
সময়টা ১৮৯৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর। চীন এর হুনান প্রদেশের এক গ্রাম এ জন্ম মাও সে তুং এর। তার পিতা ছিলেন গ্রাম এর সবচেয়ে ধনী বাক্তি , চাষবাসই ছিল পিতার প্রধান পেশা। গ্রাম এর এক স্কুল থেকে শুরু করেন লেখাপরা। লেখা পরার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ । পাঠ্যসূচির বাইরে যখন যে বই পেতেন তা পড়তেন।তাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করতো চীন এর ইতিহাস সম্পর্কিত বই। তারা ছিল ৪ ভাইবোন। ৩ ভাই এবং ১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়, দুই ভাই নিহত হন কমিউনিস্ট আন্দলনে।
গ্রামের স্কুল এ পাঠ শেষ করে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আসেন হুনানের প্রাদেশি
ক শহরে। ভরতি হন সেখানকার হাই স্কুল এ। নিয়মিত সেখানের লাইব্রেরি তে এসে পড়াশনা করতেন। কপ্যেক্মাশ এর মদ্ধে তিনি লাইব্রেরির অরধেক বই শেষ করে ফেলেন।
১৯১৮ সাল ২৫ বছর বয়সে তিনি আশেন পিকিং শহরে। তিনি প্রথম প্রদেশ ছেরে বের হন। তিনি জীবনের এমন পর্যায় ব্যয় করেন যখন তাকে দুবেলা দুমুঠো খাবার সংগ্রহের জন্য করতে হয়েছে কঠর পরিশ্রম। এক বছর পর ফিরে এলেন তার গ্রামে । স্থানীয় এক প্রাইমারি স্কুল এ শিক্ষকতা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি সমমতাদর্শী কয়েকজন তরুণকে সাথে নিয়ে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন
১৯২১ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠে। এর ৫০ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে মাও একজন।১৯২১ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাও।
১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে জাপানের রাজকীয় সেনাবাহিনী চীন আক্রমণ করে। বেইজিংসহ বেশ কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন কাইশেক। পালিয়ে যান বেইজিং ছেড়ে।
ধীরে ধীরে বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে কমিউনিস্ট পার্টি। দলের একটি বড় সমর্থক শ্রেণি সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ১৯২৩ সালে তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট সান ইয়াত–সেন একটি নীতি হাতে নেন। ওই নীতিতে বলা হয়, দেশ পরিচালনায় কমিউনিস্ট পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে তাঁর দল কুয়োমিনটাং। সে সময় কমিউনিস্ট পার্টি ও কুয়োমিনটং—দুই দলের প্রতিই মাও সে–তুংয়ের সমর্থন ছিল। একপর্যায়ে লেনিনবাদের দিকে ঝুঁকে যান তিনি। বিশ্বাস করতেন, এশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি হলো কৃষকশ্রেণির সমর্থন।
ইতিমধেয় মাও বিয়ে করেন তার এক শিক্ষক কন্না ইয়াং কাই হুই কে। হুই পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এ ছাত্রী থাকা কালিন সময়ে কমিউনিস্ট আন্দলনের সাথে জড়িয়ে জায়। ১৯৩০ সালে আন্দলনে নিহত হন হুই।
১৯২৫ সালের মার্চে সান ইয়াত–সেনের মৃত্যু হয়। তাঁর জায়গায় কুয়োমিনটাং দলের প্রধান হন চিয়াং কাইশেক। তিনি পূর্বসূরি সান ইয়াত–সেনের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল ছিলেন। ১৯২৭ সালে প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাইশেক কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর দলের জোট ভেঙে দেন। সমাজতন্ত্রের অনুসারীদের ওপর শুরু করেন দমন–পীড়ন। অনেককে হত্যা ও বন্দী করা হয়। এ সময় মাও সে–তুং কৃষকদের নিয়ে বিপ্লবী বাহিনী গঠন করেন, যা ‘রেড আর্মি’ নামে পরিচিত। এই বাহিনীকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে মাও সে–তুং ১৯৩০ সালে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম জিয়াংজি অঞ্চলে সোভিয়েত রিপাবলিক অব চায়না সরকার গঠন করেন।
১৯২৭ সালের এপ্রিলে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে মিত্রতা ছিন্ন করেন এবং তাদের প্রতি সহিংস হয়ে ওঠেন। তার নির্দেশে বেইজিংয়ে প্রায় পাঁচ হাজার কমিউনিস্ট সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বন্দী হন আরো অনেকে। চীনের গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত সেখানেই।
মাও তখন চাংশায় কৃষকদের নিয়ে কুওমিনট্যাং বিরোধী সৈন্যদল গড়ে তুলেন। কিন্তু কুওমিনট্যাং মাওয়ের নব্বই শতাংশ কৃষক সেনাকেই হত্যা করে। ১৯২৮ সালে চিয়াং কাই-শেক বেইজিং দখল করেন। বিশ্ববাসীর কাছে কুওমিনট্যাংই চীনের ক্ষমতাসীন দল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এদিকে ১৯৩০ সালের অক্টোবরে চাংশায় একজন স্থানীয় সেনাপতি মাওয়ের স্ত্রী ইয়াং কাইহুই ও তাদের এক পুত্র সন্তানকে আটক করে। ইয়াং কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলতে রাজি না হওয়ায় তাকে আট বছর বয়সী ছেলের সামনেই হত্যা করা হয়। মাও ওই বছরের মে মাসে তার তৃতীয় বিয়ে করেন হে জিঝেনকে।
তিনি পার্বত্য অঞ্চলে তার গেরিলা সৈন্যদের নিয়ে রেড আর্মি প্রতিষ্ঠা করেন, যার সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫ হাজার। তাদের উন্নত মানের অস্ত্র ছিল না, কিন্তু তারা ছিল বেশ উগ্র। মাও সোভিয়েত রিপাবলিক অব চায়না সরকার গঠন করেন এবং ১৯৩১ সালে এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১. গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা:
- ১ অক্টোবর, ১৯৪৯: মাও সে তুং-এর (Mao Zedong) নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চীনের গৃহযুদ্ধে বিজয়ী হয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (People's Republic of China - PRC) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এর মধ্য দিয়ে চীনে প্রায় চার দশক ধরে চলা চীনা প্রজাতন্ত্রের (Republic of China - ROC) সমাপ্তিঘটে। পরাজিত ROC সরকার তাইওয়ানে আশ্রয় নেয়।
- বেইজিং-কে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২. ভারতের সংবিধান গ্রহণ:
- ২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯: ভারতের গণপরিষদ (Constituent Assembly) দেশেরনতুন সংবিধান গ্রহণ ও অনুমোদন করে। যদিও এটি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়েছিল।
৩. শীতল যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
- ন্যাটো (NATO) প্রতিষ্ঠা: এপ্রিল মাসে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলে একটি সামরিক জোট, নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (North Atlantic Treaty Organization - NATO), গঠন করে। এটি ছিল শীতল যুদ্ধের সময় পশ্চিমী ব্লকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
- সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক পরীক্ষা: আগস্ট মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফলভাবে তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা (RDS-1) সম্পন্ন করে, যা ছিল শীতল যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ এবং পারমাণবিক অস্ত্রের দৌড়ে নতুন মাত্রা যোগ করে
· কোরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ (১৯৫০–১৯৫৩): মাও সেতংচীন-মার্কিন সীমান্তে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘের বাহিনীর হুমকি মনে করেউত্তরকোরিয়ার পক্ষনিয়েযুদ্ধেপ্রবেশকরেন।
· প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৩–১৯৫৭): সোভিয়েত ইউনিয়নের মডেলেশিল্পায়নে জোরদেওয়াহয়।
· মহা উল্লম্ফন বা 'গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড' (১৯৫৮–১৯৬২): মাও চীনেরঅর্থনীতিকে কৃষিথেকেদ্রুতশিল্পায়নের দিকেনিয়েযেতেএইচরমপন্থী পদক্ষেপ নেন।এরফলেকৃষিওঅর্থনীতিতে বিশালবিপর্যয় নেমেআসেএবংকোটিকোটিমানুষদুর্ভিক্ষে মারাযায়।
· সাংস্কৃতিক বিপ্লব (Great Proletarian Cultural Revolution) (১৯৬৬–১৯৭৬): মাওকমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেতারক্ষমতাসুসংহতকরতেএবংপুঁজিবাদী বলেমনেহওয়াসকলচিন্তাভাবনা, সংস্কৃতি ওঐতিহ্যকে নির্মূল করারজন্যএইবিশালসামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন শুরুকরেন।এটিচীনেব্যাপকবিশৃঙ্খলা ওধ্বংসের সৃষ্টিকরে।
· মাও সে তং-এর মৃত্যু (১৯৭৬): এই মৃত্যুর মধ্যদিয়েচীনেরপ্রথমযুগেরসমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের সমাপ্তি ঘটে।