Posts

গল্প

শুকনো গোলাপ - নবম পর্ব

September 29, 2025

Mst Mukta

176
View

শুকনো গোলাপ – নবম পর্ব

ওপাশ থেকে আবীর আনন্দিত স্বরে বললো—
“দোস্ত, আগামীকাল বাড়ি ফিরছি। মেয়ের বাবা খবর পাঠিয়েছেন, তারা আমাদের সাথে মিষ্টিমুখ করতে চান।”

এই কথা শুনে মাহিমের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
তার স্বপ্নের রাণীকে সে কি তবে চিরতরে হারাবে?
এতোদিনের ভালোবাসা, মায়া, কাছে আসা—
তানিশাকে ঘিরে দেখা সমস্ত স্বপ্ন আজ শেষ হয়ে যাবে।

উফ, কি অসহ্য যন্ত্রণা!
প্রেম কেন এভাবে কাঁদায়..?

 কেন আসলো আমার জীবনে প্রেম নামক এই বিরহের অধ্যায়, 

 আগে জানলে কোনো দিনও আমি ভালোবাসতাম না—
 

“কি রে মাহিম… কিছু বলছিস না কেন? কি হলো তোর?”
“আরে ধুর! কি আর হবে আমার… তোর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।”

“ও আচ্ছা। তাহলে দোস্ত, ভালো থাকিস।
আগামীকাল দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। জমিয়ে আড্ডা তোলা রইলো।”

ফোন কেটে মাহিম ঝিম ধরে বসে রইলো।
এক অজানা ঝড় তার সবকিছু উল্টে দিল।
এখন চোখের সামনে প্রেয়সীকে অন্যের বধূ বেসে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

“হে আল্লাহ! তুমি যদি মিলন না-ই দিতে, তবে এই মনে প্রেম দিলে কেন?
আমার মনটা ভেঙে চুরমার করলে কেন?
এতো কষ্ট আমি কি করে সইবো?”

এই অবুঝ মনকে সে কি দিয়ে শান্তনা দেবে?
মাহিমের মন চাইলো চিৎকার করে পৃথিবীকে বলতে—
“হে পৃথিবী, তোমার গর্ভে আজ এক প্রেমিকের মৃত্যু হলো।
সে বেঁচে থেকেও মরে গেছে।
প্রকৃতির নিয়ম এতো নিষ্ঠুর কেন?
তুমি কি পারো না আমার প্রেম আমাকে ফিরিয়ে দিতে?”

সারারাত চোখে ঘুম এলো না।
এতো রাতে তানিশাকে ফোন করাও ঠিক হবে না।
সে একটিমাত্র মেসেজ পাঠালো—
“তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?”

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো উত্তর পেল না।
মন আরও খারাপ হয়ে গেল।
জীবনের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিল—
“এটা কোনো জীবন হলো?”

ঠিক তখনই তানিশার ফোন এলো।
“হ্যালো… কি, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?”
“না, বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম।
বাবা বাড়িতে মেহমান আসতে বলেছেন।
কি করবো জানি না। চলো আমরা পালিয়ে যাই, অনেক দূরে চলে যাবো,
যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না।”

তানিশা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো—
“এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে এত বড় বেঈমানি করতে পারবো না,
আমার জীবন চলে গেলেও না।
আমি ভাবছিলাম আপনাকে ফোন করবো,
কিন্তু এতো রাতে ফোন করা ঠিক হবে কিনা তাই করিনি।
যাক, ভালোই হলো আপনি ফোন করেছেন।

আগামী পরশু আমাদের বাড়িতে মেহমান আসবে।
আমি জানি সেখানে আপনিও থাকবেন।
আপনি যদি আমাকে এক বিন্দুও ভালোবেসে থাকেন,
তাহলে স্বাভাবিক আচরণ করবেন—
এটাই আমি আশা করবো।

আর একটা কথা,
আমাদের দুজনের কোনো আচরণে যেন আমার বাবা-মা
বা আপনার বন্ধু কোনো সন্দেহ না করে।
আমি চাই না আমার কারণে আপনার বন্ধুত্ব ভেঙে যাক।”

মাহিম করুণ কণ্ঠে বললো—
“আর আমার ভালোবাসা, আমার প্রেম—তার কোনো মূল্য নেই?”

ওপাশ থেকে তানিশা চুপ করে গেল।
“আমি ফোন রাখছি…”

ফোন রেখে তানিশা চাপা গলায় কান্নায় ভেঙে পড়লো।
তারও সারারাত ঘুম এলো না।
“কি হবে এখন? কেন মনের মাঝে তার বসতী দিলাম?
এখন হারানোর বেদনায় পুরো হৃদয় রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
আমি কেন ভালোবাসলাম?”

সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তানিশা লক্ষ করলো,
কাঁদতে কাঁদতে তার দু’চোখ ফুলে গেছে।
এখন মা-কে কি বলবে?

এদিকে মাহিমও ভোরে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়লো।
বাড়ির পাশের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভাবছে—
“আমি কি আবীরের বাবাকে গিয়ে সব কিছু বলবো?
উনি কি রাজি হবেন আমার কথায়?
নাকি আবীরকে বলবো?
না, সেটা কি করে সম্ভব?

আবীরকে এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
আমি তো আর আগে থেকে তানিশাকে চিনতাম না।
আবীরের জন্যই আমার সাথে তানিশার দেখা।
তা ছাড়া, আমার বাবা আর আবীরের বাবা ভালো বন্ধু।
এখানে কোনো গণ্ডগোল করা ঠিক হবে না।”

ঠিক তখনই আবীর ফোন করলো—
“হ্যালো মাহিম, আমি রওনা হচ্ছি এখন।
দোয়া করিস। খুব তাড়াতাড়ি তোদের কাছে চলে আসছি।
তুই বাসস্ট্যান্ডে থাকিস।”

মাহিম দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো—
“আচ্ছা। সাবধানে আসিস দোস্ত।
আমি তোর অপেক্ষায় থাকবো…”

Comments

    Please login to post comment. Login