেন এমন কিছু একটা হতে পারে তাই তিনি আগেই News 23 কে কল দিয়ে থানার সামনে থাকতে বললেন. News 23 সহ বেশ কিছু মিডিয়ার লোক থাকার কারণে তখন আর সন্ত্রাসী লীগ এবং পুলিশ আমাদের উপর হামলা করার অতটা চেষ্টা করে নি কেননা তখন সকল মিডিয়া লাইভে ছিলো.
News 23 এর সাংবাদিক মাহফুজ ভাই কে জিজ্ঞেস করলো আজকের এই মিছিল এর কারণ কি? আপনাদের উদ্দেশ্যে কি? মাহফুজ ভাই তখন বললো আপনারা জানেন কোটা প্রথা বাতিল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন শান্তি পূর্ণ ভাবে চলছিল তখন সন্ত্রাসী লীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমাদের ভাই বোনদের উপর হামলা করে তাদের শরীর থেকে রক্ত জড়িয়েছে,যার প্রতাক্ষ সাক্ষী পুরো দেশ , আপনারা আরো দেখেছেন আন্দোলন যখন আরো বেগবান হয়ে যাচ্ছিল তখন রংপুর এ আমাদের ভাই আবু সাইদ কে কিভাবে সরাসরি পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে তা পুরো দেশ দেখেছে,এই কোটা প্রথা বাতিল এবং আমাদের ভাই আবু সাইদ এর হত্যার বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমাদের ভাই বোনদের উপর সন্ত্রাসী হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে,এর জন্য যদি আমাদের জীবন দিতে হয় তাও আমরা প্রস্তুত,এ দেশে দিল্লি বা ওয়াশিংটন এর দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দেশ চলবে না, বরং জনগণ যেভাবে চাইবে তাদের অধিকার যেভাবে তারা চাইবে সরকার কে ঠিক জনগণের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করতে হবে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য এবং প্রত্যাশা!
এদিকে আমি খেয়াল করলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এর চেহারা তেল বেগুন এ আগুন হয়ে রয়েছে, বিশেষ করে আমার প্রতি তার চাহনি জানান দেয় যে সে আমার প্রতি খুব ক্ষোভ তার,এক দিকে তাদের দল ছেড়ে দিলাম আবার তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি দীপ্ত কন্ঠে.
ইশারা দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমাকে তার নিকটে ঢাকলো, আমি একটু সংকোচিত হয়ে গেলাম যে নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ তো রয়েছেই ঢাকার? তখন আমি টিম লিডার মাহফুজ ভাই কে জানালাম তখন তিনি বললেন চলো গিয়ে দেখি.আমি আর মাহফুজ ভাই যখন কাছে গেলাম তখন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমাকে বললো দেখ রাকিব তোকে ভালো জানি বলে এখনো কিছু বলছি না, না হলে তুই যা করতেছত এতক্ষণ এ তোর খবর ছিলো, তাড়াতাড়ি তোর এসব ছুনুপটি নিয়ে চলে যা, আমি তখন বললাম ভাই আমরা যে দাবি গুলো নিয়ে এসেছি তার সম্পুর্ন কর্ম সূচী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এক পা ও লড়বো না.তখন ছাত্রলীগের সভাপতি বললো দেখ শেষ বারের মতো বলছি যদি না যাছ তাহলে তুই সহ ফন্ট লাইনে নেতৃত্ব দেওয়া সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা খাবি, আমি বললাম ভাই আমরা কোন মামলা টামলা কে ভয় করি না এ বলার পর মাহফুজ ভাই গলা ছেড়ে আবার বলতে লাগলো এই দিল্লি না ঢাকা ছাএ জনতা থেকে উচ্চ স্বরে আওয়াজ উঠে আসলো ঢাকা ঢাকা মাহফুজ ভাই আবার বলতে শুরু করলো এই আপোষ না সংগ্ৰাম ছাএ জনতা থেকে উচ্চ স্বরে আওয়াজ ভেসে আসলো সংগ্ৰাম সংগ্ৰাম. মিডিয়ার উপস্থিতিতে সারাদিন আমরা থানার পাশে সুন্দর ভাবে আমাদের কর্মসূচি করলাম, সন্ধ্যার সময় যখন কর্মসূচি শেষ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছি তখন বাড়ি থেকে কিছু টা আগে একটা দোকান এর সামনে দেখলাম ছাএলীগ সভাপতি সহ তার সাথে কিছু পোলাপাইন. আমাকে দেখে ছাত্রলীগের সভাপতি বললো তোকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তুই বুঝিস নাই এখন কিভাবে বুঝবি শুধু তা দেখ এ বলে ছাএলীগ সভাপতি সহ তার পোলাপাইন আমাকে ধরে পাশের দোকানে ঢুকালো দোকান এর শাটার বন্ধ করে হক স্টিক দিয়ে আমাকে মারা শুরু করলো, আমার পায়ে পিঠে বেধারাম মারা শুরু করলো হক স্টিক দিয়ে আর ছাএলীগ সভাপতি বলতে লাগলো এখন বল আপোষ না সংগ্ৰাম কি হলো এখন বলছিস না কেন? তখন আমার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছিল হুশ থেকে যেন ও হুশ নেই, আস্তে আস্তে আমার চোখ গোল হয়ে আসছিল আমি তখন মিট মিট করে হাসছিলাম আর আস্তে আস্তে বলছিলাম লিমানুল মুলকুল ইয়াওম লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার!
আমি প্রায় হুশ হারিয়ে ফেলেছিলাম, যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার বাসার বেডরুম এ, চোখ খুলে দেখলাম আমার সারা শরীর বেনডিজ দিয়ে লাগানো,পাশে বসা ডাক্তার আংকেল আমার ছোট ভাই, এবং বাবা কে দেখলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হু হু করে কাঁদছে, তখন আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি এখানে কিভাবে আসলাম? তখন বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললো যখন তুই বেহুঁশ হয়ে গেলি তখন ঐ সন্ত্রাসী গুলো চলে যায়, এরপর এলাকার লোকজন তোকে দোকানে ঐ অবস্থায় দেখে তাড়াহুড়ো করে বাসায় নিয়ে আসে এবং আমাকে বিস্তারিত বলে, তখন আমি ডাক্তার সাহেব কে নিয়ে আসলাম তোর চিকিৎসার জন্য, তোর কি নিজের জীবনের মায়া নেই? যদি আজ তোর কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি তোর মা তোর ছোট ভাই কিভাবে তোকে ছাড়া বাচতো তুই একবার ও চিন্তা করলি না এসব করার আগে? আমি লক্ষ করলাম কথা গুলো বলতে বলতে বাবার চোখ দিয়ে পানি অঝোর ধারায় পড়ছে, তখন আমি বললাম দেখো বাবা এ দেশ টা আমাদের সবার, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ, কিন্তু যখন আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চলা সরকার আমাদের উপরই গুলি চালাচ্ছে আমাদের উপর যত অত্যাচার নির্যাতন করছে, তুমি দেখো বাবা এই কোটার কারণে যারা দিন রাত এক করে পড়া লেখা করে তাঁরা ভর্তি যুদ্ধে বা চাকরি যুদ্ধে হেরে যায় ঐ সমস্ত কোটা প্রাপ্তিদের কাছে,যখনি এর বিরুদ্ধে ছাএ সমাজ আওয়াজ তুলছিল তখন এই সরকারের সন্ত্রাসী ছাএলীগ ভয়ংকর ধরনের হামলা চালিয়েছে আমার ভাই বোনদের উপর এ, পুলিশ হত্যা করেছে আমার আরেক ভাই আবু সাইদ কে,আজ যখন আমার ভাইয়েরা রাজপথে জনতার কাতারে শামিল হচ্ছে তখন আমি কিভাবে বাসায় বসে থাকতে পারি তুমিই বলো বাবা? লক্ষ করলাম আমার কথা শুনে ডাক্তার আংকেল এর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে এবং চোখ মোছতে মোছতে তিনি আমাকে বলতে লাগলেন oh man কে ভেবেছিল যে জেনারেশন মোবাইল গেম এ আসক্ত তারা নিজেদের দেশ কে এত ভালোবাসবে?
আমাকে কিছু ওষুধ দিয়েছে এবং একদম নিষেধ করেছে আগামী দুই দেড় মাসের মতো যেন বিশ্রাম এ থাকি, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া যেন নিজ রুম থেকে ও যেন না বের হয়,অন্যাথায় আমার রিকোভার হওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে, ডাক্তার আংকেল এর কথা মতো এবং বাবা মায়ের নজরদারিতে ঠিকই বাড়ি থেকে বের হয়নি কিন্তু প্রতিদিন আমার ছোট ভাই এর থেকে আন্দোলন এর খোঁজ খবর নিতাম এবং দুই হাত তুলে দোয়া করতাম হে মহান প্রভু আমার ভাই বোনরা যে উদ্দেশ্য রাজপথে আজ তাদের সেই উদ্দেশ্য তুমি সফল করো প্রভু!
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলেই এলো ৩৬ই জুলাই ৫ আগস্ট, দুপুর এ খবর পেলাম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলো, নিমিষেই যেন ভুলে গেলাম আমি অসুস্থ দীর্ঘ দিন ধরে শুয়ে আছি বেড রুমের বেডে,ভুলেই গিয়েছিলাম আমার উপর হামলা করেছিল সন্ত্রাসী লীগ এর ছেলে পেলেরা, আজকের দিনটা তো ঐতিহাসিক দিন.
আজ যদি রাজপথে জনতার কাতারে শামিল না হতে পারি তাহলে যে আজীবন আফসোস টা রয়েই যাবে,বাবা এবং ছোট ভাই এর সাহায্যে ঘর থেকে বের হয়ে ৫ই আগস্ট বিকেল বেলায় চলে গেলাম চাঁদপুর জেলা শহীদ মিনারে, হাজারো ছাএ জনতার সমগাম. মাইকে জোর গলায় কে যেন বলে উঠল এ দিল্লি না ঢাকা ঢাকা আমি সহ হাজারো কন্ঠে ভেসে উঠলো ঢাকা ঢাকা।